PURULIA PROTEST

তিন শিশু সমেত ১৩ মহিলার মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ ২৩ নভেম্বর

জেলা

এই জমি ঘিরেই বিবাদ।

প্রাকৃতিক সম্পদ ও চাষের জমি কেড়ে নিয়ে শিল্পতালুক গড়ার প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন গ্রামবাসীরা। উলটে মিথ্যা দোষারোপ চাপিয়ে দুধের শিশু সমেত ১৩ জন মহিলাকে আটক করে রেখেছে পুলিশ। পুরুলিয়া জেলার আঘরপুর ডুংরির এই ঘটনার পর কয়েকদিন কেটে গেলেও মুক্তি দেওয়া হয়নি তাঁদের। এর বিরুদ্ধে আশেপাশের এলাকার মানুষকে শামিল করে সোচ্চার হয়েছে সিপিআই(এম) সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা। বৃহস্পতিবার এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানালো সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। এদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে আগামী ২৩ নভেম্বর পুরুলিয়ার জেলাশাসকের দপ্তর অভিযানের ডাক দিয়েছে সিপিআই(এম)।
উল্লেখ্য, পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকে আঘরপুর গ্রামে শিল্প তালুকের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল। সেই লক্ষ্যে গত ৪ নভেম্বর জমি নেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রামে উপস্থিত হয় কয়েকজন। তাতে বাধা দেন গ্রামবাসীরা। উলটে নানা অভিযোগ তুলে তাঁদের ১৩ জন মহিলাকে আটক রেখেছে পুলিশ, এখনও জামিন  হয়নি তাঁদের। ওই মহিলাদের সঙ্গে জেল হেপাজতে আটকে রয়েছে ৩টি দুধের শিশুও। 
অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর এই আঘরপুর। পুরুলিয়া জেলার অন্যতম চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট জয়পুর ব্লকের এই আঘোরপুর ডুংরি। বহু চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক এর প্রথম পছন্দের জায়গা এইটি। অনেক ভালো বাংলা সিনেমার শুটিং এর সাক্ষী এই আঘরপুর ডুংরি। বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘উত্তরা’ র পর থেকে প্রথম সিনেমার শুটিং স্পট হিসেবে পরিচিতি পায় এই আঘরপুর ডুংরি। তারপর থেকে বাংলা সিনেমার দিকপাল লোকেদের পদার্পণ ঘটে এই স্পটে। এই আঘরপুর ডুংরিতে শুটিং হয়েছে ‘উত্তরা’, ‘বেদেনী’, ‘দুই পৃথিবী’, ‘কাঁটা তার’, ‘মন্দ মেয়ের উপাখ্যান’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘প্রলয়’, ‘যোদ্ধা’, ‘শূন্য অঙ্ক’, ‘পাসওয়ার্ড’,  ‘বাড়ির কাছে আরশি নগর’ ইত্যাদি বহু বিখ্যাত সিনেমার। এছাড়াও মহাশ্বেতা দেবীর গল্প অবলম্বনে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত ৬টি টেলি ফিল্মের শুটিং করেন এখানে। কিন্তু গত দুবছর ধরে এই আঘরপুর ডুংরি ধ্বংসের পরিকল্পনা করা  হয়েছে। এই আঘরপুরের প্রাকৃতিক পরিবেশকে নষ্ট করে, ঐতিহ্যবাহী বহু ইতিহাসের সাক্ষী এই শুটিং স্পটকে ধ্বংস করে এখানে চলছে নির্মাণ কাজ। শোনা যাচ্ছে, ভাইপো সাংসদের নির্দেশে তাঁর ঘনিষ্ট এক মদ ব্যবসায়ীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এই অঞ্চলের ২০ একর জমি। বাউন্ডারি ওয়াল তুলে, ইন্ড্রাস্টিয়াল হাব তৈরির নামে ডুংরি থেকে পাথর কেটে সম্পূর্ণ অঞ্চলটিকে সমতল ভূমিতে পরিণত করবার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। গ্রামের সমস্ত মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছেন বহুবার। পুলিশি আক্রমণে স্তব্ধ করে দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হচ্ছে। সর্বশেষ ঘটনা এই ৪ নভেম্বরের।
পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের আঘরপুর গ্রামের মানুষ চান না প্রাকৃতিক সম্পদকে নষ্ট করে কোনও উন্নয়ন হোক। তাঁদের দাবি পাহাড় বা ডুংরি কেটে শিল্পের নামে এলাকার পরিবেশকে দূষিত করা যাবে না। তবু রাজ্য সরকার বহুদিন ধরেই সচেষ্ট পুরুলিয়ার জয়পুর ব্লকের দ্রষ্টব্য আঘরপুর ডুংরি কেটে সেখানে হাব তৈরি করতে। এর আগেও এলাকার মানুষ বাধা দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের কাছে দরবার করেছেন। কিন্তু চক্রান্ত থেমে থাকেনি। 
গত বুধবার জয়পুরে প্রতিবাদ মিছিল হয়। পাশাপাশি থানার সামনে অবস্থান বিক্ষোভ সভা হয়েছ। সেখানে বক্তব্য রাখেন, সিআইটিইউ’র পক্ষে প্রদীপ রায়, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষে বিলাসীবালা সহিস, খেতমজুর সমিতির পক্ষে শ্যামল মাহাতো, ছাত্র সংগঠনের পক্ষে সুব্রত মাহাতো সহ অমূল্য রাজোয়ার, রিতবরণ মাহাতো, ছবি মাহাতো, পার্বতী মাহাতো, হলধর মাহাতো প্রমুখ।  
এই অবস্থান বিক্ষোভ থেকে আটকদের মুক্তির দাবিতে আগামী ২৩ নভেম্বর পুরুলিয়ার জেলাশাসকের দপ্তর অভিযান সফল করার আহ্বান জানানো হয় সিপিআই(এম)’র পক্ষ থেকে। অভিযানে নেতৃত্ব দেবেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সহ পার্টিনেতা অমিয় পাত্র, দেবলীনা হেমব্রম প্রমুখ। পুলিশ উলটে যে অভিযোগ তুলেছে গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে, সেই প্রসঙ্গে সিআইটিইউ নেতা প্রদীপ রায় বলেছেন, কোলে দুধের শিশু নিয়ে একজন মা কীভাবে পাথর ছুঁড়তে পারেন তা এলাকার মানুষ বুঝে উঠতে পারছেন না। 
বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভানেত্রী জাহানারা খান এবং সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ বলেন, মমতা সরকারের পুলিশ কতটা অমানবিক যারা দুগ্ধপোষ্য শিশুদেরও আটকে রাখতে পারে! অথচ গোটা রাজ্যে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি বা তোলাবাজি সহ হরেকরকম অভিযোগ থাকে, তখন কিন্তু  পুলিশকে এত তৎপর হতে দেখা যায় না। আর দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে মহিলারা ইট মারছেন, তা কীভাবে সম্ভব! পুলিশের এই অসার যুক্তি একেবারেই খাটে না। জয়পুর থানার পুলিশকে অবিলম্বে শিশু সহ মহিলাদের মুক্তি দিতে হবে। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সমস্ত মানুষকে এই ঘটনার প্রতিবাদে মুখর হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে সমিতির পক্ষ থেকে। সংগঠন এই ঘটনায় আক্রান্ত মহিলাদের পাশে সর্বদা আছে।

Comments :0

Login to leave a comment