সঞ্চারী চট্টোপাধ্যায়: তিরুবনন্তপুরম
জিনিসপত্রের দাম, আকাশছোঁয়া গ্যাসের দাম, রুটি-রুজির টান, ধর্মের নামে রাজনীতি, রেশন দোকান বন্ধ, কমবয়সীদের নেশার প্রবণতার মতে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন মহিলা সম্মেলনের প্রতিনিধিরা।
চিলিতে বামপন্থী রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, ইরানের হিজাব আন্দোলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বিষয়ও নিজেদের বক্তব্যে এনেছেন তাঁরা। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সর্বভারতীয় সম্মেলনের মঞ্চে মহারাষ্ট্র, বিহার, কর্ণাটক, মধ্য প্রদেশ, হরিয়ানা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, উত্তরাখণ্ড, পুদুচেরি সহ দেশের নানা প্রান্তের প্রতিনিধিরা বিজেপি সরকারের জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।
প্রতিনিধিরা বলছেন, কোভিডের সময় পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা করতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। উল্টে তালি বাজাও, থালা বাজাও, মোমবাতি জ্বালাও বলেছে। এভাবে সংক্রমণ আটকানো সম্ভব ছিল? কঠিন সময়ে কেন্দ্র গরিবদের আরও গরিবির দিকে ঠেলে দিয়েছে। কাজ হারিয়েছেন অনেকে। আর কাজ থাকলেও মেলেনি বেতন। অন্যদিকে, দেশকে পুঁজিপতি বন্ধুদের হাতে বেচে দিয়ে তাঁদের ধনী থেকে আরও ধনী করে দেওয়া হয়েছে।
বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, দলিত সহ সামাজিকভাবে পিছিয়ে থাকা অংশের মানুষ উগ্র হিন্দুত্ববাদের দাপটে কীভাবে কোণঠাসা হচ্ছেন। মহিলা আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের আলোচনায় উঠে এসেছে, পণপ্রথা, ধর্ষণ, গার্হস্থ্য হিংসা, কর্মক্ষেত্রে যৌন হেনস্তা বিরোধী আইন খর্ব করে কীভাবে মহিলাদের অধিকার ক্ষুন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। আরএসএস-ভিএইচপি মহিলাদের মধ্যে বিশেষ করে দলিতদের হাতিয়ার করছে। ভোটবাক্স ভরাতে খুচরো সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। হিন্দুত্ববাদী শক্তির সম্পর্কে সচেতনতা তৈরিতে মহিলা কর্মী, নেত্রীরা ঘরে ঘরে পৌঁছাচ্ছেন। মহিলা পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যার কথাও তুলে ধরেন প্রতিনিধিরা। পঁচিশটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ৩৫ জন প্রতিনিধি এই পর্বে আলোচনা করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি মীনা ঘোষ মুখার্জি বলেন, ‘‘শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা দেশেই খাদ্য সুরক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। শিক্ষার বেসরকারিকরণ করা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী দুর্নীতির অভিযোগে জেলবন্দি। রাজ্যজুড়ে চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি চলছে। তার মধ্যেও মহিলারা পথে নেমেছেন। কৃষক আন্দোলন হোক বা সিএএ, এনআরসি— মহিলারা আন্দোলন জারি রেখেছেন। জনসংযোগ বাড়াতে লাগাতার স্বাস্থ্য শিবির, রক্তদান কর্মসূচি হয়েছে। ঘৃণার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বিকল্প সংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে। আরএসএস-বিজেপি—তৃণমূল এই শক্তির বিরুদ্ধেই আন্দোলন চলবে।’’
মহিলা সম্মেলনে সংহতি জানিয়ে খেতমজুর সংগঠনের তরফে বিজয় রাঘবন, এআইকেএসের পক্ষ থেকে বিজু কৃষ্ণান, এসএফআই’র তরফে ময়ূখ বিশ্বাস এদিন বক্তব্য রাখেন। প্রকাশিত হয়েছে পাঁচটি বুকলেট এবং একটি ডায়েরি।
এদিন দ্বিতীয়ার্ধে সাংগঠনিক খসড়া প্রতিবেদন পেশ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মারিয়ম ধাওয়ালে।
(আলোচনা করছেন ত্রিপুরার প্রতিনিধি। ছবি: অচ্যুৎ রায়।)
Comments :0