চা বাগানের জমি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে রাজ্যের তৃণমূল সরকার। সেই লক্ষ্যেই সংশোধন হয়েছে ভূমি সংস্কার আইনে। এই অভিযোগে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিকরা প্রতিবাদে শামিল হলেন। এদিন চা শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠনের জয়েন্ট ফোরামের নেতৃত্বে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তর ঘেরাও হয়। রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে তুলে দেওয়া হয় দাবিপত্র। তরাই, ডুয়ার্স জুড়ে হয়ে প্রতিবাদ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার চা বাগান সহ অন্যান্য ক্ষেত্রের লিজহোল্ড জমিকে ফ্রি হোল্ড করার জন্য আইনি সংশোধন এনেছে। ভূমি সংস্কার আইনের এই সংশোধনীতে উর্ধ্বসীমা তুলে দিয়ে জমি অন্য ব্যবসায় রূপান্তরের সংস্থান রয়েছে। এই আইনের প্রয়োগ শুরু হলে ভূমিহারা হতে হবে কয়েক লক্ষ পরিবারকে। কয়েকশো বছর ধরে বংশানুক্রমে চা বাগানের বাসিন্দা আদিবাসী শ্রমিক সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের শ্রমজীবীদের।
এমনটাই আশঙ্কা এই মুহূর্তে দানা বেঁধেছে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, আলিপুরদুয়ার সহ উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ চা বলয়ে। কিন্তু চা শ্রমিক আন্দোলন আশঙ্কাকে প্রতিবাদ এবং প্রতিবাদকে প্রতিরোধে রূপান্তরিত করার ডাক দিয়েছে।
রাজ্য সরকারের তৈরি এই নতুন আইনের বিরোধিতা করে বিগত কয়েক মাস ধরেই চা বাগান শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথ মঞ্চ ‘জয়েন্ট ফোরাম অফ ট্রেড ইউনিয়নস অফ টি ইন্ড্রাস্ট্রিজ অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর ছাতার তলায় একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন করছিলেন চা শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সেই আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়ল তরাই, ডুয়ার্স সহ সমস্ত চা বলয়ে।
এদিন সকালে কাজে যোগ না দিয়ে বাগান ছেড়ে মিছিল করে বেরিয়ে পড়েন জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগানের প্রায় ৫০০ চা শ্রমিক। গোশালা মোড়, ইন্দিরা কলোনি হয়ে মিছিল পৌছায় জলপাইগুড়ির রাজবাড়ির সামনে। সেখানে মিছিলে যুক্ত হন সদর ব্লকের করলাভ্যালি, ভান্ডিগুড়ি, জয়পুর, শিকারপুর সহ বিভিন্ন নতুন চা বাগানের শ্রমিকরা। প্রায় এক হাজার শ্রমিকের মিছিল এগিয়ে চলে জলপাইগুড়ি জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের দিকে। স্লোগান ওঠে জমির পাট্টা, ন্যূনতম মজুরির।
আন্দোলনকারীরা দ্রুত চা বাগানবাসীদের জমির অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া সহ রাজ্য সরকারের জমি লুটের আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে ফেটে পরেন। পুলিশের ঘেরাটোপ পেরিয়ে চা শ্রমিকরা পৌছে যান দপ্তরের মূল গেটের সামনে। শ্রমিকদের জমায়েত ও লড়াকু মেজাজের সামনে আগেই হাল ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এখানে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন প্রফুল্ল লাকরা, কমলকৃষ্ণ ব্যানার্জি, ফিলসীতা লাকরা, ধ্রুবজ্যোতি গাঙ্গুলি, পীযূষ মিশ্র, রোহিত ওরাও, জহরু ওরাও, শুভাশিস সরকার, অমল রায়, জীবন সরকার প্রমুখ।
চা শ্রমিকদের এক প্রতিনিধি দল জলপাইগুড়ির প্রাক্তন সাংসদ জীতেন দাসের নেতৃত্বে জলপাইগুড়ি জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে রাজ্য সরকারের উদ্দেশ্যে একটি স্মারকলিপি তার হাতে তুলে দেন।
Comments :0