Tiljala protest

শিশুখুনে পুলিশের ভূমিকায় এখনও ফুঁসছেন স্থানীয়রা

রাজ্য

Tiljala protest



তিলজলায় সাত বছরের শিশুকে যৌন নির্যাতন করে খুনের ঘটনায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যেমন স্থানীয় মানুষের ঘৃণা রয়েছে, ঠিক তেমনই তিলজলা থানার পুলিশের চূড়ান্ত নিষ্ক্রিয়তায় সরব হয়েছেন এলাকাবাসী। সকালে নাবালিকা নিখোঁজের খবর দেওয়ার সঙ্গে সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করার পরেও পুলিশ কর্মীরা সকালে ‘নাস্তা’ ছেড়ে যেতে চায়নি। বারংবার অনুরোধ, উপরোধের পর যখন সকালে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়, তখন সামান্য সময়ের দায়সারা তল্লাশি চালিয়ে থানায় ফেরে তিলজলা পুলিশের দল।
অবিলম্বে অভিযুক্তের শাস্তির দাবি করে মঙ্গলবার মিছিল ও পথসভা তিলজলা থানায় ডেপুটেশন দেওয়া হয় সিপিআই(এম) ও সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে। ডেপুটেশনে ছিলেন সিপিআই(এম) কলকাতা জেলা সম্পাদক কল্লোল মজুমদার, পার্টিনেত্রী দীপু দাস, নেপাল সাহা, সুব্রত চক্রবর্তী, গোবিন্দ দাস, তারক দাস ও অমলেন্দু দাস। মিছিলের পর থানার সামনে সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তব্য রাখেন সুব্রত চক্রবর্তী। 


এদিকে, তিলজলার শিশুকে নৃশংসভাবে খুনের ঘটনার বিরুদ্ধে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে একটি মিছিল কলোনির গেট মোড় থেকে অঞ্চল ঘুরে তিলজলা থানাতে ডেপুটেশন দেয়। ডেপুটেশন দিতে যান সমিতি নেত্রী মিনতি ঘোষ, রাজ্য সম্পাদিকা কনীনিকা ঘোষ, রাজ্য নেত্রী দীপু দাস, কলকাতা জেলা সভাপতি পারমিতা সেন, জেলা সম্পাদক সমিতা হর চৌধুরি, সিআইটিইউ নেত্রী রত্না দত্ত, জেলা নেত্রী সন্ধ্যা দাস। বাইরে সভা চলে, সেখানে অঞ্চলের সাধারণ মানুষ এসে তাঁদের ক্ষোভ উগরে দেন। এই সভায় বক্তব্য রাখেন সমিতির রাজ্য কমিটি সদস্য সাহানা ভাদুড়ী, রীতা সেন চৌধুরি, শিখা সমাদ্দার, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মঞ্জু কর, জেলা সদস্য কমলিকা সেনগুপ্ত।  ডেপুটেশন দেওয়ার সময় পুলিশের সাথে প্রতিনিধি দলের যে কথা হয় সেই বক্তব্য  পরে জানান দীপু দাস ও মিনতি ঘোষ। নেত্রীবৃন্দ জানান, এ লড়াই চলবে।


এদিকে, এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজি’কে নোটিস পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্কা কানুনগো সোমবার রাতে টুইট করে জানিয়েছেন, তিলজলার ঘটনায় তাঁরা উদ্বিগ্ন। টুইটে বলা হয়েছে, ‘কলকাতায় সাত বছরের শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় কমিশন উদ্বিগ্ন। ওই রাজ্যের ডিজিপি এবং মুখ্যসচিবের কাছে আমরা নোটিস পাঠাচ্ছি। আমাদের একটি প্রতিনিধি দল এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ জানবেন।’ টুইট প্রকাশের পর মঙ্গলবার সকালে রাজ্য প্রশাসনকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিলজলার ঘটনায় বিস্তারিত তদন্ত রিপোর্ট জমা করতে হবে। ৩১ মার্চ আসতে পারেন কমিশনের প্রতিনিধিরা।


তিলজলায় শিশুমৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যেই মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নির্যাতিতা ওই শিশুকন্যা রবিবার সকালে আবাসনের নিচে আবর্জনা ফেলে যাওয়ার পথেই অভিযুক্ত ধর্ষক অলোক কুমারের হাতে পাকড়াও হয়। জেরায় অভিযুক্ত জানিয়েছে দোতলার ফ্ল্যাটে শিশু কন্যাকে জোর করে নিয়ে যায় প্রতিবেশী যুবক অলোক কুমার।
ফ্ল্যাটের ঘরে ঢুকিয়ে ওই শিশুকন্যার হাত, পা, মুখ বেঁধে তার উপর চালানো হয় যৌন অত্যাচার। প্রাণ বাঁচাতে শিশুটি চিৎকার শুরু করলে তাঁর মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করা হয়। এমনকি বেহুঁশ হওয়ার পরে ওই শিশুর ওপর পাশবিক অত্যাচার চালায় ওই অভিযুক্ত। এরপর রবিবার সন্ধ্যায় ওই ফ্ল্যাট থেকে যখন নাবালিকা ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয় তখনই এলাকার মানুষজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ রবিবার বেলা ১২টা নাগাদ শিশুটির নিখোঁজ হওয়ার খবর পুলিশকে জানালেও তদন্তে গড়িমসি না করে ঠিকমতো তল্লাশি চালালে শিশুকন্যাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা যেত। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশের সেই কথায় ক্ষোভে ঘৃতাহুতি পড়ে। তার জেরে তিলজলা থানায় চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দারা। 


তিলজলাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোমবার দফায় দফায় বন্ডেল গেটে রেল অবরোধ করা হয়। স্থানীয়দের লাগাতার বিক্ষোভকে পুলিশ জোর করে প্রশমন করতে গেলে পুলিশকের গাড়িও ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের ওই নিষ্ক্রিয়তার জন্য ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি কলকাতা পুলিশকে। উলটে বিক্ষোভকারীদের আটক করতে থাকে পুলিশ।
ধৃত অলোক কুমারকে লাগাতার জেরা করে চলেছেন তদন্তকারীরা। জানা গেছে, সে বিহারের বাসিন্দা। স্ত্রীর তিনবার গর্ভপাত হয়ে যাওয়ায় সন্তানলাভের আশায় সে নাকি এক তান্ত্রিকের পরামর্শ নেয়। বিহারের বাসিন্দা ওই তান্ত্রিক ‘কুমারী বলি’র কথা বলে। রামনবমীর আগে তা করার জন্য চাপও দেয়। আর তার জন্যই সে ওই নৃশংস কাজ করেছে বলে বয়ান দিয়েছে ধৃত অলোক কুমার। তদন্তকারীরা এখন সেই তান্ত্রিকের সন্ধান চালাচ্ছে। 


তিলজলায় শিশুকন্যা খুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হলো পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ। নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে আদালতের হস্তক্ষেপে বিশেষ গাইডলাইন তৈরির আবেদন জানিয়েছে বিজ্ঞান মঞ্চ। বীরভূমের আমোদপুরে ‘ডাইনি’ অপবাদে খুনের ঘটনার পরেও বিজ্ঞান মঞ্চের তরফে একটি মামলা করা হয়েছিল। কিন্তু সে মামলার শুনানির দিন ধার্য হয়নি। এবার তিলজলার ঘটনায় ফের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের দ্বারস্থ হন মামলাকারীরা। প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চে এই আবেদন জমা পড়েছে বলেই খবর।  

Comments :0

Login to leave a comment