Patashpur

ধর্ষণ-হত্যা, কাল পটাশপুর থানায় ঘেরাওয়ের ডাক বামফ্রন্টের

রাজ্য

কিশোর নাগ-পটাশপুর 

পূর্ব মেদিনীপুর জেলার পটাশপুরের গ্রামে বছর চল্লিশের এক মহিলাকে ধর্ষণ করে মুখে কীটনাশক ঢেলে হত্যার অভিযোগ উঠলো এক তৃণমূল কর্মীর বিরুদ্ধে। গ্রামবাসী মহিলারা রবিবার সকালে শুকচাঁদ মাইতি নামে ওই অভিযুক্তকে মারধর করেন। পুলিশ শুকচাঁদকে উদ্ধার করে। যাওয়ার সময় পুলিশের সামনে ওই তৃণমূল কর্মী গ্রামবাসীদের হুমকি দেয়, ‘ফিরে এসে দেখে নেবো।’ কিন্তু পরে পুলিশ সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে শুকচাঁদকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। এই মৃত্যু নিয়ে নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। 
শুকচাঁদ বিরুদ্ধে একাধিক অপরাধের অভিযোগ আছে। যার মধ্যে অন্যতম অভিযোগ নিজের প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে খুন করার। এই মামলায় কিছুদিন পুলিশ এবং জেল হেফাজতে কাটিয়েছে সে। সম্প্রতি সে জামিন পেয়ে বাড়িতে ছিল। শুধু পটাশপুরের ওই গ্রামই নয়, সংলগ্ন মথুরা পঞ্চায়েত এলাকা জুড়েও তার দৌরাত্ম, দাপট। রবিবার সকালে বধূর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পরই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামের মানুষ। শুকচাঁদকে বাড়ি থেকে টেনে এনে রাস্তায় ফেলে বেদম মারধর করেন গ্রামের মহিলারা। খবর পেয়ে পটাশপুর থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে দু'টি ঘটনারই তদন্ত শুরু হয়েছে। এদিন মৃতার পরিবারের পক্ষে মহিলাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে পটাশপুর থানায়।
মৃতার পরিবারের অভিযোগ, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার সঙ্গে তার নিজের বৌদির সম্পর্ক আছে। কিছুদিন আগে তাদের দু’জনকে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলেন নিহত মহিলা। সেইদিন থেকে শুকচাঁদ মহিলাকে হুমকি দিতে শুরু করে। কিন্তু ঘটনা কোনভাবে পাঁচ কান হয়ে যায়। এরপর শুকচাঁদ ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার হুমকি দিতে থাকে মহিলাকে। যেহেতু মহিলার স্বামী ও ছেলে কাজের সূত্রে বাইরে থাকেন তারই সুযোগ নিয়ে বাড়িতে এসে ভয় দেখাতো। মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে কয়েকদিন আগে ৫০ হাজার টাকাও নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। 
শুক্রবার রাত দুটোর পর মাকে দেখতে না পেয়ে ছেলে খোঁজাখুঁজি শুরু করে। শনিবার সকালে কিছুটা দূরে মাঠে বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছিল। সেই অবস্থায় তাঁকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে। পরে তমলুকের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রবিবার ভোরে মৃত্যু হয় ওই বধূর। এই ঘটনায় শুধু শুকচাঁদ নয়। আরও কেউ জড়িত আছে বলেও অভিযোগ। এদিন মৃত্যুর খবর গ্রামে আসা মাত্র ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন গ্রামবাসীরা। অভিযুক্তকে বাড়ি থেকে টেনে এনে রাস্তায় ফেলে বাঁশ দিয়ে পেটাতে থাকেন। খবর পেয়ে পটাশপুর থানার পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করতে গেলে গ্রামবাসীদের বাধার মুখে পড়তে হয়। মূলত গ্রামের মহিলারা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান। যদিও কিছু সময়ের পরে মহিলাদের বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অভিযুক্তকে এগরা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু অভিযুক্ত গ্রামবাসী মহিলাদের মারে মারা গেছে বলে মানতে নারাজ। তাঁরা বলেন শুকচাঁদকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাওয়ার সময়ও সে গ্রামবাসীদের হুমকি দিয়েছে – ‘ফিরে এসে তোদের সবকটাকে দেখে ছাড়ব।’ তাঁদের অভিযোগ, হয় সে পুলিশের গাড়িতেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। না হয় তার মৃত্যুর পেছনে আছে কোন গভীর ষড়যন্ত্র। রবিবার বিকালে ডিওয়াইএফআইর প্রতাপদীঘি ও মুগবেড়িয়া লোকাল কমিটির পক্ষে একদল যুব সদস্য মৃতার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে এসেছেন। এই ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার পটাশপুর থানায় ঘেরাও করার ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট।

Comments :0

Login to leave a comment