CAA Protest in Assam

সিএএ বিক্ষোভের ঝাঁজ দেখে আসাম সফর বাতিল শাহের

জাতীয়

বিশ্বজিৎ দাস: গুয়াহাটি 
 

সিএএ’র বিরুদ্ধে মানুষের বিক্ষোভ দেখে আসাম সফর বাতিল করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। আগামী ১৫ মার্চ তাঁর আসামে সরকারি কর্মসূচি ছিল। কিন্তু এর দু’দিন আগে বুধবার শাহ তাঁর আসাম সফর বাতিল করে দেন। শাহের সফর বাতিলের খবর জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এদিকে, আসামে সিএএ-বিরোধী আন্দোলন আরও তীব্র আকার নিয়েছে। বিশেষ করে ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এদিন গুয়াহাটি সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহের কুশপুতুল পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখান প্রতিবাদীরা। 
এদিন শিবসাগরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি হয়। অন্যদিকে, সিএএ’র বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে আসাম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি। দলের হয়ে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা দেবব্রত শইকিয়া ও বরপেটার কংগ্রেস সাংসদ আব্দুল খালেক শীর্ষ আদালতে মামলা করেছেন এদিন। সিএএ বিধি বলবৎ হওয়ার পর এনিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে। গত ১১ মার্চ রাতে বিধি বলবৎ করার পরের দিন ডিওয়াইএফআই এবং মুসলিম লিগ মামলা করে। সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জমা করে দেবব্রত শইকিয়া বলেছেন, তিনটি বিষয়কে সামনে রেখে মামলা করা হয়েছে। প্রথমত, সিএএ সংবিধানের ১৪ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছে। এই ধারায় সমতার অধিকারের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সিএএতে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সিএএ আসাম চুক্তিকে নস্যাৎ করে দিয়েছে। বহু লড়াইয়ের পর ১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তৃতীয়ত, সিএএ-তে অ-মুসলিম ছয় ধর্মীয় সম্প্রদায়কে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। মুসলিমদের সঙ্গে তামিলদেরও এই আইনের বাইরে রাখা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা থেকে যে সকল তামিলরা এদেশে এসেছেন, তাঁদেরও নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্যতা নেই এই আইনে। ফলে সংবিধান বিরোধী, আসাম চুক্তি লঙ্ঘন করা এই আইন বাতিল করতে শীর্ষ আদালতে আবেদন করা হয়েছে বলে জানান শইকিয়া।

এদিকে, সিএএ বলবৎ করে আসামে নাগরিকত্ব নিয়ে যে আরও জটিলতা তৈরি করেছে মোদী সরকার, তা মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মার কথায় স্পষ্ট হয়ে পড়েছে।  সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শর্মা বলেছেন, ‘এনআরসি আইনে আবেদন না করা কেউ সিএএ’র মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেলে আমি মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেব।’ সিএএ’র মাধ্যমে বিজেপি সরকার নাগরিকত্ব প্রদানের বদলে কয়েক লক্ষ মানুষের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার ফন্দি আঁটছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, শর্মার মন্তব্যে এই অভিযোগের সত্যতা আরও দৃঢ় হলো। এনআরসি অর্থাৎ নাগরিক পঞ্জির তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য যাঁরা আবেদন করেছেন, তাঁরা নিজেকে ভারতীয় বলে আবেদনপত্রে দাবি করেছেন। নিজেকে ভারতীয় নাগরিক হিসাবে প্রমাণ করতে আবেদন পত্রের সঙ্গে প্রয়োজনীয় নথি জমাও দিয়েছেন। আবার সিএএ-তে বলা হয়েছে, কেউ এই আইনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেতে চাইলে প্রথমে নিজেকে বিদেশি বলে ঘোষণা করতে হবে। এখন যে ব্যক্তি ইতিমধ্যে নিজেকে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করে এনআরসি আইনে আবেদনপত্র জমা করেছেন, তিনি যদি এবার নিজেকে বিদেশি ঘোষণা করে সিএএ আইনে আবেদন করেন, তাহলে তো এনআরসি’তে জালিয়াতির দায়ে আইনের জালে ফেঁসে তাঁকে জেলে যেতে হবে। জেনে বুঝে এই ঝুঁকি তো কেউ নিতে চাইবেন না। যখনই কেউ সিএএ'র মাধ্যমে নাগরিকত্বের আবেদন করবেন, তখনই তাঁর এনআরসি’র তথ্য খুঁজে বের করবে আসাম সরকার। যখনই দেখবে ওই ব্যক্তি এনআরসি আইনে আবেদন জমা করেছেন, আবার সিএএ আইনেও আবেদন করেছেন, তখনই ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে জালিয়াতির মামলা করে জেলে পুরে দেবে পুলিশ। এটাই চাইছে বিজেপি। 

Comments :0

Login to leave a comment