CPI(M) PANCHAYAT ELECTION NOMINATION

জেদ নিয়েই মনোনয়ন বামফ্রন্ট প্রার্থীদের

রাজ্য জেলা

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP বীরভূমের নলহাটিতে মনোনয়ন জমা দিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থীরা

পুনরাবৃত্তি হলো না। 

ঘটনাস্থল ছিল একই। শাসক তৃণমূলের কৌশলও ছিলো একই। পাঁচ বছর আগে যেভাবে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে তৃণমূলীরা ব্লক অফিসে ঢুকেছিল মনোনয়ন পত্র কেড়ে নেওয়ার জন্য, পাঁচ বছর পরেও সেই একইরকম ভাবে হামলার চেষ্টা হলো রানিনগর-১নম্বর ব্লক অফিসে। 

কৌশল ছিল একই, কিন্ত ফলাফল হলো সম্পূর্ণ বিপরীত। 

পালটা প্রতিরোধের মেজাজ দেখে মুর্শিদাবাদের ইসলামপুরে পিছু হটলো তৃণমূল। বাইক বাহিনী পালালো বাইক ফেলেই। তীব্র প্রতিরোধী মেজাজের মুখে পড়ে  এলাকা ছেড়ে পালালেন তৃণমূল ব্লক সভাপতি। তারপরেও ব্লক প্রশাসনের একাংশের অসহযোগিতা ছিল। 

কিন্তু শাসক তৃণমূলের পালানোর দৃশ্য দেখে আর গড়িমসি করেননি ব্লক অফিসের কর্মচারীরাও। মনোনয়নপত্র তোলার পাশাপাশি জমা নিতে বাধ্য হয় ব্লক প্রশাসন। মনোনয়নপত্র তোলা, ডিসিআর কেটেই দল বেঁধে ফিরে গেলেন সিপিআই(এম) কর্মী, সমর্থকরা। হামলা চালাতে এসে এরপর নিজেরাই ‘আক্রান্ত’ বলে সংবাদমাধ্যমের সামনে অভিযোগ করে এলাকা ছাড়ল তৃণমূলী বাহিনী।


অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরে দাসপুর, ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-১, ডেবরা, সবং, পিংলায় প্রশাসনিক যাবতীয় অসহযোগিতা উড়িয়েই সিংহভাগ আসনে মনোনয়ন পত্র তোলা, ডিসিআর কাটা, মনোনয়ন জমাও দিলেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা। 

শুধু প্রার্থীরা নয়, সংশ্লিষ্ট বুথের মানুষজনও হাজির হয়েছিলেন প্রার্থীদের সঙ্গেই। চড়া রোদ উপেক্ষা করে, আড়াই-তিন ঘন্টা অপেক্ষা করেই জেলায় প্রথম দিন ১০০-র বেশি পঞ্চায়েত স্তরের আসনে মনোনয়ন জমা দিলেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা। গ্রামপঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি আসন মিলিয়ে ৩৭২ জনের ডিসিআর সংগ্রহ করা হয়েছে। সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার জেদ নিয়েই বাম প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দিতে সঙ্গে শামিল হলেন গ্রামবাসীরাও। সেই ভিড়ের মেজাজ দেখে বাধা দেওয়ার সাহস কোথাও দেখাতে পারেনি শাসক তৃণমূল।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই মুর্শিদাবাদের ইসলামপুর থানার গোয়াসে রানিনগর-১ ব্লকে মনোনয়নপত্র তোলা ও জমার কাজে এসেছিলেন সিপিআই(এম), কংগ্রেস নেতা কর্মীরা। শান্তিপূর্ণ ভাবেই চলছিল ডিসিআর নেওয়া, মনোনয়ন জমা দেওয়ার কাজ। তৃণমূলের তরফে এদিন মনোনয়ন জমা দেওয়ার কোনও কর্মসূচিই ছিল না। যদিও ২০১৮’র পঞ্চায়েতে ভোটের কৌশলেই এবার ব্লক অফিসের বাইরে রীতিমত ক্যাম্প করে বসে তৃণমূলী বাহিনী। উদ্দেশ্য, বিরোধীরা যাতে মনোনয়ন তুলতে বা জমা দিতে না পারে তার নজরদারি রাখা। 


তৃণমূলের নেতারা ব্লক অফিসে ঢুকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করলেও সুবিধা করে উঠতে পারেনি সকাল থেকে। তৃণমূলের ক্যাম্পে দেখা যায় এলাকার পরিচিত দুষ্কৃতীদেরও। বাইক মিছিল করে বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাম্পে আসে লুটের পঞ্চায়েতের নেতারা। পুলিশ দর্শকের ভূমিকায়। দুপুর তিনটায় এদিনের মতো মনোনয়ন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার কথা ছিল। 

তার ঠিক দশ মিনিট আগেই ৭ টি মারুতি ভ্যান নিয়ে ব্লক অফিসের সামনে হাজির হন রানিনগর- ১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মোস্তফা সরকার ওরফে নেতাজুল। গাড়িতে ছিল রানিনগর -১, রানিনগর -২, ডোমকল , দৌলতাবাদ থেকে আসা দুষ্কৃতীরা। সকলের হাতেই ছিল লোহার রড, দামাট, লাঠি। ইট, পাটকেলও। ব্লক অফিসের বাইরে থাকা সিপিআই(এম) কর্মীদের দিকে তেড়ে যায় তৃণমূলের নেতারা। ছোঁড়া হয় ইট। হুমকি দেওয়া হয়, এলাকা ছাড়ার। তৃণমূলের রানিনগর ১ ব্লক সভাপতি মোস্তফা সরকার ওরফে নেতাজুলের নেতৃত্বেই হয় হামলা।  


কিন্তু কয়েক সেকেন্ডেই পালটে যায় ছবি।
ফুঁসে ওঠেন সিপিআই(এম) কর্মীরা। এপর কার্যত পালানোর পথ পায়নি তৃণমূল নেতারা। গাড়ি ফেলে গলি দিয়ে দৌড়ে পালান রানিনগর ব্লক সভাপতি নেতাজুল স্বয়ং।  অনেকেই পালান বাইক ফেলেই। যাবার আগে চেয়ার তুলে সিপিআই(এম) কর্মীদের মারধরের চেষ্টাও হয়। এই করতে গিয়ে নিজেদের টেন্টের চেয়ার, টেবিল নিজেরাই ভাঙেন তৃণমূল নেতা কর্মীরা। চম্পট দেন এলাকা ছেড়ে। রানিনগরের বিধায়ক সৌমিক হোসেনের অনুগত বলেই পরিচিত নেতাজুল। রানিনগর  ১ ব্লক জুড়ে চলে ওই তৃণমূল নেতার সন্ত্রাস। 

তবে এদিন মানুষের মেজাজ দেখে কার্যত শঙ্কিত তৃণমূল নেতারা।

এই ঘটনার পর পাহাড়পুর অঞ্চলের মনোনয়ন জমার সময় টালবাহানা করতে দেখা যায় ব্লকের কর্মচারীদের। পালটা চাপ দেওয়ার পর মনোনয়ন জমা নিতে বাধ্য হয় ব্লক প্রশাসন।  রানিনগরের ব্লক তৃণমূল নেতা নারায়ণ চন্দ্র দাসের দাবি, ‘আমাদের নমিনেশন হচ্ছে না। আমরা ক্যাম্প করে বসেছিলাম। সব হয়ে যাওয়ার পর আমাদের উপর হামলা হয়েছে। ওরা প্রস্তুত হয়ে এসেছিল।  সিপিএমের ব্যাগে লাঠি ছিল।’ তবে নমিনেশন দেওয়ার পরিকল্পনা না থাকলেও কেন ক্যাম্প করেছিল তৃণমূল ? উত্তর নেই তৃণমূলের কাছে। 

সিপিআই(এম) ইসলামপুর এরিয়া কমিটির সম্পাদক ইকবাল হক বলেন, ‘মনোয়ননের শেষ মুহূর্তে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি নেতাজুলের নেতৃত্বে আমাদের কর্মীদের উপর হামলা করা হয়। পালটা প্রতিরোধে পিছু হটেছে তৃণমূল। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করুক।’


পশ্চিম মেদিনীপুরে আবার যেভাবে সকাল থেকে গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে নিয়েই মনোনয়ন তোলা ও জমার জন্য ব্লকে ব্লকে হাজির হন বামফ্রন্ট নেতা, কর্মীরা তাতে বাধা দেওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি শাসক তৃণমূল। 

সকাল থেকে দীর্ঘক্ষণ ডিসিআর কাটার কাউন্টার বন্ধ,  মনোনয়নপত্র দেওয়ার টেবিল ফাঁকা এমন দৃশ্য জেলার সমস্ত ব্লক নির্বাচনী দপ্তরে। দুপুরের দিকে দাসপুর-২ব্লক দপ্তরে প্রার্থীরা শেষমেশ জোর করে ভিতরে ঢুকতে বাধ্য হন। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার টেবিলের সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বসে থাকেন। মনোনয়ন জমা দিয়েই ফেরেন তাঁরা। এমন ঘটনা জেলার ঘাটাল,চন্দ্রকোনা ১, ডেবরা, সবং, পিংলা সমস্ত ব্লক দপ্তরে।

মনোনয়নের লাইনে দাঁড়িয়ে চূড়ান্ত হয়রানিও শিকার হলেন প্রার্থীরা। চড়া রোদে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। প্রথম দিনেই দুই থেকে আড়াই ঘন্টা মনোনয়ন প্রক্রিয়ার কোনো কাজই হয়নি। দাসপুর, ডেবরা, পিংলা, সবং, চন্দ্রকোনা ১ এবং ঘাটাল ব্লকে বামপ্রার্থীরা সকাল সকাল মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়ান। 

প্রতিটি স্থানে দপ্তরে চেয়ার টেবিল সাজানো থাকলেও কোনো নির্বাচনী আধিকারিক ছিলেন না। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ব্লক নির্বাচনী প্রশাসনিক কর্তাদের। জোরালো প্রতিবাদের মুখে নির্বাচনী দপ্তরের গেট খুলে দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন। ব্লক নির্বাচনী প্রশাসনিক কর্তারাও বিরক্ত। কোনো ট্রেনিং যেমন করা হয়নি, তেমনি রাজ্য নির্বাচনী দপ্তর থেকেও কোনো নির্দেশিকা না পৌঁছানোর অভিযোগ রয়েছে।


 

Comments :0

Login to leave a comment