রাহুল সিন্হা
ত্রিপুরাকে সন্ত্রাসের রাজত্ব থেকে মুক্তি দিতে, এ রাজ্যে গণতন্ত্র, সংবিধান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে, জনগণের জীবনের সমস্যার নিরসনে ভূমিকা গ্রহণ করতে বিজেপিকে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পরাস্ত করা, বিজেপি যেন পরবর্তী সরকার গড়তে না পারে তা নিশ্চিত করা সিপিআই(এম)'র CPIMপ্রধান লক্ষ্য।
বুধবার আগরতলায় (Agartala)দশরথ দেব (Dashrath Deb)স্মৃতি ভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই লক্ষ্য জানিয়েছেন সিপিআই(এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি জানিয়েছেন, এই লক্ষ্য অর্জনে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্য ও সহযোগিতা চায় সিপিআই(এম)।
ইয়েচুরি বলেন, নির্বাচনে বিজেপি’র পরাজয়ের লক্ষ্যে অ-বিজেপি ভোট একত্রিত করার লক্ষ্যে সব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সম্ভাব্য ব্যাপকতম সমন্বয় ঘটাতে হবে। সেজন্য বিভিন্ন রাজ্যে উপযুক্ত নির্বাচনী রণকৌশল গ্রহণ করতে হবে। যাতে হিন্দুত্ব সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলা করা যায়।
ত্রিপুরায় কারা সেই শক্তি? এই প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি বলেন, তিপ্রা মথা, কংগ্রেস সহ যে শক্তিই গণতন্ত্র ও সংবিধানকে রক্ষায় সন্ত্রাসের রাজত্বের বিরুদ্ধে লড়তে এবং জনগণের জীবনের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনে নামতে তৈরি, তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনায় যেতে পারি।
সাংবাদিক সম্মেলনে সীতারাম ইয়েচুরির(Sitaram Yechury) সঙ্গে ছিলেন সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী(Jitendra Cowdhury)। চৌধুরী জানিয়েছেন যে মঙ্গলবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে অংশ নেন পার্টি পলিট ব্যুরোর সদস্য প্রকাশ কারাত এবং মানিক সরকারও। এই সভায় আগামী বিধানসভা নির্বাচনে আমাদের লক্ষ্য এবং নির্বাচনী রণকৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর আগে ২৭ ডিসেম্বর পাঁচ বামপন্থী দল এবং কংগ্রেস যৌথভাবে অন্ধকারের রাজত্ব ঘোচাতে সোচ্চার হওয়ার আবেদন জানিয়েছিল রাজ্যবাসীকে।
ইয়েচুরি বলেন, গত ৫ বছরের অভিজ্ঞতা হলো, গত নির্বাচনের আগে বিজেপি যত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তার একটিও কার্যকর হয়নি। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো, ২০২২-এর রেকর্ড অনুযায়ী ত্রিপুরায় অপরাধের হার সবচেয়ে খারাপ । বলা হয়েছিল নেশামুক্ত ত্রিপুরার কথা, আর মুখ্যমন্ত্রী নিজে এখন বলছেন, ত্রিপুরা এখন ড্রাগ করিডরের অংশ। সপ্তম বেতন কমিশন চালু হয়নি। কোনো প্রতিশ্রুতিই পূরণ হয়নি। এখন বিজেপি আবার সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তীব্র করার চেষ্টা শুরু করেছে।
ইয়েচুরি বলেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)রাজ্যে এসে রামমন্দিরের কথা বললেন, পুরনো কথা। কিন্তু আইন শৃঙ্খলার অবনতি, গণতন্ত্র ধ্বংস, সন্ত্রাসের রাজত্ব নিয়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলেন না। বরং সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের প্রয়াসই করে গেলেন।
ইয়েচুরি বলেন, তাই যদি ত্রিপুরাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হয়, এখানে আইন এবং সংবিধানের শাসন কার্যকর করতে হয়, তবে বিজেপিকে হারাতেই হবে, জনগণের রায়ে তারা যাতে আগামী নির্বাচনের পর সরকার গড়তে না পারে, তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এটাই সিপিআই(এম)'র প্রধান লক্ষ্য। আমাদের কাজ, বিজেপিকে পরাজিত করতে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির সহযোগিতা ও ঐক্য নিশ্চিত করা।
এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়েচুরি স্পষ্ট করে দেন যে বামফ্রন্টের বাইরে কোনো দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হতে পারে। তবে বামফ্রন্টের বাইরের কোনো দল নিয়ে রাজনৈতিক জোট বা ফ্রন্ট গঠন করবে না সিপিআই(এম)।
তিপ্রা মথা সম্পর্কে ইয়েচুরি বলেন, এরা সংবিধানের চৌহদ্দির মধ্যেই সমস্যার সমাধানের কথা বলছেন, আমরাও সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছি যা এখনও সংসদে রয়েছে। আমরাও চাই সংবিধানের মধ্যে থেকে জনজাতিদের সর্বাধিক স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যবস্থা করা হোক। তিনি বলেন, বিজেপি সরকার গড়তেই পারত না যদি আইপিএফটি'র সঙ্গে এদের জোট না হতো। কিন্তু ক্ষমতায় এসে আদিবাসীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বিজেপি।
সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী বলেন, আশা করব অন্য দলগুলিও পরিস্থিতিকে বুঝবেন। আলোচনা শুরু হবে এবং একটি গ্রহণযোগ্য বোঝাপড়ায় পৌঁছতে পারবো আমরা।
Comments :0