Dengue

ফের বাড়ল ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা

কলকাতা

 রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ল গত ২৪ ঘণ্টায়। স্বাস্থ্য দপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী শনিবার আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩৭৮। রবিবার আক্রান্ত বেড়ে ৪১৬ তে দাঁড়িয়েছে। সামান্য কিছুটা কমে গিয়েও কেন ফের ডেঙ্গু সংক্রমণ বাড়ছে তা নিয়ে ধন্দ্বে রয়েছেন বিশেষজ্ঞরাও। এর আগে তাঁরা বলেছিলেন নভেম্বরের মাঝামাঝি কিছুটা কমতে পারে ডেঙ্গু সংক্রমণ। কিন্তু নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেও একইভাবে ডেঙ্গু ছড়ানোয় এবার স্পষ্টভাবেই পৌরসভার ব্যর্থতার দিকে আঙুল তুলেছেন রাজ্যবাসী। পৌরসভার যাবতীয় প্রচার যে অন্তঃসারশূন্য তার প্রমাণ হাতে হাতেই মিলছে বলে বক্তব্য মানুষের। রাজ্যে ইতোমধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজারের কাছাকাছি বলে জানান দিচ্ছে বিভিন্ন বেসরকারি তথ্য। ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যাও ৯০ ছাড়িয়ে ১০০-র দিকে এগোচ্ছে। গত ৫ বছরের যাবতীয় পরিসংখ্যানকে অনেক পেছনে ফেলেছে এবছরের ডেঙ্গু। এর শেষ কবে তার কোনও উত্তর নেই প্রশাসনের কাছে, গভীর চিন্তিত চিকিৎসকরাও।
রাজ্যে বহু মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু সঠিক সময়ে এবং অনেক সরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে পরিকাঠামোর অভাবে টেস্ট করতে পারছেন না সরকারি ল্যাবে। বেসরকারি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত খরচ দিয়ে ডেঙ্গু টেস্ট করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। চিকিৎসকরা বলছেন, এর ফলে যদি সেই সব মানুষের ডেঙ্গু হয়ে থাকে তবে তা মশাবাহিত হয়ে আরও ছড়িয়ে পড়তেই পারে। এভাবেই ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে কিন্তু তার তথ্য বা পরিসংখ্যান পৌঁছাচ্ছে না সরকারি খাতায়। একইভাবে প্রবল জ্বরে ভুগে বা জ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গুর কারণে কোনও অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে কেউ মারা গেলে তাঁর ডেথ সার্টিফিকেটে অনেক সময়ে ডেঙ্গু লেখা থাকছে না। প্রশাসনের চাপে পড়েই তা লেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এক্ষেত্রেও ডেঙ্গু মৃত্যু নথিভুক্ত হচ্ছে না সরকারের তালিকায়। বাস্তবে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর কোনও লিখিত তথ্য রাজ্য সরকার চলতি বছরে এপর্যন্ত প্রকাশই করেনি। তবে তথ্য বলছে, কলকাতা, হাওড়া, হুগলী, উত্তর ২৪ পরগনা, মুর্শিদাবাদ, শিলিগুড়ি ও তার সাথে নদীয়ার বৃহৎ অংশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যু ব্যাপক আকার নিয়েছে।


তথ্য বলছে চলতি বছরে মূলত গত ৪ মাস ধরেই ডেঙ্গুর অত্যধিক বাড়বাড়ন্ত হয়েছে রাজ্যে। ৪ মাস আগেও স্বাস্থ্য দপ্তর যেসব নির্দেশিকা দিয়েছিল, সম্প্রতি সেই সব নির্দেশিকাই আবার দিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। আগেও বলা হয়েছিল প্রতিটি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রে ফিভার ক্লিনিক খোলা হবে। ৪ মাস পরেও দেখা গেল ফিভার ক্লিনিক তেমনভাবে চালুই হয়নি। তাহলে কি কাজ হল এতদিন, কেন একই নির্দেশিকা ফের প্রকাশ করতে হলো তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। বলা হয়েছিল আরও বেশি করে বেড তৈরি রাখতে হবে হাসপাতালগুলিতে, পর্যাপ্ত জোগান রাখতে হবে রক্তের। কার্যক্ষেত্রে বেড এবং প্লেটেলেট দুটিরই হাহাকার শুরু হয়েছে ৪ মাস পরেও। এলাকায় এলাকায় জমা জঞ্জাল ও জমে থাকা জল দ্রুত সাফাইয়ের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু স্বাস্থ্য দপ্তর যতই উদ্বেগ প্রকাশ করুক, উদাসীনই থেকেছে ভয়াবহভাবে ডেঙ্গু কবলিত পৌরসভাগুলি। 


কলকাতা পৌরসভার মেয়র বারেবারেই সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব আছে বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন এলাকা নাকি নিয়মিতই পরিষ্কার চলছে, মানুষই সচেতন নয়। শিলিগুড়ির মহকুমা পরিষদ এবং তৃণমূল পরিচালিত অন্যান্য পৌরসভাগুলিও একই প্রচার করেছে। সংবাদমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। রাজ্যের বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, নিয়মিত এলাকা সাফাই যে হচ্ছে তা এলাকার বাসিন্দারা সকালে উঠে দরজা জানলা দিয়ে তাকিয়ে খুঁজে বার করতে পারছেন না। মাঝে মাঝে দেখা যাচ্ছে রাস্তা ঝাঁট দিয়ে সেই সব ময়লা কাছাকাছি কোনও ফাঁকা জমিতে তুলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ফাঁকা জমিগুলিতে জঞ্জালের পরিমাণ আরও বাড়ছে। সেখানে ডাবের খোলা থেকে ভাঙা পাত্র সবই পড়ে আছে, জলও জমে আছে তার মধ্যে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের অলিগলিতে নর্দমাগুলি থিকথিকে পাঁকে ভর্তি। বিশেষ করে থানাগুলির চারপাশে, গ্যারেজের আশেপাশে টায়ারের অংশ বিশেষে জল জমে থাকছে দিনের পর দিন। জনস্বাস্থ্য বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, এরই ফলে এই নভেম্বরের শেষ দিকেও ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্ত কমছে না। প্রশাসন কার্যত হাত তুলে নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী শীত পড়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন, আরও ঠান্ডা পড়লে ডেঙ্গু কমবে বলে তাঁর বক্তব্য। প্রশাসনের এই দিশাহীনতাই ভয়ের কারণ জিইয়ে রেখেছে বলে চিকিৎসকদের অভিমত।
 

Comments :0

Login to leave a comment