ডেঙ্গুর মারাত্মক সংক্রমণে হাল ছেড়েছে দিশাহারা তৃণমূল প্রশাসন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করে এলাকায় এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে নেমেছে সিপিআই(এম)। আর এই দুই বিপরীত চিত্র সরাসরি প্রত্যক্ষ করছেন রাজ্যবাসী। কলকাতার মেয়র বলছেন, এরাজ্য বিষুবরেখার কাছাকাছি হওয়ায় ডেঙ্গু বাড়ছে। সাধারণ মানুষের গাফিলতি রয়েছে ডেঙ্গু বৃদ্ধিতে। ডেঙ্গু মহামারীর আকার নেয়নি। অন্যদিকে ঘরে ঘরে ডেঙ্গু ছড়ানোয় পৌরসভার উদাসীনতা ও গাফিলতিকে দায়ী করে প্রাক্তন মেয়রের নেতৃত্বে শিলিগুড়িতে পথে নেমেছে সিপিআই(এম) সহ বামফ্রন্ট। শিলিগুড়ির ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে ডেঙ্গু নিয়ে সচেতনতার প্রসার ও এলাকায় প্রতিষেধক ছড়ানোর কাজ।
শুধু শিলিগুড়িতেই নয়, রাজ্যের ডেঙ্গু কবলিত বিভিন্ন এলাকায় সাধারণ মানুষের স্বার্থে এগিয়ে এসেছেন বাম ছাত্র-যুব ও কর্মীরাও। বিভিন্ন বেসরকারি পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫ হাজার ছুঁইছুঁই। ওদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গ— ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংখ্যাও প্রায় ৬৫ বলে জানা যাচ্ছে। চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মহামারী হতে আর বিশেষ বাকি নেই। শুরু হয়েছে মৃত্যু মিছিল। গত ৬ বছরের সমস্ত পরিসংখ্যানকে ছাড়িয়ে গেছে এবছরের পরিস্থিতি। বিশেষত জেলাগুলিতে সরকারি হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রের পরিকাঠামো বলতে প্রায় কিছুই নেই। তার ওপর সময়মতো প্রতিরোধের ব্যবস্থা তো নেওয়া হয়ইনি উপরন্তু প্রশাসনের উদাসীনতা আর গাফিলতি ধরা পড়েছে প্রতিপদে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে পুরোপুরি ব্যর্থ পৌরবোর্ড, এই অভিযোগ তুলে শনিবার শিলিগুড়িতে বাম কাউন্সিলররা পথে নেমেছেন। সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে গ্রহণ করা হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। শিলিগুড়ি সহ রাজ্যের ডেঙ্গু পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও আতঙ্কজনক জায়গায় পৌঁছেছে, তাও কোনও হেলদোল নেই বর্তমান পৌর বোর্ডের— বলছেন শিলিগুড়ির মানুষই। শনিবার এক সচেনতামূলক কর্মসূচিতে এই পৌরবোর্ডের বিরুদ্ধে গাফিলতির বহু অভিযোগ তোলেন শিলিগুড়ি পৌরনিগমের বাম কাউন্সিলররা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী এদিন থেকে লাগাতার নানান কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন তাঁরা। এদিন ২৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে শুরু হয়েছে এলাকা পর্যবেক্ষণ ও এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ। সেইসঙ্গে মশা মারার প্রতিষেধক ছড়ানোর কাজ চলেছে।
এভাবে শিলিগুড়ি পৌর এলাকায় ৪৭টি ওয়ার্ডে জনসংযোগ ও সচেতনতা গড়ে তোলা হবে, যতটা সম্ভব প্রতিষেধক ছড়ানো হবে এলাকায়। একথাই জানিয়েছেন শিলিগুড়ির বাম কাউন্সিলররা। এদিন দেশবন্ধু পাড়ার ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কার্যালয়ের সামনে থেকে এক সচেনতামূলক মিছিলে ওয়ার্ডবাসীরাও পা মেলান, মিছিল থেকে বিলি করা হয় লিফলেট। সিপিআই(এম) কাউন্সিলর মুন্সী নুরুল ইসলাম, জয় চক্রবর্তী প্রমুখ বলেন, শিলিগুড়িতে ঘরে ঘরে জ্বর, হাসপাতালে অত্যধিক রোগীর ভিড় দেখেও নিশ্চুপ মেয়র ও তাঁর পারিষদরা। সহজে দেখা মিলছে না তাঁদের। ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা পর্যন্ত নেই। বাম কাউন্সিলরদের বক্তব্য, ইতোমধ্যে শিলিগুড়িতে অন্তত ২০ জনের মৃত্যূ ঘটেছে ডেঙ্গুতে। রক্তের প্লেটলেট নিয়ে সক্রিয় হয়েছে দালালচক্র। এর থেকে বাঁচতে সাধারণ মানুষ এখন আস্থা রাখছেন বামেদের ওপরেই।
ওদিকে কলকাতায় হু হু করে বাড়ছে ডেঙ্গু। পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর উদ্বেগজনক। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে কলকাতায় চলতি মরশুমের ৪২তম সপ্তাহে ৫৫০০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত। এবার ধীরে ধীরে মৃত্যুও বাড়ছে কলকাতায়। সরকার কোনো মৃত্যুর তথ্য না দিলেও বিভিন্ন বেসরকারি সূত্র বলছে কলকাতা, বিধাননগর, বরানগর মিলিয়ে ইতোমধ্যে অন্তত ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ওদিকে হাওড়া-বালি এলাকায় মৃত্যু সংখ্যা ৭ বলে জানা যাচ্ছে, হুগলীতেও ৭ জনের প্রাণ কেড়েছে ডেঙ্গু। এছাড়া মৃত্যুর খবর মিলেছে মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়া থেকেও। সরকারি তথ্যে কলকাতায় ১২, ১০, ৯, ১১, ১৩, ১, ৮, নম্বর বরোতে অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত। এরমধ্যে ১০ নম্বর বরোতে গত ৪২তম সপ্তাহ থেকে ৪৩ তম সপ্তাহে ১৭২ জন ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। এই সময়ের মধ্যে ১২ নম্বর বরোতে পজিটিভ কেস বেড়েছে ১৬৩টি। ডেঙ্গু অতিমাত্রায় বেড়েছে কলকাতার ১০৬, ১০১, ১০৯, ১০৭, ১১৫, ১১২, ৯৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তে নিজেদের গাফিলতি ঢাকতে সাধারণ মানুষকেই বারেবারে দায়ী করছেন কলকাতার মেয়র।
Comments :0