FRENCH LEGISLATIVE ELECTION

ফ্রান্সে টানটান দ্বিতীয় দফা, উগ্র দক্ষিণপন্থাকে চ্যালেঞ্জ বামশক্তির

আন্তর্জাতিক

france election bengali news

ফ্রান্সে চলছে দ্বিতীয় দফার সংসদীয় নির্বাচন। ফ্রান্সের সংসদের ৫৭৭ আসনের জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন ৫ কোটির কিছু কম ফরাসি নাগরিক। নির্বাচনের পরেই শুরু হবে ভোট গণনা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করবে ফ্রান্স। 

ফরাসি রাষ্ট্রপতি ইম্যানুয়েল ম্যাক্রঁ আগেই ঘোষণা করেছেন, ২০২৭ সাল, অর্থাৎ নিজের মেয়াদ শেষের আগে তিনি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে ইস্তফা দেবেন না। তাই এই নির্বাচনের ফল যাই হোক, রাষ্ট্রপতির বদল দেখবে না ফ্রান্স। তবে মেয়াদ শেষের আগে এই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত তাঁরই।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, একাধিক কারণে এই নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জুনে ফ্রান্সে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে বড় জয় পায় উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রঁর মধ্যপন্থী সরকার দেশের আর্থিক সঙ্কটের মোকাবিলা ও শ্রমজীবী অংশের আয় বৃদ্ধি করতে না পারায় সমাজে হতাশা তৈরি হয়। সেই হতাশাকে অভিবাসী বিরোধী মনোভাবের দিকে চালিত করেছে মারিন লি পেনের নেতৃত্বাধীন উগ্র দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র‌্যালি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচনে শোচনীয় ফলাফলের পরে অকাল নির্বাচনের ডাক দেন ম্যাক্রঁ। সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়। 

নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোটের লাইনে দাঁড়ান রেকর্ড ৬৬ শতাংশ মানুষ। ১৯৯৭ সালের পর এই প্রথম এত বিপুল আগ্রহ নিয়ে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিল ফ্রান্স। নির্বাচনে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা ৩৩ শতাংশ ভোট পায়। দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে বামপন্থী, মধ্য বামপন্থী ও পরিবেশ আন্দোলনকারীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। এই জোট ২৮ শতাংশ ভোট পায়। ম্যাঁক্রর মধ্যপন্থী জোট থমকে যায় ২২ শতাংশে। 

ত্রিমুখী লড়াইয়ে অনুমান, দেশের ৫৭৭ আসনের মধ্যে ৩০০ আসনে ভোট কাটাকাটির ফলে জিততে চলেছে উগ্র দক্ষিণপন্থীরা। এই অবস্থায় মধ্যপন্থী ও বামপন্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ২০০ আসনে ভোট কাটাকাটি আটকাতে দক্ষিণপন্থীদের বিরুদ্ধে একটি মাত্র প্রার্থী থাকবে। এর ফলে ত্রিমুখী কিংবা চতুর্মুখী লড়াই কমে আসবে ১০৯টি আসনে। 

এই কৌশলের ফলে উগ্র-দক্ষিণপন্থীদের আসন কমতে চলেছে বলেই উঠে এসেছে জনমত সমীক্ষায়। সমীক্ষাগুলি বামপন্থী জোটকে গড়ে ১৮০-২০০টি আসন দিয়েছে। মধ্যপন্থীরা পেতে পারে ১৩০-১৬০টি আসন। উগ্র দক্ষিণীপন্থী শক্তির প্রাপ্তি হতে পারে ১৭০-২১০টি আসন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, এই কৌশলের ফলে মারিন লি পেনের দলের প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকে যেতে চলেছে। সেক্ষেত্রে অতি দক্ষিণ পন্থীকে প্রধান চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে বামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন জোট। 

তবে লি পেনের পাশাপাশি রাজনৈতিক কৃচ্ছসাধন করতে হবে ম্যাঁক্র’কেও। বামপন্থী জোট ম্যাক্রঁর বাজার কেন্দ্রীক মুক্ত অর্থনীতির তীব্র সমালোচক। তাই সংসদে জোট সরকার চালাতে গেলে নিজের অবস্থানে কিছু বদল আনতে হবে ফরাসি রাষ্ট্রপতিকে। একইসঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধে আমেরিকার শরিক হয়ে ইউক্রেনকে ঢালাও অস্ত্র সহায়তারও বিরোধিতা বারবারই করেছেন বামপন্থীরা। তাঁরা শান্তি ফেরানোর পক্ষে। তাই এই জোট টিকিয়ে রাখতে গেলে ইউক্রেন প্রশ্নেও অবস্থান বদলাতে হবে ফরাসি রাষ্ট্রপতিকে। 

অপরদিকে প্রতিপক্ষ শক্তিগুলির কৌশলী অবস্থানে সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন লি পেন। তিনি বলেছেন, ‘‘এই জোট মানুষের প্রত্যাশাকে অস্বীকার করছে। আমরা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই একমাত্র ফ্রান্স বাঁচতে পারবে। নইলে সব শেষ হয়ে যাবে।’’

বিশ্লেষকদের অভিমত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্যারিস দখল করেছিল নাৎসি বাহিনী। দীর্ঘদিন সেখানে পুতুল সরকার চালায় হিটলারের সেনা। তারপর থেকে কখনও উগ্র-দক্ষিণপন্থীদের নির্বাচিত করেননি ফ্রান্সের মানুষ। কিন্তু বল্গাহীন মুক্ত অর্থনীতির কুফল সমাজে প্রবেশ করায় সহজেই নিজেদের বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছে এই শক্তি। বহুজাতিক কর্পোরেটদের মুনাফা নিশ্চিত করতে দীর্ঘদিন আয় বাড়েনি ফ্রান্সের শ্রমজীবী মানুষের। দক্ষিণপন্থীরা সেই ক্ষোভকে চালতি করেছে শরনার্থী ও অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। প্রচার চালানো হয়েছে, ‘বাইরে’ থেকে আসা মানুষরা ফরাসি শ্রমজীবীদের কাজ ও বেতন খেয়ে নিচ্ছে। 

এখন দেখার পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উগ্র-দক্ষিণকে মোকাবিলার ফর্মুলা খুঁজে বের করতে পারেন কিনা ফ্রান্সের মধ্য ও বামপন্থীরা। 

Comments :0

Login to leave a comment