১৯৯৩ সালে শেষবার হিমাচলের সিমলা (শহর) (Shimla) বিধানসভা আসনটিতে জয়লাভ করেছিল সিপিআই(এম)।(CPIM) তারপর কেটেছে প্রায় তিন দশক। সেই বিধানসভা কেন্দ্রেই এবার বামফ্রন্ট সমর্থিত সিপিআই(এম) প্রার্থী টিকেন্দ্র সিং পানওয়ার। সিমলা পৌরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়রও তিনি। গণশক্তির প্রশ্নে পানোয়ার জানিয়েছেন জনতার রুজি-রুটির প্রশ্নকে সামনে রেখেই লড়ছে পার্টি।
পানোয়ার বলেছেন, ‘‘আপেল চাষ করেন এমন বহু মানুষ গুরুতর সঙ্কটে। তার জন্য দায়ী কেন্দ্র এবং রাজ্যের বিজেপি সরকার। পুরনো পেনশন যোজনার দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন রাজ্যের সরকারি কর্মচারীরা। বেকারির সঙ্কট ভয়াবহ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তার ওপর সেনাবাহিনীতে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের প্রকল্প ‘অগ্নিপথ’ চালু করেছে দিল্লির সরকার। রাজ্যের বহু যুবক সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।’’ তিনি জানিয়েছেন, এমন জনবিরোধী নীতির বিরোধিতাকেই প্রচারে হাতিয়ার করেছে সিপিআই(এম)।
মোট ১১ আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই(এম)। বিধানসভায় মোট আসন ৬৮। ভোট ১২ নভেম্বর। ফল ঘোষণা ৮ ডিসেম্বর, গুজরাটের সঙ্গে। রাজ্যে পাঁচ বছর অন্তর সরকারে এসেছে বিজেপি এবং কংগ্রেস।
হিমাচল প্রদেশ বিধানসভায় পাঁচ বছর আগেও সিপিআই(এম) নেতা রাকেশ সিংহা জয়ী হয়েছিলেন থিওগে কেন্দ্রে। গণআন্দোলন এবং শ্রেণি আন্দোলনে রাজ্যে সিপিআই(এম)’র প্রভাব অস্বীকার করেন না কেউই। সিমলা বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত শক্তিশালী বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই।
টিকেন্দর সিং পানোয়ার বলছেন, ‘‘হিমাচল প্রদেশের অর্থনীতি মুলত চাষ আবাদ নির্ভরশীল। দেশের মধ্যে আপেল চাষে শীর্ষে হিমাচল। খাদ্য সংরক্ষণ শিল্পও এ রাজ্যের মানুষের আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস। এই আপেল চাষকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে চাইছে রাজ্যের বিজেপি সরকার। আপেল চাষের সব উপকরণে অত্যাধিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে সম্প্রতি। সঙ্গে রয়েছে পেট্রোল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিরও প্রভাব রয়েছে। ফলে আপেল চাষিদের একটা বড় অংশ মার খাচ্ছেন।’’
কেন্দ্রের নীতিরও প্রভাব পড়ছে আপেলচাষের সঙ্গে জুড়ে থাকা জীবিকায়। আপেল রপ্তানিতে ব্যবহৃত কার্টুনের ওপর ১৮ শতাংশ জিএসটি বসিয়েছে বিজেপি। ফলে আপেল চাষিরা যথেষ্ট ক্ষুব্ধ বিজেপির বিরুদ্ধে। আন্দোলনেও নামেন আপেলচাষিরা। সিপিআই(এম) সব সময়ই কৃষকদের সঙ্গে ছিল। আপেলচাষিদের এই আন্দোলনেও অংশ নিয়েছে সিপিআই(এম)। পানোয়ার বলছেন, ‘‘বামপন্থী বিধায়কদের হিমাচল প্রদেশ থেকে নির্বাচিত হয়ে আসা প্রয়োজন। বামপন্থীরাই জীবিকার প্রশ্নে টানা লড়াই করে চলেছেন।’’
খাদ্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রেও রয়েছে একই সমস্যা। আগে বাড়িতে মহিলারা খাদ্য সংরক্ষণের কাজ করে উপার্জন করতেন। স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে সংরক্ষণের কাজ হত। এখন ছোট উদ্যোগ বন্ধ করে দিতে চাইছে হিমাচল প্রদেশ সরকার। কর্পোরেটদের হাতে তুলে দিচ্ছে খাদ্য সংরক্ষণ ক্ষেত্রকে।
নতুন পেনশন ব্যবস্থা নিয়ে পানোয়ার বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে নতুন পেনশন প্রকল্প প্রথম আটকে দিয়েছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। কিন্তু যে যে রাজ্য নতুন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে সেই সব রাজ্যে সরকারি কর্মীদের অবস্থা মোটেই ভালো নেই। হিমাচল প্রদেশের প্রায় ১.৫ লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মীকে নতুন পেনশন যোজনাভুক্ত করা হয়েছে। সারা জীবন কাজ করে যাওয়ার পর তাঁরা ভবিষ্যতে পাবে কুী পাবেন তা অনিশ্চিত’’।
পানোয়ার বলেছেন, ‘‘বামপন্থীরা জয়ী হলে বিপজ্জনক এমন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই শক্তিশালী হবে। আরও বেশি মানুষকে শামিল করা হবে।’’
হিমাচলে যুবকদের একটা বড় অংশ ভারতীয় সেনায় যুক্ত হন। কিন্তু কেন্দ্রের আনা ঠিকা সেনা নিয়োগ যোজনা অগ্নিপথ নিয়ে যুবকরা যথেষ্টই উদ্বিগ্ন। পানোয়ার বলেন, ‘‘চার বছর চাকরি করার পর যুবকরা কী করবে, কোথায় কাজ পাবে? এমনকি পেনশনও থাকবে না। অগ্নিপথ কেন্দ্রের একটি বিভ্রান্তিকর যোজনা। এভাবে দেশের যুবকদের ঠকাচ্ছে বিজেপি।’’
পানোয়ার জানিয়েছেন, কেবল অগ্নিপথই বেকারত্বের একমাত্র কারণ নয়। কেন্দ্র এবং রাজ্যের নীতিতে মানুষের হাতে রোজগার নেই। ফলে চাহিদা নেই। উৎপাদন, পরিষেবার বিকাশও আটকে গিয়েছে। ফলে কাজ নেই, রোজগার নেই। বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে। কর্পোরেটের তাঁবেদারি করে চলা অর্থনীতিকে বামপন্থীরা প্রচারে তুলে ধরছেন।
পানোয়ার বলেন, ‘‘ঠিকা ও পরিযায়ী শ্রমিকদের বেতন ৮ হাজার থেকে ২৬ হাজার টাকা করতে হবে। সেই দাবিতেও মুখর থাকছে সিপিআই(এম)।’’
Comments :0