France Elections

ফ্রান্সে বামপন্থীদের বিপুল জয়

আন্তর্জাতিক

পশ্চিম ইউরোপের অতিদক্ষিণপন্থার বিজয়রথের চাকা বসে গেল ফ্রান্সে। ফরাসী সংসদে সবচেয়ে বড় শক্তি হিসাবে উঠে এল বামপন্থীদের জোট নিউ পপুলার ফ্রন্ট। তারা পেয়েছে ১৮২টি আসন৷ প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর মধ্য ডানপন্থী জোট এনসেম্বল দ্বিতীয় (১৬২ আসন)। উগ্র ডানপন্থী দল ন্যাশনাল র‌্যালির (আরএন) বিজয় সুনিশ্চিত বলে মনে করছিলেন অনেকে, ১৪৩টি আসন পেয়ে তাদের অবস্থান তৃতীয়। ফ্রান্সে ৫৭৭-আসনের সংসদে ১৮২ আসনে জয়ী বামপন্থী নয়া পপুলার ফ্রন্ট। নব্য ফ্যাসিবাদীদের মোকাবিলায় নির্বাচনের দিন ঘোষণার চারদিনের মধ্যে ফ্রান্সের কমিউনিস্ট পার্টি (পিসিএফ), বামপন্থী জ্যাঁ-লুক মেলেশোঁর ফ্রান্স আনবোড, মধ্য-বাম সোশ্যালিস্ট পার্টি এবং পরিবেশবাদী গ্রিন-রা মিলে গঠন করে এই ফ্রন্ট। উপস্থিত করে নয়া উদারবাদের বিকল্প কর্মসূচী।
ফ্রান্সে বামপন্থীদের দুর্দান্ত সাফল্যের প্রধান কাণ্ডারি জাঁ লুক মেলেশঁ। তাঁর দল 'লা ফ্রান্স ইন্সোমিসে' (LFI) নিউ পপুলার ফ্রন্টের প্রধান শরিক। এছাড়াও এই ফ্রন্টে আছে সোস্যালিস্ট পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি (PCF) এবং ইকোলজিস্ট কোয়ালিশন৷ মেলেশঁকে মেইনস্ট্রিম মিডিয়া 'অতি বামপন্থী' তকমা দেয়। অনেকে তাঁকে বলেন 'ফ্রান্সের জেরেমি করবিন'। নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পর মেলেশঁ জানিয়েছেন, নতুন সরকারের উচিত যত দ্রুত সম্ভব প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া। বলা বাহুল্য, দুর্দান্ত সাফল্যের পর ব্রিটেন থেকে করবিন অভিনন্দন জানিয়েছেন ফরাসী বামপন্থীদের।
কিন্তু কোনো দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের কাছাকাছি না আসায় ফ্রান্স রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হতে পারে বলে আশঙ্কা। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর জোট পেয়েছে ১৬৮টি আসন। মেরিন লে পেন ও জর্ডান বারডেলের কট্টর ডানপন্থী ন্যাশনাল র‌্যালি পেয়েছে ১৪৩টি সংসদীয় আসন। পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে মোট ৫৭৭টি আসন রয়েছে। ফলে কোনো রাজনৈতিক শক্তিই এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত ভোট পায়নি। সম্ভাব্য জোট সম্পর্কেও এখনও পর্যন্ত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ এক্ষেত্রে ম্যাক্রঁর সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ হয় দাঁড়াতে পারে। 
ফরাসি ও ইউরোপীয় গণমাধ্যম বলছে, পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নতুন মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যর্থতার কারণে ফ্রান্স দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক সংকটে পড়তে পারে। অন্যদিকে মধ্য দক্ষিণপন্থী ম্যাক্রঁর অভিমত পপুলার ফ্রন্টের বাকি শরিকদের সাথে আলোচনায় গেলেও মেলেশঁর সাথে কোনোরকম বোঝাপড়ায় তারা যেতে নারাজ এবং আগামী দিনে গোটা ফ্রান্সে ‘‘বামপন্থী বিশৃঙ্খলা বাড়রে পারে’’ বলে ‘উষ্মা’ প্রকাশ করেছেন ম্যাক্রঁ।  
তবে বামপন্থী জোট সবচেয়ে বড় শক্তি হিসাবে উঠে এসেছে ঠিকই, তবে ফ্রান্সে খেলা এখনও বাকি। ত্রিশঙ্কু পার্লামেন্ট। রাস্তায় রাস্তায় অতিদক্ষিণপন্থীদের সঙ্গে বামপন্থীদের সংঘর্ষ। তার মাঝেই বিজয় উৎসবে উড়ছে প্যালেস্টাইনের পতাকা, কুর্দ বিপ্লবীদের নিশান। শোনা যাচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল। এই সবকিছুর মাঝে ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে ৭২ বছরের যুবক মেলেশঁর ছায়া। প্রধানমন্ত্রী যেই হোন, পপুলার ফ্রন্টের বাকি শরিকরা যাই করুন, মেলেশঁ থাকবেন রাজপথে, থাকবেন সংসদে- ফ্রান্সের নিপীড়িত জনতাকে নেতৃত্ব দেবেন আগামী সংগ্রামে।

Comments :0

Login to leave a comment