‘‘আপনারা বাড়ি ফিরতে চান?’’
‘‘ বাড়ি তো ফিরতে চাই, কিন্তু কার ভরসায় ফিরবো? এত সেনা, এত পুলিশ, তাও তো আমাদের গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হল। উগ্রপন্থীরা খতম না হওয়া অবধি আমরা ফেরার ভরসা পাচ্ছি না।’’
‘‘-কেন আপনারা ভারত সরকারকে বিশ্বাস করেন না?’’
‘‘- না! আমরা না ভারত সরকার, না বীরেন সিং সরকার, কাউকে বিশ্বাস করি না।’’
বৃহস্পতিবার বামপন্থী সাংসদদের কাছে পেয়ে এমন ভাবেই নিজেদের ক্ষোভ উগড়ে দিলেন মণিপুরের মানুষ। গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো মণিপুরের মানুষ।
বৃহস্পতিবার বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য এবং জন বৃটাসের নেতৃত্বে বামপন্থী সাংসদদের এক প্রতিনিধি দল গোষ্ঠী সংঘর্ষে বিদ্ধস্ত মণিপুরে যান। তাঁরা ইম্ফলের বীরাহরি কলেজ ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলেন।
গোষ্ঠী সংঘর্ষে ভুক্তভুগী মানুষের কথাতেই স্পষ্ট, উত্তেজনা থামানোর কোনও উদ্যোগই নেয়নি মণিপুরের বিজেপি সরকার। একইরকম নীরব ভূমিকা পালন করেছে কেন্দ্রের সরকারও।
ত্রাণ শিবির থেকে বেরিয়ে ইম্ফলের আর্চ বিশপ ডমিনিক লুমিনোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বামপন্থী সাংসদরা। সেখানেও উঠে আসে রাজ্যে শান্তি ফেরানোর আর্তি।
প্রসঙ্গত, আদিবাসী সংরক্ষণের দাবিকে ঘিরে সংঘর্ষের শুরু। মেইতেই বনাম কুকি বিবাদকে রাজ্যে লাগাতার চাগিয়েছে বিজেপি। বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বিজেপি’র এই বিভেদনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। তার ভয়ঙ্কর পরিণতিকে দেখে শিক্ষা নিতে বলেছেন।
গোষ্ঠী সংঘর্ষে জ্বলছে মণিপুর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ মণিপুর সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মণিপুর পরিদর্শনে যাওয়ার পরে হিংসা আরও বড় আকার নেয়।
বিরোধীদের অভিযোগ, ২০১৭’র মণিপুর বিধানসভা নির্বাচনে জিততে কুকি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সমঝোতা করেন আসামের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং বিজেপির সর্বভারতীয় নেতা রাম মাধব। সম্প্রতি কুকি সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী ‘কুকি ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট’র শীর্ষ নেতা এসএস হাওকিপ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে চিঠি দিয়ে এই কথা জানিয়েছেন। আবার মেইতেইদের লাগাতার কুকিদের বিরুদ্ধে প্রচারে ব্যবহার করেছে বিজেপি। ঘৃণা এবং বিদ্বেষ ছড়িয়ে ভোটে জেতার এই রাজনীতিকে ধিক্কার জানিয়েছেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য।
ইতিমধ্যেই হিমন্ত বিশ্বশর্মার অপসারণ এবং গ্রেপ্তারির দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে অসমে। ১৫ জুন গুয়াহাটিতে বিশ্বশর্মার গ্রেপ্তারির দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ করে সিপিআই(এম), সিপিআই, কংগ্রেস, সিপিআই(এম-এল) লিবারেশন সহ বিরোধীরা।
ছবি: পিভি সুজিত
Comments :0