অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) নতুন সংরক্ষণ বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত মামলায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়ালো কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী এবং বিচারপতি রাজশেখর মান্থার ডিভিসন বেঞ্চ এই স্থগিতাদেশ আগস্ট মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে মামলাটি ফের ৫ আগস্ট শুনানির জন্য রেখেছে। এদিকে এদিনই রাজ্য সরকারের তরফে এই স্থগিতাদেশের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি বি আর গাভাই এবং বিচারপতি বিনোদ চন্দ্রচূড়ণ মামলাটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি (ওবিসি) সংরক্ষণ সংক্রান্ত রাজ্যের তৈরি করা নতুন বিজ্ঞপ্তির ওপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেদিন হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বলবৎ থাকবে। বৃহস্পতিবার সেই স্থগিতাদেশের মেয়াদ বাড়িয়েছে হাইকোর্ট।
এর আগে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে প্রায় ১২ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হয়েছিল। এই নির্দেশের বিরুদ্ধেও সুপ্রিম কোর্টে মামলা রয়েছে। সেই মামলা বিচারাধীন। সুপ্রিম কোর্টে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাজ্য সরকার একটি নতুন সংরক্ষণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল। ১৪০টি সম্প্রদায়কে নিয়ে রাজ্যের নতুন ওবিসি বিজ্ঞপ্তি জারি করে সরকার। এই ১৪০টি সম্প্রদায়কে চিহ্নিত করে যে নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে তার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা রাজ্য সরকারের আইনজীবীকে বলেছিলেন, কেন ২০১২ সালের আইনে সংশোধনী আনলেন না? আপনারা ২০১২ সালের ওবিসি আইন অনুযায়ী অর্ধেক কাজ করেছেন। তারপর আবার ১৯৯৩ সালের আইনে ফেরত গিয়েছেন। এটা কেন?
মামলাকারীর আইনজীবী বিক্রম ব্যানার্জি এবং সুদীপ্ত দাশগুপ্ত আদালতকে জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার নতুন সংরক্ষণ তালিকা নিয়ে বিধানসভায় আইনানুগভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। কোনও বিল আসেনি। যেভাবে নতুন তালিকা তৈরি করা হয়েছে তা বেআইনি। জনসমীক্ষার কাজও ঠিকভাবে হয়নি। যে সংরক্ষণ তালিকা কলকাতা হাইকোর্ট আগেই বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই তালিকাতেই বেআইনিভাবে সম্প্রদায়গত কিছু এদিক ওদিক করা হয়েছে। যা সম্পূর্ণভাবে বেআইনি কাজ। কিছু সম্প্রদায়ের ক্যাটাগরিতে বদল আনা হয়েছে। এই নতুন তালিকা কোনও সমীক্ষার ভিত্তিতে হয়নি। ২০২৪ সালে ২২মে কলকাতা হাইকোর্ট সংরক্ষণ বাতিলের যে নির্দেশ দিয়েছিল সেই তালিকা থেকেই কিছু সম্প্রদায়কে বাদ দিয়ে দেখানো হয়েছে ১৪০টি সম্প্রদায়কে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর জন্য ২০১২ সালের আইনের কোনও সংশোধন হয়নি। এবং ১৯৯৩ সালের আইনের কোনও সংশোধন বা সংযোজন হয়নি। রাজ্য সরকার আদালতকে ভুলপথে চালিত করার চেষ্টা করছে।
আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত আদালতে বলেছেন, ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে হাইকোর্টের নির্দেশ ছিল, সামাজিক,আর্থিক এবং পেশাগতভাবে ভিন্নতা রয়েছে এমন রাজ্যের সব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সমীক্ষার কাজ করতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার জেলাভিত্তিক কয়েকটি পরিবারের মধ্যে সমীক্ষার কাজ সীমাবদ্ধ রেখেই নতুন সংরক্ষণ বিজ্ঞপ্তি তৈরি করেছে। পুরানো ওবিসি সংরক্ষণ তালিকার সঙ্গে বর্তমান তালিকার সামান্য কিছু ফারাক তৈরি করা হয়েছে।
বিচারপতি রাজশেখর মান্থা রাজ্যের এজি কিশোর দত্তকে বলেছেন, আপনারা সমীক্ষার জন্য শীর্ষ আদালতকে কিছু কথা বলেছেন? বিজ্ঞপ্তি সংক্রান্ত বিষয়ে শীর্ষ আদালতকে কিছু জানিয়েছেন। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তী রাজ্যকে বলেন, আপনারা এখন ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে পদক্ষেপ করছেন কেন? কেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করছেন না। আপনারা কিছু না করলে আদালতও কিছু করবে না। আপনারা এমন কিছু কাজ করছেন তার জন্য মামলা হচ্ছে। সেই মামলা শুনতে হচ্ছে। বিধানসভায় পেশ করার আগেই আপনারা বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিলেন। আপনাদের উচিত ছিল শীর্ষ আদালতের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করা। মামলার শুনানির সময় বিচারপতি মান্থা রাজ্যের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেছেন, সংরক্ষণ নিয়ে প্রায় ১৫ বছর সুবিধা দিয়ে এসেছেন, কিন্তু সংরক্ষণের আইন অনুযায়ী ১০ বছর পর সমীক্ষার করার কথা। সেই সমীক্ষা কোথায় হয়েছে?
গত বছর ২২মে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যে প্রায় ১২লক্ষ ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল। হাইকোর্টের নির্দেশের ফলে নতুন করে কোনও সুযোগ সুবিধা পেতে রাজ্য সরকারের দেওয়া শংসাপত্র ব্যবহার বন্ধ করা হয়েছিল। হাইকোর্ট বলেছিল, ২০১০ সালের পর দেওয়া সমস্ত ওবিসি শংসাপত্র বাতিল হবে। সেদিনও কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজশেখর মান্থা এবং বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর ডিভিসন বেঞ্চ বলেছিল, এই সময়ের মধ্যে ওবিসি শংসাপত্র নিয়ে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন বা অন্যান্য সুযোগ পেয়েছেন তা বজায় থাকবে। ২০১০ সালের পরের বছর রাজ্যে সরকার গঠন করে তৃণমূল। আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছে, ২০১২ সালে কোনও পদ্ধতি না মেনেই সংরক্ষণের আইন প্রণয়ন করেছে রাজ্যের আইনসভা। আদালত বলেছে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে তা ১৯৯৩ সালের ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ওয়েলফেয়ার কমিশনের আইনের পরিপন্থী।
OBC Bengal
ওবিসি বিজ্ঞপ্তি স্থগিতাদেশ মেয়াদ বাড়ালো হাইকোর্ট

×
Comments :0