Education

পরিকল্পিত ধ্বংস কার্য চলছে শিক্ষার

সম্পাদকীয় বিভাগ

কোনও একটি জাতিকে শেষ করার সবচাইতে সহজ উপায় হলো শিক্ষা ব্যবস্থাটাকেই ধ্বংস করে ফেলা। ঠিক সেই রাস্তাতেই হাঁটছে তৃণমূল সরকার। একটি জাতির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলার ফলাফল সুদূরপ্রসারী এবং মারাত্মক হতে পারে। মানুষ জ্ঞান, দক্ষতা এবং যোগ্যতা অর্জন থেকে বঞ্চিত হয়, যা তাদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত উন্নতির জন্য অপরিহার্য। এর ফলে তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা, উপার্জনের ক্ষমতা এবং সমাজে অর্থপূর্ণ অবদান রাখার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়।
শিক্ষার অভাবে ব্যক্তি শোষণ, দারিদ্র্য এবং সামাজিক বৈষম্যের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। মানুষ নিজেদের অধিকার সম্পর্কে কম সচেতন থাকে। শিক্ষাই যুক্তি নির্ভর চিন্তাভাবনা গড়ে তোলে। এর অভাবে আত্মবিশ্বাস, আত্মসম্মান গড়ে ওঠে না। সামাজিক সংহতি, সহনশীলতা এবং পারস্পরিক বোঝাপড়াকে তৈরি করে শিক্ষা। এর ধ্বংস বিভেদকে আরও বাড়িয়ে তোলে, যা ভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত ও অস্থিরতা বাড়ায়। শিক্ষার অভাব এবং অপরাধপ্রবণতা সহ অন্যান্য সামাজিক সমস্যার মধ্যে সম্পর্ক সুগভীর। শিক্ষা সচেতন ও সক্রিয় নাগরিক সমাজ গঠনের জন্য অপরিহার্য, যারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সরকার রাষ্ট্রের কাছে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হতে সচেতন করতে সাহায্য করে। শিক্ষার অভাবে দুর্নীতি এবং সামাজিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার ও রাষ্ট্র শিক্ষাহীন সমাজকে কুসংস্কারের অন্ধকারে নিমজ্জিত রেখে নিজেদের অন্যায় অপরাধ চালিয়ে যেতে পারে, যা বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে। শিক্ষাহীন জনগোষ্ঠী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলো বুঝতে কম সক্ষম হয়। মূল কথা, শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ ও সুরক্ষিত জাতি গঠনের ভিত্তি ভেঙে দেওয়ার সামিল। এর পরিণতি দীর্ঘস্থায়ী হয়, যা কেবল বর্তমান প্রজন্ম নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও প্রভাবিত করে।

এর কোনটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী জানেন না! সব জানেন, আর জানেন বলেই পরিকল্পনা করেই সমগ্র সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকেই তুলে দেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্রে সামিল হয়েছেন। এই কারনেই পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার দুর্নীতিকে বহুমাত্রিক এবং গভীর সমস্যার চেহারা দেওয়া হয়েছে অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবেই বিগত ১৪ বছর ধরে। দুর্নীতিকে শিক্ষার প্রতিটি স্তরে বিস্তৃত করা হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিকে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার একটা শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। ক্ষমতায় এসেই সমস্ত স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সব কমিটিগুলিকে ভেঙে দিয়ে, নিজের দলের আরাবুল মার্কা অশিক্ষিতদের মাথায় বসিয়েছিলেন, দুর্নীতি যুক্ত ব্যবস্থাপনা তৈরির পরিকল্পনা মাথায় রেখেই। অসংখ্য শূন্যপদ রেখে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত। প্রকৃত মেধাবী এবং যোগ্য প্রার্থীদের বঞ্চিত করে অযোগ্যদের দিয়ে প্রাথমিক থেকে কলেজ স্তর পর্যন্ত পড়ানোর একটাই উদ্দেশ্য, সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর মানুষের বিশ্বাস আস্থাকে শেষ করে দেওয়া। অযোগ্য শিক্ষকের নিয়োগের ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার মান কমছে। ফলে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা উঠে যাচ্ছে। এছাড়াও বহু মামলা বিচারাধীন থাকায় সরকারকে এই শিক্ষকদের বেতন বাবদ অর্থ দিতে হচ্ছে না। সেই টাকায় খেলা-মেলা-উৎসবে দেদার সরকারি অর্থের হরির লুট চলছে। আবার একই ঢিলে দুই পাখি মারছেন তিনি। সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে মানুষের যত আস্থা উঠে যাবে, তত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে অভিভাবকরা ছূটতে বাধ্য হবেন, প্রয়োজনে ঘটিবাটি বেচে; উচ্চ শিক্ষার জন্য জমিবাড়ি বন্ধক রেখে। সেখান চলছে দেদার লুট। অভিভাবকদের পকেট নিংড়ে নিচ্ছে শিক্ষা ব্যবসায়ীরা। তাদের খরচের ওপর কোনও লাগাম পড়াতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ ওগুলোই তৃণমুলের সোনার ডিম পাড়া হাঁস, নির্বাচন সহ দলের প্রয়োজনে অর্থের যোগানদার। এমনকি অনেক নেতা-মন্ত্রী-এমপি-এমএলএ-আমলাদের ব্যক্তিগত পকেটেও এদের টাকা ঢুকছে। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে শিক্ষাহীন করে রাখার লক্ষ্যেই সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিকল্পিত ভাবেই ধ্বংস করছে তৃণমূল সরকার, যার মাথা মমতা বন্দোপাধ্যায় স্বয়ং।

Comments :0

Login to leave a comment