বাম ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করা ও বামপন্থী রাজনীতির প্রভাব আরও বৃদ্ধির জন্যই প্রয়োজন পার্টির নিজস্ব শক্তির বিকাশ। এটাই সময়ের দাবি। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই দেশব্যাপী গড়ে তুলতে হবে সংগ্রাম। মাদুরাইতে সিপিআই(এম)-র’ ২৪ তম কংগ্রেস থেকে উঠে এসেছে এই আহ্বান। হিন্দুত্ববাদী নয়া-ফ্যাসিবাদকে মোকাবিলা ও প্রতিহত করতে মতাদর্শগত লড়াইকে যেমন আরও জোরদার করতে হবে তার সাথে নয়া-উদারবাদের বিপদ থেকে জনগণের বেঁচে থাকার লড়াইকে একইসঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাবার কর্তব্যও স্থির করেছে এই পার্টি কংগ্রেস। বামপন্থীরাই একমাত্র রাজনৈতিক শক্তি যারা নিরবচ্ছিন্নভাবে এই লড়াই চালিয়েও যাচ্ছে। দেশ রক্ষার এই পথেই থাকার শপথ নিয়েছে সিপিআই(এম)। কারণ বামপন্থীরাই সেই শক্তি যারা দেশ এবং সাধারণের স্বার্থ রক্ষার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিতে পারে।
কমিউনিস্ট পার্টির জন্য কংগ্রেসই হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বোচ্চ মঞ্চ। ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের আয়োজন করা হয়েছেছিল মাদুরাই শহরে। যে শহর সুপ্রাচীন তামিল সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ, যে শহর সেই অতীত ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে রেখেছে শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রাম ও কমিউনিস্ট আন্দোলনের ইতিহাসকেও। পার্টি কংগ্রেসের প্রধান বিষয়ই পার্টির রাজনৈতিক-রণকৌশলগত দিশা ঠিক করা। যা আগামীদিনে পার্টির রাজনৈতিক কর্মসূচির রোড ম্যাপ সুনিশ্চিত করতে পারে। গোটা দেশ থেকে সিপিআই(এম)’র প্রতিনিধিরা এসেছিলেন নিজেদের রাজ্যের বৈচিত্র এবং লড়াই সংগ্রামের অভিজ্ঞতা নিয়ে, দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির মর্মবস্তুকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে এবং অভিজ্ঞতার বিনিময় করতে।
পার্টি কংগ্রেসের মত, বিজেপি-আর এসএস পরিচালিত কেন্দ্রের সরকার এবং তার প্রতিনিধি নরেন্দ্র মোদী হিন্দুত্ব-কর্পোরেট আঁতাতেরই ফলাফল। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখা এই সরকারের বাধ্যবাধকতা। এখানেই বিজেপি-আরএসএস’র সঙ্গে সাম্রাজ্যবাদের আঁতাতের যোগসূত্র। এই আঁতাতের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর অঙ্গীকার নিয়েছে পার্টি কংগ্রেস। ক্রমবর্ধমান দক্ষিণপন্থী ঝোঁক থেকে দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে কিভাবে বদলে দেওয়া যায় এই প্রশ্নেও আলোচনা করেছে মাদুরাই কংগ্রেস। দেশে হিন্দুত্বের বাহিনীর যে আগ্রাসী আধিপত্য শুধুমাত্র তা থেকে নির্বাচনী সাফল্যে ওরা পৌঁছায়নি। হিন্দুত্ববাদীরা তাদের প্রভাবকে বাড়িয়েছে মতাদর্শগত, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রগুলিতেও। আর এই আধিপত্যই দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও সংবিধানের উপর স্বৈরতান্ত্রিক আক্রমণ ক্রমশ বাড়িয়ে তুলেছে। তৃতীয়বার নির্বাচিত হয়ে মোদী সরকার আরএসএস’র হিন্দুত্বের কর্মসূচির সঙ্গে নয়া উদারনৈতিক নীতি ও স্বৈরতান্ত্রিক শাসনকে ভয়াবহ কায়দায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় নয়া-ফ্যাসিবাদী বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাচ্ছে। আরএসএস’র হিন্দুত্বের কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার জন্য সংখ্যালঘু মানুষকে সবসময়ই আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে সামনে রাখছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোকে সংহত করে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক হিংসা ছড়ানো হচ্ছে। সংখ্যালঘুদের নিপীড়ন বাড়ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি কার্যত বুলডোজার রাজে পরিণত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবিরাম হিংসা ও ভয় প্রদর্শন মানুষের মধ্যে এক স্থায়ী সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কাঠামোকে কায়েম করার কৌশল হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে। হিন্দুত্বের সার্বিক পরিচিতিকে ভারতের মূল কাঠামোয় সংহত করার পরিকল্পনা কার্যকর করে চলেছে আরএসএস-বিজেপি।
তাই বিজেপি-আরএসএস এবং তার উগ্র বাহিনীর বিরুদ্ধে এক বহুমুখী সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তাকে আরও বেশি করে সামনে নিয়ে এসেছে। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার লড়াইয়ের পাশাপাশি প্রতিক্রিয়াশীল এবং বিভাজনের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লড়াই প্রয়োজন। এজন্য সাম্প্রদায়িক রাজনীতি ও নয়া উদারনীতির বিরুদ্ধে যাবতীয় সংগ্রামকে একত্রিত করতে হবে। একমাত্র বামপন্থীরাই বিজেপি-আরএসএস’র বিরুদ্ধে সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির বৃহত্তম ঐক্য গড়ে তোলার উদ্যোগ অতীতেও নিয়েছে, এখনও নিয়ে চলেছে। সবসময়ই বামপন্থীরা আপসহীন অবস্থান নিয়েছে।এই লড়াইকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবার সিদ্ধান্তেই মাদুরাইতে ২৪ তম পার্টি কংগ্রেসের তাৎপর্য।
Call of Madurai Congress
সংগ্রাম আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ

×
Comments :0