Sangharsh Rally Delhi

লড়াইয়ের ভারত রামলীলায়

জাতীয়

Sangharsh rally delhi farmers workers peasants bengali news

ঋদ্ধি রিতঃ দিল্লি

তখনও দেরি সমাবেশ শুরু হতে। আজমের গেটের সামনে দিয়ে চলেছে মানুষের মিছিল। দিল্লির রাজপথ ততক্ষণে লাল ঝান্ডার দখলে। মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে ‘‘জান কবুল আর মান কবুল আর দেব না আর দেব না রক্তে বোনা ধান মোদের প্রাণ হো’’। সোমবার ও মঙ্গলবার অনেকেই এসে পৌঁছেছেন। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের শ্রমিক বিরোধী এবং কৃষক বিরোধী নীতির প্রতিবাদে হাজার হাজার কৃষক ও শ্রমিক বুধবার এলেন মজদুর কিষান সংগ্রাম সমাবেশে। এক সময় রামলীলা ময়দানে লাল প্লাবন।

শুধুমাত্র হরিয়ানা থেকে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ এদিন দিল্লি এসেছেন এই সমাবেশে। তাঁদের একজন মনপ্রীত কৌর। একজন ছাত্রী। তিনি বলছেন, মূল্যবৃদ্ধি থেকে মুক্তি দরকার। তাই তিনিও এসেছেন কৃষক এবং শ্রমিকদের পাশে থেকেই তাঁদের আওয়াজকে আরও মজবুত করতে। 

প্রায় ৩০০ শিক্ষাবিদ, অভিনেতা, লেখক, সাংবাদিক এবং প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা এই আন্দোলনকে তাঁদের সমর্থন জানিয়েছিলেন। তাঁদেরও অনেকেই ছিলেন বুধবারের রামলীলা ময়দানে। আসামের বাকসা দহীরাম কলিটা, দয়া দেকা, দহিম বড় জানালেন তাঁরা ফসলের সঠিক মূল্য পান না। তাঁদের রাজ্যে বিজেপি শাসন। তাই ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি গ্যারান্টি না পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলবে। 

একই বক্তব্য মধ্যপ্রদেশের সিদি থেকে আসা কুসমকালী সাহুর। তিনিও প্রতিঞ্জাবদ্ধ সুরে হুঁশিয়ারি দিলেন এই আন্দোলন আরও দৃঢ় করে তোলার। পাঞ্জাবের তরন তারন থেকে আসা ষাটোর্ধ্ব অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী আনু কর। তিনিও শামিল হয়েছেন সমাবেশে। শুধু তিনি নন শামিল করেছেন তাঁর পরিবারকেও। 

প্রবীণা বলছিলেন, পাঞ্জাবে ১৫০০ লোককে দিয়ে ২০০০০ লোকের কাজ করানো হয়। পেনশন, গ্রাচুইটি নিশ্চিত নয়। সমস্ত শ্রমিকের জন্য প্রতি মাসে ২৬০০০ টাকা ন্যূনতম মজুরি করতেই হবে। নাতিদের দেখিয়ে বললেন, ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এটা আমার কর্তব্য। কেরালার কল্যাম রজনীর স্পষ্ট দাবি চারটি শ্রম বিরোধী আইন প্রত্যাহার করতেই হবে। 

মহারাষ্ট্রের ‘লং মার্চ’-এ অংশ নেওয়া নাসিকের বাসিন্দা সত্তর বছর বয়সি উমেশ মজুমদারা বুধবারের সমাবেশের জন্য আগের দিনই এসেছেন। তিনি জানান সে যাত্রায় হেঁটেছিলেন ১৮০ কিলোমিটার। নাসিক থেকে মুম্বই। ছ’দিন ধরে হয়েছিল কৃষকদের ‘লঙ মার্চ’। তার জেরে নড়ে বসতে হয়েছিল মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফড়নবিশ সরকারকে। 

বৃদ্ধকে শরীর স্বাস্থ্যের কথা জিঞ্জেস করলে, হেসে বলেন, ‘সে তো ঠিক আছে! কিন্তু জিজ্ঞেস কর নরেন্দ্র মোদী দাবিগুলো মানবেন তো?’ বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন। তারপরই বললেন, ঋণমুক্তি, ৬০ বছরের বেশি বয়সি সমস্ত কৃষকদের পেনশন এগুলো লাগু করতেই হবে। নাহলে আবারও পার্লামেন্ট অভিযান করবো আমরা। 

পশ্চিম বাংলা থেকে আসা যাদবপুর ইউনিভার্সিটির ইতিহাস বিভাগের ছাত্র সৌম্যরঞ্জন মুখার্জি বলছেন, যে সরকার সম্প্রীতি নষ্ট করে, যে সরকার মুঘল সময়কাল পাঠক্রম থেকে বাদ দিয়ে ইতিহাস গুলিয়ে দেবার চেষ্টা করে তাঁদের শাসন করার কোন অধিকার নেই। 

তিনি আরও বলেন, এই এত লাল ঝান্ডার সমারোহ সাহস যোগাচ্ছে। আগামীদিন নিশ্চিত আমাদের। বুধবারে সমাবেশ জুড়ে যেন সমস্বরে আওয়াজ তুলে দিলো ‘মার হাঁক হায়দারী হাঁক, কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক ডাক ওরে ডাক মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে’।

Comments :0

Login to leave a comment