সিপিআই(এম)’র আন্দোলনের দুই দিনের মাথায় ৪৯দিন পর ঘরে ফিরল কলকাতার রবীন্দ্রনগর থানা এলাকায় কারখানায় কাজ করতে আসা আক্রান্ত হয়ে নিখোঁজ ইসলামপুর থানার ছোঘরিয়া এলাকার সামসাদ আলি। বুধবার সন্ধ্যায় সে একাই বাড়ি ফেরে। সে বাড়ি ফেরার খবর পরিবারের সদস্যরা ইসলামপুর থানায় দিলে, বাড়িটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। বাড়িতে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ওই পরিবারের সদস্য মুজিবুর রহমান বলেন, সামসাদ রবীন্দ্র নগর থানা এলাকার আগ্রা গ্রামে ছিল। সেখান থেকে শিয়ালদা আসে ট্রেনে। শিয়ালদা থেকে ট্রেনে করে ইসলামপুরের আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশনে নেমে টোটো করে বাড়ি ফিরে সে। ছেলে বাড়ি ফেরায় তারা খুব খুশি। এখনই তাঁরা কাউকে দোষারোপ করতে চান না। পুলিশ ঘটনার খবর পেয়ে বাড়িটি ঘিরে রেখেছে। ওই নাবালককে এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।
উল্লেখ্য, সামসাদ ও তার দাদা আনসার আলীকে রবীন্দ্রনগর থানা এলাকার একটি জিন্স প্যান্ট রং করার ফ্যাক্টরির কাজে নিয়ে যায় তাদের গ্রামেরই মহম্মদ শাহেনশা নামে ওই ফ্যাক্টরির মালিক। জুন মাসের ১ তারিখে মোবাইল চোরের অপবাদ দিয়ে সামসাদকে উল্টো করে ঝুলিয়ে ইলেকট্রিক শক দেওয়া হয়। এরপর ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হলে উত্তাল হয়ে পড়ে রাজ্য। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ ছিল শামসাদ। ৪৯ দিনের মাথায় ওই নাবালক ঘরে ফিরে আশায় খুশি পরিবারের সদস্যরা।
তাকে উদ্ধারের দাবিতে সোমবার ইসলামপুর ২ নং এরিয়া কমিটির নেতৃত্বের উপস্থিতিতে ইসলামপুর থানায় ধরনা অবস্থানে বসে পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি সিপিআই(এম) কর্মীরা। পরিবারের আন্দোলনে শামিল হয়ে সিপিআই(এম) ২নং এরিয়া কমিটির সম্পাদক সামি খান হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ইসলামপুর থানা এলাকার অভিভাবক থানার আইসিকে। তাঁর কাছে আমরা দাবি রাখছি হয় শিশুটিকে জীবিত অবস্থায় ফেরত এনে দিন , মারা গেলে মরদেহ এনে দিন। আমরা এর বাইরে কোন দাবি রাখিনি। রবীন্দ্রনাথ নগর থানার আইসি নিখোঁজ শিশুর মাকে অসম্মান করার পাশাপাশি জাত তুলে গালাগাল করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি। এ ব্যাপারে আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের সাথে কথাও বলেছিলেন তিনি। কাকতালীয়ভাবে এই হুশিয়ারির দুই দিনের মাথায় ওই নাবালক ঘরে ফিরে এলো। সামি খান বলেন, এটা আমাদের বড় জয়। ওই নাবালককে পুলিশ এতদিন খুঁজে পাইনি- সেটা আমাদের বিশ্বাস করতে হচ্ছে এটা বড় দুঃখজনক। আমরা রবীন্দ্রনগর থানার আইসিকে হাইকোর্টে তোলার হুঁশিয়ারি দেওয়ার পর দুই দিনের মাথায় ছেলে বাড়ি ফিরে এলো।
ঘটনা প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) উত্তর দিনাজপুর জেলার সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন,‘‘ ৪৯ দিন ছেলেটি নিখোঁজ ছিল। পুলিশ মুম্বাই থেকে আসামিদের গ্রেপ্তার করে আনতে পারল। আর তার থানা এলাকার আগ্রা গ্রামে ছেলেটিকে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল পুলিশ খুঁজে পেল না। এদিকে চোপড়ার বিধায়ক ওই পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে বলেছিলেন ছেলেটিকে মেরে ফেলা হয়েছে। আমাদের পার্টির পক্ষ থেকে দুদিন আগে ইসলামপুর থানায় বিক্ষোভ দেখানোর পাশাপাশি দুই থানার আইসিকে হাইকোর্টে তোলার হুমকি দিলে ছেলে ফেরত আসলো। পুলিশের চরিত্র আরো একবার পরিষ্কার হয়ে গেল। পুলিশ নিজের কাজে না করে তৃণমূল নেতাদের খুশি করতে ব্যস্ত।’’ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
Comments :0