রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা বাঁচাতে, সাম্প্রদায়িক সম্পৃতি বজায় রাখতে ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দিল বাম ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব। প্রয়াত সুদীপ্ত গুপ্তের স্মরণে রবিবার এসএফআইয়ের রাজ্য দপ্তর দীনেশ মজুমদার ভবনের সামনে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয় এসএফআই সহ বামপন্থী ছাত্র সংগঠন গুলির পক্ষ থেকে। ভীড়ের চাপে এজেসি বোস রোডের একটা অংশ পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় কলকাতা পুলিশ। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছাত্ররা এদিন সমাবেশে অংশ নেন। শিয়ালদহ থেকে দুটি বড় মিছিল এবং কলকাতার বিভিন্ন এলাকার থেকে ছোট ছোট মিছিল করে ছাত্ররা আসেন সমাবেশে। সমাবেশের প্রধান বক্তা ছিলেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক এবং ছাত্র আন্দোলনের প্রাক্তন নেতৃত্ব মহম্মদ সেলিম।
এদিন সেলিম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘গত একদশকের বেশি সময় ধরে দক্ষিণপন্থীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই রাজ্য থেকে বামপন্থাকে শেষ করে দেওয়ার। বামফ্রন্ট সরকারকে হারানোর জন্য তারা ঐক্যবদ্ধ হয়। দক্ষিণপন্থী শক্তি যখন বাড়তে থাকে তখন তাদের প্রথম আক্রমণ নেমে আসে শিক্ষাক্ষেত্রের ওপর। আমাদের রাজ্যে তাই তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী কলেজ দকল করে এসএফআইকে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে না দিয়ে ভেবেছিল যে একদশকে ছাত্ররা ইনকিলাব জিন্দাবাদ বলা ভুলে যাবে। এই জন্য খুন হন সুদীপ্ত গুপ্ত, স্বপন কোলে, সৈফুদ্দিন মোল্লা, মইদুল মিদ্দারা। ওরা ভুল ছিল। ২০১১ সালের পর থেকে এই প্রথম রাজ্যে এক লক্ষ বেড়েছে এসএফআইয়ের সদস্য সংখ্যা।’’ ছাত্রদের লড়াইয়ের প্রতি সংঘতি জানিয়ে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক বলেন, ‘‘লাঠির সামনে, গুলির সামনে দাঁড়িয়ে ছাত্ররা যেই লড়াই করছেন তাকে কুর্নিশ জানিয়ে আমরা মনে করি যে আপনারাই পারবেন রাজ্যে স্বাধীনতা, গনতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্রের পতাকা তুলে ধরতে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘নয়া শিক্ষানীতির মাধ্যমে শিক্ষা ব্যবস্থাকে শেষ করে দিতে চাইছে বিজেপি এবং তৃণমূল। ওরা মিথ্যা স্লোগান, ইসু সামনে আনবে কিন্তু শিক্ষার দাবিতে কাজের দাবিতে স্বাস্থ্যের দাবিতে আমাদের যেই লড়াই তা চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’’
এদিনের সমাবেশ থেকে দুর্নীতি এবং সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নিয়েও বিজেপি এবং তৃণমূলকে নিশানা করেন সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘মাদ্রাসা, স্কুলের নাম করে মানুষকে হিন্দু মুসলমানে ভাগ করতে চাইছে বিজেপি এবং তৃণমূলে। ওরা আসলে মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে ভয় পাচ্ছে তাই ধর্মের নামে ভাগ করছে। ওরা চায় মানুষ জাতে নিজের হকের দাবি নিয়ে লড়াই সংগ্রামে না নামেন।’’ হাওড়ার প্রসঙ্গ টেনে সেলিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী জানতেন রামনবমীর মিছিল থেকে হিংসা ছড়াবে তাই রেড রোডে বসে ছিলেন আরএসএসের নির্দেশে।’’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘‘ছাত্ররা যখন নবান্ন অভিযান করতে যায় তখন পুলিশ, রোবোকব সব তৈরি থাকে। গত দুবছর যেখানে রামনবমীর মিছিল থেকে সাম্প্রদাবিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে সেকানে পুলিশ কেন আগাম কোন ব্যবস্থা নেয়নি?’’
দুর্নীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল চায় না চোরদের ধরতে তাই মাঝে মাঝে কিছু কাগজ সামনে এনে মুখ বাঁচাতে চাইছে।’’ সেলিমের কথায়, ‘‘বিজেপি শাসিত মধ্যপ্রদেশে একই ভাবে ব্যাপম দুর্নীতি হবেছে। ১০০ জন খুন হয়েছে। সেটাও ছিল চাকরির দুর্নীতি। সিবিআই তদন্ত করে কিচু করতে পারেনি। তাই কলকাতা হাই কোর্ট বলতে বাধ্য হচ্ছে দুর্নীতির মহাসাগর।’’
সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় থেকেই ছাত্ররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গিয়েছে। আমাদের রাজ্যেও বাম ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার দাবিকে সামনে রেখে সঠিক দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে।’’
Comments :0