ফুটপাতে ব্যবসা করলে তা অবৈধ, অথচ ফুটপাত দখল করে শাসক দলের শ্রমিক সংগঠনের অফিস কিংবা কোচবিহার পৌরসভা পরিচালিত শৌচাগার গড়ে উঠলে তা বৈধ! তাই বুলডোজার বা জেসিবি ব্যবহার করে ফুটপাত ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করা হলেও, আশ্চর্যজনকভাবে ফুটপাত দখল করে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত কোচবিহার জেলা মালবাহী অটো পিকআপ কর্মী ইউনিয়নের অফিস সহ শাসকদলের অন্যান্য সংগঠনের অফিস এবং তৃণমূল পরিচালিত কোচবিহার পৌরসভার উদ্যোগে ফুটপাতে নির্মিত শৌচাগারে ফুলের ছোঁয়াটুকু লাগতে দিচ্ছে না প্রশাসন।
মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ এবং হুঁশিয়ারির পর পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে শুরু হয়েছে প্রশাসনিক তৎপরতা। কোথাও অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হচ্ছে, কোথাও জবরদখল জমি পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে, কোথাও ফুটপাতে ব্যবসা করে সংসার প্রতিপালন করা ব্যবসায়ীদের অস্থায়ী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ভেঙে দেওয়া হচ্ছে প্রশাসনিক উদ্যোগে। এর থেকে বাদ পড়েনি কোচবিহার জেলাও।
সোমবার প্রশাসনিক বৈঠকের পর কোচবিহার জেলা পুলিশকে দেখা গিয়েছে এদিন সন্ধ্যায় কোচবিহার শহরের সাগরদিঘি এলাকায় ফুটপাতমুক্ত অভিযানে শামিল হতে। মঙ্গলবার রাসমেলা মাঠ সংলগ্ন এলাকায় জেসিবি ব্যবহার করে ফুটপাতের বিভিন্ন দোকান ভেঙে দেয় পুলিশ প্রশাসন। এদিন সন্ধ্যায় কোচবিহার শহরের সুনীতি রোডে ফুটপাতে ব্যবসায়ীদের উঠে যাওয়ার নির্দেশ দিতে দেখা যায় পুলিশ সুপার সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের।
উল্লেখ্য, এর আগেও বহুবার কোচবিহার পৌরসভা থেকে উচ্ছেদ অভিযান হয়েছিল শহরের বিভিন্ন প্রান্তে, তুলে দেওয়া হয়েছিল, ভেঙে দেওয়া হয়েছিল ফুটপাতে থাকা অস্থায়ী দোকান। আবার কিছুদিন পর দেখা গেছে এই ফুটপাত ব্যবসায়ীরা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছেন এবং পৌরসভা তাদের কাছ থেকে প্রতিদিন ট্যাক্স আদায় করছে ৩০ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
কর্মসংস্থানহীন রাজ্যের শিল্পবিহীন কোচবিহার জেলার একটি বড় অংশের মানুষ কোচবিহার শহরের ফুটপাতগুলিতে বিভিন্ন ব্যবসা করে সংসার প্রতিপালন করছিলেন। এই সমস্ত ফুটপাত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ফুটপাত দখল করার অভিযোগ এনে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে শুরু করেছে কোচবিহার জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই কোচবিহার শহরের বিভিন্ন রাস্তার পাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করেছে প্রশাসন। কিন্তু কোচবিহার শহরের এনএন পার্কের মূল ফটকের পার্শ্ববর্তী ফুটপাত ওপর, কিংবা শহরের মা ভবানী চৌপথিতে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন অনুমোদিত অফিসের অবৈধ নির্মাণ থাকলেও তা উচ্ছেদ করা হচ্ছে না প্রশাসনের পক্ষ থেকে। এছাড়াও কোচবিহার কোতোয়ালি থানা সংলগ্ন এলাকা, কোচবিহার এন এন পার্কের পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোচবিহার পৌরসভার পক্ষ থেকে নির্মাণ করা হয়েছে পাবলিক টয়লেট। ফুটপাতে অবৈধভাবে নির্মিত এই শৌচাগারগুলি উচ্ছেদ করার কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করছে না পুলিশ প্রশাসন বলে উঠছে অভিযোগ।
এই প্রসঙ্গে কোচবিহার নাগরিক অধিকার রক্ষা মঞ্চের সম্পাদক মহানন্দ সাহা বলেন, অবশ্যই ফুটপাত মানুষের চলাচলের জন্য। এই ফুটপাতে ব্যবসা থাকলে যদি চলাচলের বাধা হয়, তাহলে ফুটপাতে যে কোনও প্রতিষ্ঠান থাকলেই তা হবে। আর এখানে যদি শাসকদলের সংগঠনের দপ্তর থাকে বা পৌরসভা পরিচালিত শৌচাগার নির্মিত হয়, সেটাও উচ্ছেদ করাটা জরুরি। কিন্তু কোচবিহার শহরের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে ফুটপাতে গরিব মানুষের দোকান প্রশাসন ভেঙে দিচ্ছে কিন্তু তৃণমূলের তোলাবাজির অফিস ফুটপাতে থেকে যাচ্ছে, এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। প্রশাসনকে সামনে নিয়ে তৃণমূল যা করছে তা অন্যায়। ফুটপাত ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের।
Hawker
ফুটপাতে ব্যবসা অবৈধ, দলীয় অফিস বৈধ!

×
Comments :0