Brigade Tomorrow

শ্রেণি ঐক্য গড়ে বিভেদ মোকাবিলার ভাষ্যে কাল ব্রিগেড

রাজ্য ব্রিগেড

বস্তি থেকে শ্রমিক মহ্ল্লা বা খেতখামার- প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে কাজ। ২০ এপ্রিল ব্রিগেডের প্রচারে তা নিয়েই হয়েছে আলোচনা। সর্বাত্মক প্রয়াস থেকেছে মেজনতীর ঐক্য গড়ার কাজে। সেই সময়েই, যখন এরাজ্য দেখেছে বিভাজনের রাজনীতির ভয়ঙ্কর চেহারা।
গুরুত্বপূর্ণ হয়েছে জমির পাট্টা, স্মার্ট মিটার, গ্রামঞ্চলে হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দাবিও। প্রায় সর্বত্র পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে কাজের খোঁজে অন্যত্র চলে যাওয়ার ছবি ধরা পড়েছে ব্রিগেড প্রচারে।
২০ এপ্রিল ব্রিগেডের প্রচার স্বাধীনভাবে করেছে সিআইটিইউ, সারা ভারত কৃষকসভা, সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়ন এবং পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতি। 
কৃষক-খেতমজুরদের ক্ষেত্রে প্রধানত ক্ষোভ একশো দিনের কাজ না থাকায়। চার সংগঠনের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, কেবল প্রচারই হয়নি। সেই সঙ্গে হয়েছে জীবন জীবিকার দাবি নিয়ে বিক্ষোভ। বিক্ষোভ হয়েছে জমির পাট্টা কেড়ে নেওয়ার বিরুদ্ধে। বিএলএলআর দপ্তরে আছড়ে পড়েছে ক্ষোভ। বিক্ষোভ হয়েছে ব্লক আধিকারিকের দপ্তরে। সরকারি প্রকল্প দিনের পর দিন না মেলার যন্ত্রণা সরব হয়েছে প্রতিবাদে। 
গ্রামাঞ্চলে হাসপাতাল এবং সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষোভ উঠে এসেছে বারবার। জনতা ক্ষুব্ধ স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়তে থাকায়। বস্তি আন্দোলনের নেতৃত্ব জানাচ্ছেন, গ্রামাঞ্চলের মতোই শহরের এই সব এলাকায় পরিযায়ী হয়ে চলে যাচ্ছে যুব অংশ। কলকাতা শহরের বুকে চেতলা হোক বা বেলেঘাটা, বস্তি অঞ্চলে প্রচারের সময়ই দেখা গিয়েছে কিভাবে অন্য জায়গায় কাজের খোঁজে চলে যেতে হচ্ছে এই অংশকে।
কলকাতা বা হাওড়ার মতো বড় শহরে প্রান্তিক জনতার বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়েছে স্মার্ট মিটার। ব্রিগেডের প্রচারে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার কথা বলা হয়েছে বারবার। বলা হয়েছে যে মোবাইলে যেমন মেয়াদ শেষ হলেই বন্ধ হয় পরিষেবা স্মার্ট মিটার চালুর পর বিদ্যুতেও হবে তেমন ব্যবস্থা। তার ওপর দিনের মধ্যে পাঁচটি আলাদা সময়ে আলাদা হারে নেওয়া হবে বিদ্যুৎ মাশুল। চাহিদা যখন বেশি, সে সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারে দিতে হবে বাড়তি মাশুল। মাশুলের কারচুপি হলেও ধরা মুশকিল, হিসেবের এতরকম প্যাঁচ! 
শহরের বহু জায়গায় প্রচার একযোগেই চালিয়েছে বস্তি সংগঠন এবং সিআইটিইউ। সংগঠকরা জানাচ্ছেন, সর্বত্র প্রধান লক্ষ্য ছিল নিবিড় প্রচার গড়ে তোলা। যত বেশি সম্ভব বাড়ি গিয়ে কথা বলা। প্রান্তিক শ্রমজীবীর সঙ্গে তাঁর কর্মস্থলে যেমন প্রচার চলেছে তেমনই তাঁরই আবাস কোনও বস্তি অঞ্চলে গিয়ে বহু জায়গায় কথা হয়েছে তাঁর পরিবারের সঙ্গেও। 
গ্রামের ক্ষেত্রে লড়াইয়ের বড় ক্ষেত্র গজিয়ে ওঠা ধনী চক্রের সঙ্গে গরিবদের দ্বন্দ্ব। এরাই বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে দেওয়া পাট্টা হাতিয়ে নিচ্ছে। কৃষকসভা এবং খেতমজুর আন্দোলন বারবারই বলেছে যে ব্লক স্তরে ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরগুলি দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। জমি বেহাত হচ্ছে। 
আবার শহরাঞ্চলে বস্তি এলাকায় উচ্ছেদের আশঙ্কাও তীব্র। উন্নয়নের নামে বস্তিবাসীদের তাঁর বরাবরের আবাস থেকে তুলে দেওয়ার ঘটনা রয়েছে। যে কারণে আশঙ্কা রয়েছে সরবত্র। শিলিগুড়ি থেকে কলকাতা, রাজ্যের কোথাও বস্তিবাসীরা স্বস্তিতে নেই। সংগঠকরা বলেছেন, প্রতিরোধই একমাত্র রাস্তা। একজোটে লড়াই ছাড়া আর কোনও পথ নেই গরিব, প্রান্তিক, মেহনতী জনতার। 
এরাজ্যে এখন তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি ধর্ম নিয়ে বিভেদের রাজনীতিতে পরিপূরক জায়গায় চলে এসেছে। একেবারে ভোটের দিকে তাকিয়ে ধর্মীয় উসকানি, তা থেকে উন্মাদনার বাস্তবতা রাজ্যের সর্বত্র। সেই সঙ্গে চরম দুর্নীতির আখড়া হয়েছে গোটা রাজ্য। কেন্দ্রে এবং রাজ্যে আসীন দু’দলের রাজনীতির প্রধান ক্ষেত্র কলকারখানা নয়। কৃষির উন্নয়নও নয়। মন্দির-মসজিদের নাম করে ধর্মীয় বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ভোট তোলা কল।
পশ্চিমবঙ্গ বস্তি উন্নয়ন সমিতির অন্যতম নেতা দেবাশিস চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, ব্রিগেডের প্রচারে ছোট-বড় সভায় এসেছে একথাও যে আপনার ধর্নীয় বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে ভোটে ফয়দা তুলছে যারা, তারাই আপনার বিপক্ষে নীতি নিয়ে চলছে। এসেছে বামপন্থীদের দুর্বলতার প্রসঙ্গও। সংগঠকরা বলেছেন, বামপন্থীদের শক্তি কমলে রমরমা হয় দাঙ্গাবাজ, দুর্নীতিবাজদের। নিজের অভিজ্ঞতায় দেখুন।
ছোট ছোট জীবনের ছোট ছোট কথা থেকেই এই ব্রিগেড তুলে এনেছে বড় লড়াইয়ের ক্যানভাস। শ্রেণি ঐক্য গড়ে বিভেদের রাজনীতিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর ভাষ্য তৈরির কাজ হয়েছে পাহাড় থেকে সাগরে।

Comments :0

Login to leave a comment