NATUNPATA NEW GOLPO SOURISH MISHRA

নতুনপাতা নতুন গল্প সৌরীশ মিশ্র

ছোটদের বিভাগ

NATUNPATA NEW GOLPO SOURISH MISHRA 28 MAY

উপহার


সৌরীশ মিশ্র

 

 


দুর্গাষ্টমীর সন্ধ্যে। বাঙালীর প্রাণের উৎসব দুর্গোৎসবে মেতে উঠেছে গোটা বাংলা। চারিদিক ঝলমল করছে আলোয় আলোয়। রাস্তা লোকে লোকারণ্য।


পাঁচ বছরের ছোট্ট তরী-ও বেড়িয়েছে নতুন ফ্রক পড়ে বাবা-মা'র হাত ধরে ঠাকুর দেখতে। আজ এরই মধ্যে পাঁচ-পাঁচটি ঠাকুর দেখে ফেলেছে ও। ওর বাবার মোবাইল ফোনে বেশ ক'টি মা দুর্গার ছবি-ও তুলেছে সে। এখন তরীরা আর একটা পূজা-প্যান্ডেলের সামনে এসে দাঁড়াল। একটা পার্ক। তারই মধ্যে প্যান্ডেল। পার্কটির বাইরের পাঁচিল ঘেঁষে হাজারো স্টল। সেগুলি বেশীরভাগই খাবারের। সেই পার্কটির পাঁচিল লাগোয়া ফুটপাথেই পড়েছে দর্শনার্থীদের লাইন। সেই লাইনে এসে দাঁড়াল তরীরা।


'বাবা, চিপস খাব। " তরীরা যেখানে দাঁড়িয়েছে ঠিক তার সামনেই একটা চিপস, কোল্ড ড্রিংক্স, আইসক্রিমের স্টল। এ স্টলটা দেখিয়ে কথাটা বলল তরী।

"দাদা, একটা পটেটো চিপসের প্যাকেট দেবেন তো। মেয়ের আবদারে সাড়া দিয়ে দোকানদারকে বললেন তরীর বাবা।  

"বাবা, একটা নয় দুটো, দুটো। বলে ওঠে 
তরী।

না, দুটো নয় একটাই হাত তরীর মা তরীকে ধমকে বলে ওঠেন।

 

"ঠিক আছে, ঠিক আছে। দুটোই কিনি। আজ একটা খাবে আমার সোনা মা, কাল খাবে আর একটা। কি ঠিক আছে তো? তরীকে বলেন বাবা।

" আমি দুটো খাবনা তো। একটা আমি খাব, আর একটা ঐ ভাইকে দেব। বলে ওঠে তরী!

কোন ভাইকে ?' প্রায় সমস্বরে বলে ওঠেন 
তরীর বাবা-মা।

তরী হাত তুলে দেখায়। তরীর বাবা-মা দেখেন সে ফুটপাথে, দাঁড়িয়ে আছেন ওঁরা, ঠিক তার উল্টো দিকের ফুটপাথটা ততটা আলোকিত নয়। সেই আলো-আধারির মধ্যে ফুটপাথে বসে আছে একটা বউ আর তার কোলে বছর তিনেকের একটা ছেলে এ বউটির পরনে একটি ছেড়া শাড়ি আর বাচ্চাটির গায়ে মলিন জামা-প্যান্ট। ভিক্ষা করছে বউটি। তরী বউটির কোলের ছেলেটিকেই হাত তুলে দেখাচ্ছে।

'ওই ভাইটাকে দেব।' আবারো বলে ওঠে
তরী।
 

একপ্রকার হতভম্বই হয়ে যান তরীর বাবা-
মা। তরীর বাবা কয়েক মুহূর্তে নিজেকে সামলে
নিয়ে দুটো চিপসের প্যাকেট কিনে দেন তরীকে। যা, দিয়ে আয়। মেয়েকে বলেন বাবা।

তরী দৌড়ে গিয়ে সেই ছেলেটির হাতে চিপসের একটা প্যাকেট দিয়েই আবার ছুটে
এসে ওর বাবা মা'র পাশে এসে দাঁড়ায়।
 

তরীর বাবা লক্ষ্য করেন ছোটো ছেলেটির চোখে মুখে, বিস্ময়। তরীর বাবা সস্নেহে মাথায় হাত রাখেন তাঁর মেয়ের। মা-তো কোলেই তুলে নেন মেয়েকে। চুমোয়-চুমোয় ভরিয়ে দেন তিনি তরীকে। তরীর বাবা-মা'র দু'জনেরই চোখে তখন জল।

 

Comments :0

Login to leave a comment