শনিবার এসআইআর’এ শুনানি শুরুর আগে মাইক্রো অবজার্ভারদের নিয়ে কলকাতার নজরুল মঞ্চে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলো নির্বাচন কমিশন।
এ রাজ্যে শুনানির সময় কেন্দ্রীয় সরকারি দপ্তর ও কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার গ্রুপ বি পদমর্যাদার আধিকারিকদের শুনানিতে মাইক্রো অবজার্ভার হিসাবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কমিশন। বুধবার সেই আধিকারিকদের নিয়ে নজরুল মঞ্চে প্রশিক্ষণ সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের রাজ্যের সিইও মনোজ আগরওয়াল ও বিশেষ পর্যবেক্ষক সুব্রত গুপ্ত সহ শীর্ষ আধিকারিকরা।
কমিশনের সূত্রে জানা গেছে, রাজ্যেই কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ কোল ইন্ডিয়া, কাস্টমস, রেল, ব্যাঙ্ক সহ একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে আধিকারিকদের মাইক্রো অবজার্ভার হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। প্রায় ৪ হাজারের কাছাকাছি মাইক্রো অবজার্ভারকে এরাজ্য থেকে নিয়োগ করার কথা কমিশন জানিয়েছে। কমিশনের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, ‘‘ শুরুতে পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খন্ড, ওড়িশা কিংবা বিহার থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের এরাজ্যে মাইক্রো অবজার্ভার হিসাবে প্রয়োজন হতে পারে। সেইমতো প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পড়শি রাজ্য থেকে কোনো আধিকারিককে নেওয়া হয়নি। এরাজ্য থেকেই কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের মাইক্রো অবজার্ভার হিসাবে ব্যবহার করা হবে।’’
আগামী ২৭ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যে ভোটার তালিকার বিশেষ সংশোধন অভিযানে নাগরিকত্ব যাচাই করার জন্য শুনানির কাজ শুরু হচ্ছে। রাজ্যের প্রায় ৩ হাজার কেন্দ্রে এই শুনানি শুরু হবে। শুনানিতে ইআরও(ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার), এইআরও(অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার) ও মাইক্রো অবজার্ভাররা উপস্থিত থাকবেন। বিএলও’দের শুনানিতে রাখা হচ্ছে না বলে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে। এবারই এইআরও’দের হাতে শুনানির তথ্য যাচাই করার পর তা নিষ্পত্তির বাড়তি ক্ষমতা দিয়েছে কমিশন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব থাকছে ইআরও’দের ওপরই।
মাইক্রো অবজার্ভার হিসাবে কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিকদের নিয়োগ নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। দু’দিন আগে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সভাতে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘‘ কেন্দ্রীয় সরকারের অনেককে নিয়োগ করা হয়েছে। এলাকায়, এলাকায় খবর রাখুন , কাকে কাকে নিয়োগ করা হয়েছে। মাইক্রো অবজার্ভার করছে। তারা দিল্লির লোক। বিজেপির দালাল। তারা রাজবংশী, নেপালি, কামতাপুরী, লেপচা কিছুই ভাষা জানে না। তারা করবে হিয়ারিং।’’ এদিন মাইক্রো অবজার্ভারদের প্রশিক্ষণের মধ্যেই সিইও মনোজ আগরওয়াল সাংবাদিকদের জানিয়ে দেন,‘‘ বাইরের রাজ্য থেকে আমরা কোনো মাইক্রো অবজার্ভার নিয়োগ করিনি। তাঁরা সকলেই এরাজ্যে কর্মরত। তাঁরা অন্য কোনো রাজ্যের বাসিন্দা কি না তা আমাদের জানা নেই। সব মাইক্রো অবজার্ভারদেরই নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে।’’
শুনানি পর্বে মাইক্রো অবজার্ভারদের কাজ কী হবে তা কমিশনের নির্দেশিকাতেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মূলত শুনানির জন্য আসা ভোটারদের যাবতীয় নথি যাচাই করার ভার দেওয়া হয়েছে মাইক্রো অবজার্ভারদের ওপরই। তারপরেও কমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, মাইক্রো অবজার্ভারদের কাজ নিয়ে কমিশন ‘এসওপি’ তৈরি করছে। যাকে ভিত্তি করে মাইক্রো অবজার্ভাররা শুনানির সময় দায়িত্ব পালন করবেন।
রাজ্যে এখন শুনানির জন্য কেবলমাত্র ৩২ লক্ষ আনম্যাপড ভোটারদেরই ডাকা হবে। তাঁরা কারা? কমিশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, ২০০২ ও ২০২৫ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে মিলিয়ে এনিউমারেশন ফরম পূরণ করা ভোটারদের একাংশকে ডাকা হবে। কারণ, তাঁদের ভোটার ফরমের কিছু অসঙ্গতি ধরা পড়ায় শুনানির জন্য ডাকা হচ্ছে। একইসঙ্গে যে সমস্ত ভোটাররা কোনোভাবেই ২০০২ সালের শেষবারের এসআইআর’র সঙ্গে যুক্ত হতে পারেনি তাঁদের ডাকা হচ্ছে।
কমিশন চাইছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ৩২ লক্ষ আনম্যাপড ভোটারদের নাগরিকত্ব যাচাই করার কাজ শেষ করে নিতে। রাজ্যজুড়ে প্রতি বুথে শুরুতে ১০০ জনকে শুনানির জন্য ডাকা হলেও পরে তা বাড়িয়ে বুথ পিছু ১৫০ জন করা হয়েছে। আনম্যাপড ভোটাররদের শুনানি পর্বের মধ্যেই কমিশন আত্মীয়তার (প্রজেনি ম্যাপিং) সূত্র ধরে চিহ্নিত ভোটারদের অসঙ্গতি দূর করতে চাইছে। শুরুতে ১ কোটি ৬৭ লক্ষ আত্মীয়তার সূত্র ধরে ভোটারদের মধ্যে অসঙ্গতি চিহ্নিত করেছিল কমিশন। মূলত নাম, বাবা-মা’র নামের অসঙ্গতি হিসাবে চিহ্নিত ভোটারদের কাছ থেকে তথ্য যোগাড় করে সেই সংখ্যা এখন ১ কোটি ২৯ লক্ষে নামিয়ে আনা হয়েছে বলে কমিশন সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এখন আনম্যাপড ভোটারদের নাগরিকত্ব যাচাই শেষ করার আগে ‘প্রজেনি ম্যাপিং’এ অসঙ্গতিতে থাকা ভোটারদের যতটা সম্ভব শুনানি এড়ানোর জন্য বিএলও’দের সক্রিয় হতে বলা হয়েছে।
Election commission
রাজ্যে কর্মরত ৪ হাজার কেন্দ্রীয় সরকারী অফিসারই মাইক্রো অবজার্ভার
×
Comments :0