Child Labour Schools Closed N Dinajpur

কর্মচ্যুত শিশুশ্রমিক স্কুলের শিক্ষকরা দিনমজুরি করেন

জেলা

ছবি প্রতীকী।

বিশ্বনাথ সিংহ: রায়গঞ্জ 
 

 শিশু শ্রমিক থাকলেও জেলায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৪৯ শিশু শ্রমিক স্কুল। স্কুলের শিক্ষকরা পথের ধারে ফল বিক্রেতা কেউ বা পরিযায়ী শ্রমিক, কেউ আবার বিড়ি বেঁধেই সংসার সামলানোর কাজে যুক্ত হয়েছেন। এমনই দাবি চাকরি হারানো প্রায় ১৫০ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর।
এরাজ্যের শিক্ষিত যুবকেরা বছর ৩০ আগে ভিন দেশের অস্থায়ী কাজ ছেড়ে এসে শিশুশ্রমিকদের স্কুলে পড়ানোই ছিল তাঁদের পেশা। সেটাই ছিল বামফ্রন্ট সরকারের সিদ্ধান্ত। সরকারের সেই সিদ্ধান্ত  বাতিল করে দিয়েছে তৃণমূল সরকার। শিশু শ্রমিকদের স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। আর সেই সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের  প্রাপ্য  অনুদানও বন্ধ হয়ে গেছে। জেলায় ৪৯  শিশু শ্রমিক স্কুল বন্ধ। ফলে প্রায় ১৫০ শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা কর্মচ্যুত হয়ে পেশা বদলাতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা নিজেরাই অনেকে এখন শ্রমিক। এদের কেউ টোটো চালান, কেউ বা মুদির  দোকান খুলে বসেছেন। কেউ জাতীয় সড়কের ধারে ফল বিক্রি করছেন। এইভাবেই চলছে কর্মচ্যুত শিক্ষকদের বর্তমান জীবন। 
উত্তর দিনাজপুর জেলায় ৪৯টি স্কুলের মধ্যে ৩০টি শিশু শ্রমিক স্কুলই ছিল করণদিঘি ব্লকে। কারণ এই করণদিঘি ব্লকেই সব চেয়ে বেশি বিড়ি কারখানা থাকায় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। যদিও মাধ্যমিক শিক্ষা মিশনের দাবি, শিশুশ্রমিক বলে জেলায় আর কিছুই নেই। সবাই এখন মুল স্রোতে। জেলা জাতীয় শিশুশ্রমিক প্রকল্প সূত্রে জানা গিয়েছে,  জেলায় এখন ৭হাজার ৭০০ শিশুশ্রমিক আছে। ইতিমধ্যে সমীক্ষা করে এই সংখ্যা খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। মাধ্যমিক শিক্ষা মিশনের অধীনে এদের নিয়ে আসার কথা বলা হলেও  বাস্তবায়িত হয়নি। ছাত্ররা বাবা-কাকার সঙ্গে ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির কাজে চলে গেছে। 
সিআইটিইউ অনুমোদিত বিড়ি শ্রমিক ইউনিয়ের নেতা ইজাবুল সালোয়ার নিজেও ছিলেন কামারতোর শিশু শ্রমিক স্কুলের শিক্ষক। তিনিও কর্মচ্যুত হয়েছেন। তাঁর কথায়  ২০২০ সালের মার্চ মাসে কোভিডের অজুহাত দেখিয়ে ৫৬টি শিশুশ্রমিক স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৯/১০ হাজার ড্রপ আউটের তালিকায় চলে গেছে। কোভিড পর্ব কেটে গেলেও স্কুল আর খোলা হয়নি। কর্মচ্যুত হয়েছেন ১৮০ জন শিক্ষক ও কর্মী।
শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়েরাও যাতে শিক্ষার আঙিনায় আসতে পারে সেইজন্যে এইসব স্কুলে ৬-১৪ বছর বয়সি শিশুশ্রমিকদের বিনামূল্যে শিক্ষা ও মিড-ডে মিলের খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার। প্রতিটি  শিশুশ্রমিক স্কুলে চুক্তিভিত্তিক ২ জন শিক্ষক  ও ২ জন শিক্ষাকর্মী ছিল। শিক্ষকদের বেতন ছিল ৭ হাজার টাকা, করণিকরা পেতেন ৫ হাজার ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা পেতেন ৪ হাজার টাকা করে। বন্ধ স্কুলে সাপের বাসা হয়েছে।  ২০২১ সালে সমীক্ষার পর দেখা যায় জেলায় ৭৭০০ জনের বেশি শিশু শ্রমিক রয়েছে। রাজ্যের সরকার খাতায় কলমে স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে জানানোর পর সরকারি অনুদান বন্ধ হয়ে যায়। 
আইআইটিইউ জেলা সম্পাদক স্বপন গুহ নিয়োগীর অভিযোগ, সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি না পাল্টালে গরিব মানুষের এমনই অবস্থা হবে। আলতাপুরের কামারতোর, রাঘবপুরের  শিশু শ্রমিক  স্কুলের শিক্ষক ইজাবুল সালোয়ার, শেখ রুস্তম, সেনারুল হক  এখন দিনমুজরি করছেন। মহম্মদ সেনারুল হক বলেন, ভাতা বন্ধ থাকায় সংসার চালাতে দিন মজুরির কাজ করছি। এক মহিলা শিক্ষা কর্মী বলেন, শিশু শ্রমিকদের বিড়ি বাঁধার কাজ থেকে ছাড়িয়ে স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলাম। এখন বিড়ি বাঁধতে হচ্ছে। সংসার চলবে কি করে?  মহম্মদ ইসলাম কাকার সঙ্গে কেরালায় গেছে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে।  
ক্যাপ:- করণদিঘি ব্লকে শিশু শ্রমিক স্কুল। ২০২০ সালের মার্চমাস থেকে বন্ধ।
 

Comments :0

Login to leave a comment