understand the verdict of the lower court

ছিঃ ছিঃ ছিঃ

সম্পাদকীয় বিভাগ

নৃশংসতম ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার শিকার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের তরুণী চিকিৎসকের বাবা-মা নিম্ন আদালতের রায়ের পূর্ণ বয়ানটি পড়ার এবং বোঝার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রী ও পুলিশ মন্ত্রীকে। তাঁদের ধারণা সেটা পড়ার ও বোঝার পর মুখ্যমন্ত্রী লজ্জায় পদত্যাগ করবেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই বয়ান পড়েছেন কিনা, পড়লে বুঝেছেন কিনা জানা যায়নি। এমনকি তিনি আদৌ লজ্জা পেয়েছেন কিনা সেটাও অজানা। তবে আগবাড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্লজ্জ প্রমাণ করতে নির্লজ্জভাবে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মুখ্যমন্ত্রীরই অনুগত নির্লজ্জ বাহিনী। সভ্য সমাজে পরিত্যাজ্য অত্যন্ত কুৎসিত ও কদর্যভাবে তারা অভয়ার বাবা-মাকে আক্রমণ শুরু করে দিয়েছেন। আক্রমণের ভাষা, বিষয়, শব্দ, ধরন থেকে স্পষ্ট মনুষ্যত্বের শেষ ক্ষীণতম খোলসটুকুও খসিয়ে ফেলে এরা নিজেদের আসল চরিত্র প্রকাশ্যে তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রসাদলাভের তাড়নায়। বাস্তবে এদের অস্তিত্ব-ঠাটবাট সবটাই মুখ্যমন্ত্রীর দয়া নির্ভর। মুখ্যমন্ত্রীর বিরাগভাজন হলে বা মুখ্যমন্ত্রীর নজরে থাকতে না পারলে কার্যত অস্তিত্বহীন হয়ে পড়বে। নেতা, বিধায়ক, সাংসদ, মন্ত্রী ইত্যাদি প্রাপ্তি তো সেই মুখ্যমন্ত্রীর কল্যাণে। তাঁকে ঠিকঠাক খুশি রাখতে না পারলে কখন কার কপাল পুড়বে কেউ জানে না। অতএব মুখ্যমন্ত্রীকে রক্ষা করতে তাদের যেকোনও ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেই হবে তা সে যতই কদর্য ও কুৎসিত হোক, অসভ্যতার পদবাচ্য হোক। সন্দেহ নেই এরাই তৃণমূল নামক দলটির রত্ন, সম্পদ।
অভয়া কাণ্ডের নি‍‌র্ভেজাল সত্য হলো এটা কোনও একজন মাতাল-লম্পটের কীর্তি নয়। এর পেছনে উঁচু মাথার নিখুঁত পরিকল্পনা আছে এবং সেই পরিকল্পনা রূপায়ণে অপরাধ চক্র গড়ে তোলা হয়েছে। এই চক্র ‍‌তৈরি করা হয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশ দপ্তরে পাকা মাথাদের নির্দেশে। সেজন্যই গোটা ষড়যন্ত্র যাতে ফাঁস না হয়, গোটা অপরাধীচক্র যাতে ধরা না পড়ে তাই ঘটনার পর থেকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে তথ্য প্রমাণ লোপাট করায়। প্রতিটি পদক্ষেপে এমনভাবে দান ফেলা হয় যাতে বানানো গল্পকেই প্রতিষ্ঠিত করা যায়। অভয়ার বাবা মা তো বটেই একমাত্র তৃণমূল ছাড়া সারা দুনিয়া জানে তথ্য প্রমাণ লোপাট করে তদন্তের নামে প্রহসন হয়েছে। প্রকৃত অপরাধীদের ধরার জন্য আদৌ কোনও তদন্ত হয়নি। হয়েছে একজন অভিযুক্তকে একমাত্র অপরাধী প্রমাণ করে বাকিদের বাঁচানোর জন্য। তদন্তকে কেন্দ্র করে অভয়ার বাবা মা ৫০টি প্রশ্ন তুলেছেন। প্রতিটি প্রশ্নই এই ঘটনার তদন্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও কোনোটিরও উত্তর খোঁজা হয়নি। কোনোরকমে একজনকে সাজা দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে চাইছে সিবিআই। তেমনি মমতার সরকার চাইছে আজীবন জেল সাজা প্রাপ্তের যেভাবেই হোক ফাঁসি দিতে। অপরাধী যদি বেঁচে থাকে তাহলে যেকোনও সময় মামলার পুনর্বিচার, পূর্ণতদন্ত হতে পারে। তখন তদন্ত যদি গভীরে ঢোকে, অপরাধীর বয়ানে যদি তথ্য প্রমাণ উঠে আসে তাহলে সব শয়তানি ধরা পড়ে যাবে। তাই ফাঁসির জন্য পাগল হয়ে উঠেছে সরকার ও শাসক দল।
অভয়ার বাবা মা এই নির্মম সত্যটিকেই বার বার সকলের গোচরে আনার চেষ্টা করছেন। তাই তারা আসল অপরাধী ও তাদের মদতদাতাদের ঘোরতর শত্রুতে পরিণত হয়েছেন। আগ্রাসী আক্রমণের মধ্য দিয়ে তাদের স্তব্ধ করে দিতে চাইছে। কুণাল ঘোষ, ববি হাকিম, শোভনদেব চ্যাটার্জি, কল্যাণ ব্যানার্জি, সৌগত রায়, মদন মিত্ররা এতটা কুৎসিত হয়ে ওঠার কারণ লুকিয়ে আছে এখানেই। অবশ্য ভয় পাবার বা হতাশ হবার কিছু নেই। গুন্ডা, মস্তান, দুষ্কৃতীরা সাময়িক তাণ্ডব করতে পারে কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমাজের ডাস্টবিনে তারা পরিত্যক্তই থাকে। আশার আলো সভ্য সমাজ অভয়ার বাবা মায়ের পাশেই আছে।

Comments :0

Login to leave a comment