মীর আফরোজ জামান - ঢাকা
তৈরি পোশাক খাতে আবারো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন। পোশাকশিল্প অধ্যুষিত এলাকায় বিক্ষোভ-ভাঙচুর হলে অন্তত ১৬৭ প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। রবিবার সকাল থেকেই যৌথবাহিনীর নিরাপত্তায় কাজে ফেরেন শ্রমিকরা। সাভারের আশুলিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী বিসিক, ভোগরা বাইপাস, বাঘের বাজার ও মাওনা এলাকায় কারখানায় শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তবে শিল্প খাতে শ্রমিক অসন্তোষ মাথাচাড়া দেওয়ায় শিল্পমালিক ও সরকারের উদ্বেগ বাড়ছে।
জানা গেছে, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের ’ঝুট ব্যবসার’ কারণে অস্থির হয়ে ওঠে তৈরি পোশাক কারখানার পরিবেশ। তারা কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়েছে। এমন অভিযোগ করেছেন পোশাক শ্রমিক নেতারা। তবে মালিকরা বলছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে তৃতীয়পক্ষ এখানে সক্রিয়। এ খাতে এমন অস্থিরতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। নৈরাজ্য-অস্থিরতা পোশাক শিল্পের জন্য শঙ্কার বিষয়। তৈরি পোশাকশিল্পের মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং বিটিএমএর তথ্য বলছে, দেশে গত জুলাই ও আগস্ট, এই দুই মাসের ছাত্র-জনতার আন্দোলন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বদল এবং চলমান অস্থিরতার কারণে কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সময়মতো ‘শিপমেন্ট’ করা যায়নি। ফলে বরাত অনুযায়ী মাল দিতে উড়োজাহাজে পণ্য পাঠাতে হয়েছে। এতে বাড়তি খরচ পড়েছে। তা সত্ত্বেও ৪৫ শতাংশ কারখানার রপ্তানির বরাত এ সময় বাতিল হয়েছে। এতে সামগ্রিকভাবে পোশাক ও বস্ত্র খাতে ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে অনেক কারখানায় বেতন দিতে দেরি হচ্ছে। শ্রমিকদের মধ্যে বেতন-বোনাস নিয়ে অসন্তোষ দীর্ঘদিনের। শ্রমিকরা বলছেন, বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মজুরি নির্ধারণ হোক। কারখানা শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতন ২৩ হাজার টাকা করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা আন্দোলন করে আসছেন। তৈরি পোশাক খাতে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানিকারক বাংলাদেশ। অথচ শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম মজুরি পান এ দেশের শ্রমিকরা। এটা এক ধরনের নৈরাজ্য। বেতন-ভাতার দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের বারবার রাস্তায় নামতে দেখা যায়। অনেক চড়াই-উতরাই অতিক্রম করে গত কয়েক দশকের পথপরিক্রমায় দেশের তৈরি পোশাকশিল্প আজকের এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। অনেক প্রতিকূলতা এবং দেশি ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অগ্রগতির পথে।
গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজেএমইএ’র সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান জানান, বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বেগবান করতে পোশাক শিল্পের কোনো বিকল্প নেই। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিদেশ থেকে যে রেমিট্যান্স আসছে তার অন্যতম খাত হলো গার্মেন্টস শিল্প। প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিকের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক অর্থ আয় করছে। যে কোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিঃসন্দেহে সে দেশের শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। সময়ের প্রয়োজনে অত্যন্ত দ্রুত পরিবর্তনশীল। ভোক্তা চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের বহুমুখীকরণ বা বৈচিত্র্যসাধন, কারখানায় আধুনিক প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার ও দক্ষ জনবল তৈরির মাধ্যমে নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হলে পোশাকশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। তবে শ্রমিকদের হক বঞ্চিত করে নয়। আমরা মনে করি, শ্রমিকদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সুরাহা করা উচিত।
অন্যদিকে, বাংলাদেশে সহযোগিতা কার্যক্রম স্থগিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড)। রবিবার (২৬ জানুয়ারি) সংস্থাটির এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে। চিঠিতে সই করেন ইউএসএইডের অধিগ্রহণ ও সহায়তা তত্ত্বাবধায়ক চুক্তি কর্মকর্তা ব্রায়ান অ্যারন।
ইতোমধ্যে মিশর ও ইজরায়েল বাদে বিশ্বের সব দেশের জন্য সহায়তা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সেই নির্দেশনায় বাংলাদেশে সহায়তা দান স্থগিত করেছে ইউএসএইড।
এ সংক্রান্ত এক গোপন নথিতে মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিও জানান, বিদ্যমান বা নতুন সহায়তার বিষয়গুলো পর্যালোচনা ও অনুমোদিত না হওয়া পর্যন্ত অর্থ ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী ৮৫ দিনের মধ্যে বিদেশি সহায়তার বিষয়গুলো রিভিউ করা হবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতির অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেয়া হলো। এই চিঠি সব ইউএসএইড বাংলাদেশের অংশীদারদের জন্য। তাদের চুক্তি, টাস্ক অর্ডার, অনুদান, সমবায় চুক্তি বা সহায়তা সংক্রান্ত যেকোনো কাজ অবিলম্বে বন্ধ বা স্থগিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে এই ৫ মাসে দেশে নানা ধরণের অস্থিরতা, নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর উর্ধগতি, টাকা পাচার, চরম দুর্নিতি ও গুপ্ত হত্যা বাড়ার সাথে সাথে দিনে দুপুরে ছিনতাই হচেছ অহরহ। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি একেবারেই শূন্যের কোঠায়। এই মুহূর্তে ছাত্র ওসমন্বয়করা ‘কিংস পাটি’ গঠন নিয়ে ব্যস্ত । এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ’সমাজের নানা জায়গা এবং সামাজিক গণমাধ্যমে ছাত্রদের এই ’কিংস পার্টি’ নামক রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, প্রশ্ন উঠেছে গঠন হচ্ছে কিনা? তরুণদের রাজনীতির আকাঙ্খার আমরা পক্ষে ৷ আমরা সমর্থন করি ৷ কিন্তু আমার কথা, তারা যদি সরকারের প্রত্যক্ষ, পরোক্ষ সহায়তা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান, তাহলে এটা জনগণ ভালোভাবে নিচ্ছে না ৷ জণগণের সঙ্গে তাদের এক ধরনের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে ৷ এবং সমাজের বিভিন্ন অংশের সঙ্গেও বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে ’৷ তিনি বলেছেন, ’বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তো অ-দলীয় সরকার ৷ কিন্তু তারা যদি বিশেষ কোনো গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করেন, তাহলে তাদের নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে তো প্রশ্ন উঠবেই’৷
Comments :0