PANCHAYAT TRIBALS BENGAL

‘জঙ্গল বাঁচাবো, বাঁচাবো আদিবাসী পাড়া’, সাফ বলছেন সারথিরা

রাজ্য

PANCHAYAT TRIBALS BENGAL

দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত দে

গ্রামে রেগার কাজ নেইছেলে মেয়েরা রোজগারের জন্য ছুটে যাচ্ছেন ভিন রাজ্যে। তাতে হেলদোল নেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের দেদার সন্ত্রাসের পাশাপাশি গ্রামের বেহাল অর্থনীতি নিয়ে বারবার সরব হচ্ছে সিপিআই(এম)। রেগার কাজ না থাকায় একদিকে যেমন গ্রামের যুবা সমাজ রোজগারের সন্ধানে ভিন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে তেমনি একাংশ তলিয়ে যাচ্ছে জুয়াও মদের নেশায়।

তৃণমূলের শাসনকালে গ্রাম ভালো নেই। একদিকে পঞ্চায়েত থেকে তৃণমূলের নেতারদের দেদার চুরি, সে আবাসন যোজনা হোক বা রাস্তা তৈরি প্রকল্পের টাকা বা রেগার টাকা। পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের ছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআই(এম) প্রার্থী ও সারা ভারত খেতমজুর সংগঠনের রাজ্য কমিটির সদস্যা সারথি দাস ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তৃণমূল প্রশাসনের বিরুদ্ধে। 

গত কয়েক বছর পঞ্চায়েতে দেদার লুঠতরাজ চালিয়েছে তৃণমূল। এবার তার বিরুদ্ধে সরব হলেই তাদের হুমকিমারধর করে তৃণমূলের গুন্ডা বাহিনী। বিশেষ করে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে সেই অত্যাচারের মাত্রা আরও বেড়েছে। সাধারণ মানুষকে বাঁচতে দেবেনা তৃণমূল, বলেন সারথী। শুধু অত্যাচারই নয় তিনি জানালেন যে পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের অধিকাংশ গ্রামই আদিবাসীপ্রধান। লকডাউনের পর থেকে অনেক গ্রামেই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে পড়ুয়ারা।

সারথি দাস বলছেন, ‘‘এই শিশুরা যে সকলেই কাজ করে এমনটা নয়। ফাইভসিক্সের বাচ্চা ছেলেদের ধরানো হচ্ছে জুয়ার নেশা। তার পরিবর্তে টাকা তুলে দেওয়া হচ্ছে তাদের হাতে। ফলে বিনা পরিশ্রমেই হাতে টাকা পেয়ে যাওয়ায় বহু ছেলেই অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে। আদিবাসী অঞ্চলগুলিতে এটি একটি বড় সমস্যা’’ ক্ষোভে তিনি বললেন, ‘‘স্থানীয় প্রশাসনকে একথা জানিয়েও লাভ হয়নি জুয়ার সঙ্গে দোসর মাদকের নেশা।’’\

পঞ্চায়েত নির্বাচনেওই একই ব্লকের ১০ নম্বর হেলাডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ললিতা হেমব্রম তৃণমূলের বিরুদ্ধে আরও চমকপ্রদ অভিযোগ আনলেন। তার দাবি,‘‘জোরজুলুম তো আছেই। সঙ্গে সন্ধ্যার অন্ধকার নেমে আসলেই মহিলাদের রাস্তায় বের হওয়া কার্যত বন্ধ।’’ কিন্তু সব থেকে উদ্বেগের বিষয় বলে তিনি যা জানান সেটি হল আদিবাসী অঞ্চলের জমি দখল। তিনি বলেন,‘‘এখানকার অধিকাংশ মানুষ লেখাপড়া জানেন না, অনেকটাই পিছিয়ে। তাঁদের অজ্ঞতার ফায়দা সম্পূর্ণ লুঠছে তৃণমূল। জলজঙ্গলজমির অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। আদিবাসীদের কাছ থেকে অল্প টাকায় জমি কিনে নিচ্ছে বা অন্য কারোর কাছে বিক্রি করিয়ে দিচ্ছে তৃণমূল।’’

সারথি দাস এবং স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, ‘‘আদিবাসীদের কেড়ে নেওয়া জমি ঘিরে সেখানে তৈরি হচ্ছে পাঁচিল ঘেরা বিশাল অট্টালিকা। সেই সব বাড়ির ভেতরে চলতে থাকে মদ ও জুয়ার আসর। এই ভাবে ধীরে ধীরে সমস্ত আদিবাসী পাড়াকে নষ্ট করে দিচ্ছে তৃণমূল।’’ তিনি জানাচ্ছেন, ‘‘জঙ্গলের গাছ কেটে সাফ করা হচ্ছে। সাফ হচ্ছে ইউক্যালিপটাসের মতো ঔষধি গুণসম্পন্ন গাছও।’’

গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে মহাত্মা গান্ধি ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারেন্টি স্কিম বা বহু প্রচলিত রেগার মাধ্যমে গ্রামের মানুষের ব্যবস্থা করতে হবে। এই প্রকল্পে সারা দেশে চালু বামপন্থীদের উদ্যোগেই। ২০০৫’র ইউপিএ-১ সরকারকে একপ্রকার জোর দিয়ে রেগার কাজ চালু করার পথ প্রসস্থ করেন তৎকালীন বামফ্রন্ট সাংসদরা। গ্রামের মানুষ রেগার মাধ্যমে ১০০ দিনের কাজ পাবেসঙ্গে দেওয়া হবে ন্যূনতম মজুরি। সময়ের সঙ্গে সেই মজুরি বৃদ্ধি পাবে এমনটাও বলাই হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই চিত্রের অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। 

তৃণমূল সরকার গঠন করার পর পশ্চিমবঙ্গে রেগার কাজে এতটাই দুর্নীতি হয়েছে যে কেন্দ্রের মোদী সরকার চলতি অর্থবর্ষেও পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে রেগায় টাকা বরাদ্দ করেনি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী ও অভিষেক ব্যানার্জীও রেগায় যে কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না তা শোনা যায়। গ্রামে গ্রামে রেগায় টাকা দেদার চুরি করেছে তৃণমূল। সারথীললিতা ছাড়াও গ্রামের সাধারণ মানুষ এ-ও দাবি করেছেন যে রেগার কাজের টাকা কাটমানি হিসেবে খেয়েছে তৃণমূল। আগের পাওনা গন্ডা আজও মেটায়নি তারা। এই নিয়ে খেতমজুর সংগঠনের পক্ষ থেকে বিডিও অফিসে ডেপুটেশনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরিবর্তে আজও মেলেনি তাদের পাওনা। উলটে জব কার্ড কেড়ে নিয়ে রেখে দিয়েছে তৃণমূল নেতারা। নতুন জব কার্ডও দেয়না। কাজ করে সাধারণ মানুষ সেই টাকা নিজেদের বা পরিবারের সদস্যদের জবকার্ড তোলে তৃণমূলের নেতারা। 

এই পাওয়া না পাওয়া অভিযোগের মধ্যেই জানা গিয়েছে বিরোধীদের মনোনয়ন তুলে নেওয়ার জন্য সমানে চাপ দিচ্ছে তৃণমূলের গুণ্ডা বাহিনী। ছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআই(এম) প্রার্থী গরমনি হেমব্রমকে প্রার্থীপদ তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে তৃণমূল। কিন্তু সেই হুমকির সামনে মাথা নত করেননি গরমনি। শাসক দলের গুন্ডা বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলছে সাধারণ মানুষই।

সারথী জানাচ্ছেন মানুষের পঞ্চায়েত কেমন হবে সেই লক্ষ্য। তিনি বলছেন,‘‘তৃণমূলের দুর্নীতি চুরি গ্রামের মানুষ চান না। চান একটি সুস্থ সন্ত্রাসহীন গ্রাম। যেখানে থাকবে কাজের সুযোগলেখাপড়া করার সুস্থ্য পরিবেশ ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। ছেলে মেয়েরা যাতে স্কুল ছুট না হয়ে নিয়মিত স্কুলে যায় সেদিকে নজর দেওয়া হবে। গ্রামে গ্রামে যেভাবে জুয়া ও মদের আসর ভেঙে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হবে।’’

গ্রাফিক্স: মনীষ দেব

Comments :0

Login to leave a comment