অনন্ত সাঁতরা: চাঁপদানি
রাজ্য জুড়ে যেভাবে মহিলাদের উপর নির্যাতন বাড়ছে তা প্রতিরোধ করতে পাড়ায় পাড়ায় মহিলা ব্রিগেড গড়ে তুলতে হবে। রবিবার চাঁপদানির মনসাতলায় হুগলী জেলার মহিলা সমাবেশে এই আহবান জানান রাজ্যের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী মীনাক্ষী মুখার্জী।
সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির হুগলী জেলা ২৭ তম সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশ হয় এদিন। শনিবার সম্মেলন হয়েছে চাঁপদানি রবীন্দ্র মঞ্চে। সমাবেশে মীনাক্ষী মুখার্জী ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক কনীনিকা ঘোষ, রাজ্য নেত্রী দিপু দাস, হুগলী জেলা সম্পাদক শিবানী দাশগুপ্ত ও সম্মেলনের অভ্যর্থনা সমিতির সম্পাদক সুখন মুখার্জি। প্রারম্ভিক বক্তব্য রাখেন দীপ্তি চ্যাটার্জী। সভাপতিত্ব করেন রাখি রায়। উপস্থিত ছিলেন অর্চনা মন্ডল ও অন্যান্যরা।
সমাবেশে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, একের পর এক বন্ধ হচ্ছে কারখানা। শ্রমিকদের জীবনে কোন নিশ্চয়তা নেই। প্রতিবাদ করলেই বন্ধ হচ্ছে কল কারখানার গেট। শ্রমিক মহল্লার মহিলাদের ক্রমশ আক্রান্ত করছে রোগে। কারো ছানির সমস্যা বা কারোর রক্তস্বল্পতা। তাঁরা বাধ্য হয়ে তাদের সংসার চালানোর জন্য জুট মিলের বাইরে অন্য কাজের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। পশ্চিম বাংলার মাটিতে মহিলা সমিতি মানুষের বেঁচে থাকার দাবি আদায় করেছিল লড়াই করে। স্বনির্ভর গোষ্ঠী থেকে শুরু করে নিজের কাজের অধিকার সবটাই আদায় করেছিল এই মহিলা সমিতি। আর এখন তা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আর এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এখন বলছে মহিলাদের রাত্রিবেলা রাস্তায় বেরোনো উচিত না। স্বাধীন ভারতের আমি একজন স্বাধীন নাগরিক সেখানে কখনোই কেউ বলতে পারে না আমি কখন বাইরে থেকে বেরব, আমার শরীরের দাম কত। তুমি সরকার চালাচ্ছ না, তুমি গুন্ডারাজ চালাচ্ছো। উল্লেখ্য, দুর্গাপুরে মেডিক্যাল ছাত্রীর ধর্ষণের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি রাত করে ছাত্রীদের হস্টেলের বাইরে বেরনো নিয়ে প্রশ্ম তোলেন। এমনকি তিনি বলেন যে পুলিশের পক্ষে প্রত্যেক ঘরে পাহাড়া বসানো সম্ভব নয়।
সমাবেশে কনীনিকা ঘোষ বলেন, হাজার হাজার মহিলাদের লড়াই সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও রক্ত ঘামের মধ্য দিয়ে নানা বাঁক মোড় অতিক্রম করে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি গড়ে উঠেছে। তেভাগা আন্দোলন ও জমির লড়াই করেছে মহিলারা। এখন আমাদের লড়াই তৃণমূল, বিজেপি ও আরএসএস 'র বিরুদ্ধে। এদের বিরুদ্ধে বর্শার ফলক শাণিত করে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই কাজে আরো বেশি বেশি মহিলাদের সংগঠিত করার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ২৬ হাজার শিক্ষক চাকরি হারালেন। নতুন করে ভেবে দেখুন তৃণমূল রাজ্যটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন যে, আমাদের রাজ্যে নারী পাচার ও বাল্য বিবাহ বাড়ছে কেন? এ নিয়ে সরকারের কোনো ভাবনা চিন্তা নেই। মহিলারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ধর্ষণ খুনের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। সরকার সমাজটাকে এমন জায়গায় নিয়ে যেতে চাইছে, এখানে যেন কোনও অন্যায় অন্যায় নয়। দুর্গাপুরের চিকিৎসক পড়ুয়ার গণধর্ষণের ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আরজিকরে অভয়া- তিলোত্তমাকে খুন হতে হয়েছিল। আজও তার বিচার হলো না। সর্বত্রই মহিলা নির্যাতনে বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই গড়ে তোলার ডাক দেন তিনি।
দিপু দাস বলেন, রাজ্য সরকার মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নয়।সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। উত্তরবঙ্গের বন্যায় দুর্গত মানুষ যখন দিশেহারা। তখন মুখ্যমন্ত্রী পুজোর কার্নিভালে নাচছেন।
Comments :0