অন্যকথা
রোকেয়ার স্বপ্ন
কৃশানু ভট্টাচার্য্য
মুক্তধারা
তিনি চাইতেন এদেশের মেয়েরা লেখাপড়া শিখুক। কেন? " শিক্ষা অর্থে আমি প্রকৃত সুশিক্ষার কথাই বলি; গোটা কত পুস্তক পাঠ করিতে বা দুই ছত্র কবিতা লিখতে পারা শিক্ষা নয়। আমি চাই সেই শিক্ষা- যাহা তাহাদিগকে নাগরিক অধিকার লাভে সক্ষম করিবে, তাহাদিগকে আদর্শ কন্যা ,আদর্শ ভগিনী , আদর্শ গৃহিনী , আদর্শ মাতা রূপে গঠিত করিবে। শিক্ষা মানসিক এবং শারীরিক হওয়া চাই। ... তাহাদের জানা উচিত যে তাহারা ইহজগতে কেবল সুদৃশ্য শাড়ি, ক্লিপ ও বহুমূল্য রত্নালঙ্কার পরিয়া পুতুল সাজিবার জন্য
আইসে নাই। বরং তাহারা বিশেষ কর্তব্য সাধনের নিমিত্ত নারী রূপে জন্ম লাভ করিয়াছে তাহাদের জীবন শুধু পতিদেবতার মনোরঞ্জনের নিমিত্ত উৎসর্গ হইবার বস্তু নহে । তাহারা যেন অন্ন বস্ত্রের জন্য কাহারো গলগ্রহ না হয়।"
আর সে কারণেই সামাজিক নানা প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে প্রথমে ভাগলপুর আর তার পরবর্তীকালে কলকাতায় তিনি শুরু করেছিলেন মেয়েদের স্কুল। মুসলিম মেয়েদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তাদের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করবার এক ব্যতিক্রমী প্রয়াসের অগ্রপথিকের নাম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বেগম নন, আভিজাত্যের মূঢ় মুখোশ ছেড়ে দিয়ে তিনি নেমে এসেছিলেন এই শহরের রাজপথে। গিয়েছেন গলিতে গলিতে। ঘরে ঘরে মানুষের কাছে আবেদন করেছেন মেয়েদের স্কুলে পাঠাবার জন্য। পেয়েছেন অজস্র উপেক্ষা অজস্র অপমান, জীবনে এবং মৃত্যুর পরেও। অবরোধবাসিনী এই বাংলার নারীদের সামাজিক স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে সংগঠিত আন্দোলন গড়ে তোলা, নারীদের ভোটাধিকার অর্জনসহ বহু সামাজিক কর্মকান্ডে তিনি ছিলেন সামনের সারিতে। কর্মময় সে জীবনের পরিসমাপ্তি ১৯৩২ এর ৯ ডিসেম্বর। স্কুল বাড়িতে কাজ করতে করতেই মধ্যরাত্রে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ।
তাঁর পথ ধরেই পরবর্তী সময়ে বহু মানুষ এগিয়ে এসেছেন নারীশিক্ষা প্রসারে। তিনি অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা, তিনি অনেকের পথপ্রদর্শক। আর সেই কারণেই আজ মেয়েদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের প্রতীক রোকেয়া।
আজ যখন তার শহরে ১২০ দিন আগে এক আত্মপ্রত্যয়ের আলোকে আলোকিত এক কন্যা সমাজকে নিজ অবদানে সমৃদ্ধ করার জন্য আত্মনিবেদন করতে গিয়ে নৃশংস মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে লড়াই শেষ করে, বিচারহীন ১২০ দিন পার করেও বহু অপ্রিয় প্রশ্ন উত্তর হীন থেকে যায় সে সময় মনে পড়ে রোকেয়ার অমোঘ উচ্চারণ।
" মাতা, ভগিনী, কন্যে! আর ঘুমাইও না- উঠ, কর্তব্য পথে অগ্রসর হও।"
Comments :0