Adani group

আদানিদের ব্যবসায়ে টাকা খাটাচ্ছে ইপিএফও

জাতীয়

আদানি গোষ্ঠীর সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে কর্মীদের ভবিষ্যনিধি তহবিল ( এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন)। শুধু করেছে না, আদানি গোষ্ঠীর মূলধনী কারবারে জালিয়াতির কারবার ফাঁস হবার পরেও ইপিএফও-র টাকা খাটছে আদানিদের ব্যবসায়ে। জীবন বিমা নিগম, স্টেট ব্যাঙ্কের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থার টাকা আদানিদের কারবারে বিনিয়োগ হয়েছে, এ কথা আগেই জানা গেছে। এবার দেখা যাচ্ছে ভারতের বৃহত্তম প্রভিডেন্ট ফান্ডের তহবিলও এই গোষ্ঠীর বাণিজ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। 
এলআইসি, এসবি আই ছাড়াও যে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার টাকা আদানির ব্যবসায়ে খাটছে, তার ইঙ্গিত মিলছিল। রবিবারও কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রশ্ন করেছিলেন, আর কাদের টাকা খাটছে? সোমবার ‘দি হিন্দু’ পত্রিকার প্রতিবেদনে টাকার অঙ্ক না বলা হলেও দেখা যাচ্ছে ইপিএফও-র টাকাও আদানিদের শেয়ারে খেটেছে। ২৭ কোটিরও বেশি সংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক-কর্মচারীর টাকা ইপিএফও-তে থাকে। তারা তহবিলের ১৫ শতাংশ টাকা বিনিয়োগ করে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডে (ইটিএফ)। শেয়ার বাজারে এনএসি নিফটি ৫০ কোম্পানিতে এই টাকার সিংহভাগ বিনিয়োগ করা হয়। বস্তুত বিনিয়োগের ৮৫ শতাংশই এই কোম্পানিগুলিতে বিনিয়োগ করা হয়। আদানি এন্টারপ্রাইজেস গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নিফটি ৫০ তালিকায় যুক্ত হয়েছে। ২০১৫-এর সেপ্টেম্বর মাস থেকে আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড নিফটি ৫০ তালিকায় রয়েছে। এর ঠিক একমাস আগেই  ইপিএফও ইটিএফ-এ টাকা বিনিয়েগের সিদ্ধান্ত নেয়। তখন ঠিক হয়েছিল ইপিএফও-র গ্রাহকরা যে বর্ধিত টাকা দেবেন, পরিভাষায় ইনক্রিমেন্টাল কনট্রিবিউশন, তার ৫ শতাংশ ইটিএফ-এ বিনিয়োগ হবে। ২০২২-এর মার্চ পর্যন্ত হিসাবে ইপিএফও-র ১.৫৭ লক্ষ কোটি টাকা ইটিএফ-এ খাটছে। ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আরো ৩৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই টাকা গ্রাহকদের নতুন জমা করা অর্থ থেকে বিনিয়োগ হবে। 
স্বভাবতই ইপিএফও’র এই টাকার বড় অংশই খাটানো হয়েছে আদানিদের কোম্পানিতে। আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজেড-এই বেশি টাকা খাটছে। সাত বছরের বেশি সময় ধরে ইপিএফও’র টাকায় আদানিদের শেয়ার কেনা হয়েছে। আদানি এন্টারপ্রাইজেসে টাকা খাটছে গত ছ’মাস ধরে। যেহেতু নতুন জমা পড়া অর্থের ১৫ শতাংশ নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে, টাকার অঙ্কও বিপুল। এখনও পর্যন্ত ইপিএফও-র পক্ষ থেকে এই টাকার অঙ্ক জানানো হয়নি। 
আদানিদের শেয়ারের মূল্যে ধস নামতে শুরু করেছে ২৪ জানুয়ারি হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশিত হবার পর থেকেই। এনএসই নিফটি ৫০-এ তালিকাভুক্ত আদানিদের শেয়ারের মূল্য দু’মাস কমেছে অর্ধেক, প্রায় ৫০ শতাংশ। ইপিএফও-র বিনিয়োগেও লোকসানের পরিমাণ ঠিক ততটাই। কিন্তু আদানিদের সংস্থায় বিনিয়োগ কমানোর, শেয়ার বিক্রি করার কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি ইপিএফও। 
ইপিএফও বিধিবদ্ধ সংস্থা। তার কেন্দ্রীয় ট্রাস্টি বোর্ড রয়েছে। ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের সকলে যে আদানির সংস্থায় টাকা খাটানো হচ্ছে, তা নিয়ে অবহিত ছিলেন না— একথা ইতিমধ্যেই প্রতিক্রিয়ায় জানা গেছে। আরেকটি গুরুতর সমস্যাও সামনে এসেছে। ইপিএফও’র টাকা শ্রমিক-কর্মচারীদের টাকা। তা থেকে তাঁরা বার্ষিক সুদ পান। সুদের হার ক্রমশ কমছে। গত বছর এই হার ঘোষিত হয়েছিল ৮.১ শতাংশ। তা ৪৫ বছরের সর্বনিম্ন। এখন শেয়ারে খাটানো টাকা থেকে লাভ যদি আরও কমে যায় তার কোপ পড়তে পারে সুদের হারে। 
আদানিদের সংস্থায় টাকা খাটানো অব্যাহত রাখার এই সংবাদ প্রকাশের দিনই শুরু হয়েছে ইপিএফও-র কেন্দ্রীয় ট্রাস্টি বোর্ডের বৈঠক। চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। সুদের হার স্থির হবে মঙ্গলবারই। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠকে আদানিদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা উঠবে। 
এদিন ইপিএফও’র টাকা আদানিদের কোম্পানিতে খাটার সংবাদ সামনে আসার পরে রাহুল গান্ধী টুইটে বলেছেন, এলআইসি’র টাকা আদানিতে, স্টেট ব্যাঙ্কের টাকা আদানিতে, ইপিএফও’র টাকা আদানিতে। ‘মোদানি’ কাণ্ড উন্মোচিত হবার পরেও জনগণের অবসর প্রকল্পের টাকা আদানিতে খাটানো হচ্ছে কেন? প্রধানমন্ত্রীজী, কোনও তদন্ত নেই, কোনও জবাব নেই, এত ভয় কেন? 
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, জনগণের কষ্টার্জিত টাকা লুট হয়ে গেছে আদানিদের সংস্থায় বিনিয়োগের নামে।
 

Comments :0

Login to leave a comment