বহু হাসপাতালে ন্যূনতম পরিকাঠামো নেই। পড়ে রয়েছে বিকল সরঞ্জাম। অথচ প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনায় এমন প্রতিষ্ঠানের নাম বহাল রয়েছে পরিষেবাদাতার তালিকায়।
১৮টি আধার কার্ড দিয়ে মাত্র ২জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছে উপভোক্তার তালিকায়। এমন অন্তত ৩৬টি নথিভুক্তি মিলেছে সরকারি তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থায়। আবার ৭টি আধার নম্বর দিয়ে ৪৭৬১ জনের নাম নথিভুক্ত হয়েছে!
কেবল একটি দু’টি নয়, আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা নিয়ে রিপোর্ট দিতে গিয়ে এমন গুচ্ছ গুচ্ছ অসঙ্গতির খোঁজ দিয়েছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল বা সিএজি। এই রিপোর্ট চলতি সপ্তাহে পেশ হয়েছে সংসদে। বহু প্রচারিত ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ কী অবস্থায়, বেরিয়ে পড়েছে রিপোর্টে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, একই মোবাইল বা অচল মোবাইল নম্বর থেকে বহু নাম নথিভুক্ত হয়েছে। একটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে একটি মাত্র মোবাইল নম্বরে নথিভুক্ত হয়েছে ৪৯ হাজার ৮২০টি নাম।
পশ্চিমবঙ্গ আবার প্রকল্প থেকে ২০১৯-এ সরে গিয়েছে। কিন্তু জাতীয় স্বাস্থ্য অথরিটিকে ৩১.২৮ কোটি টাকা ফেরায়নি। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রের থেকে এই টাকা পেয়েছিল রাজ্য।
সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং প্রকল্পের হিসেব পরীক্ষক সিএজি খতিয়ে দেখেছে আয়ুষ্মান ভারত-জন আরোগ্য প্রকল্প। সিএজি বলছে, ‘’১০ কোটি ৭৪ লক্ষ গরিব পরিবারকে প্রকল্পের আওতায় আনার লক্ষ্য প্রথমে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। ঠিক হয়েছিল ২০১১’র আর্থ সামাজিক জাত সমীক্ষার ভিত্তিতে উপভোক্তার তালিকা তৈরি হবে। কিন্তু উপভোক্তাদের মাত্র ২.০৮ কোটি নাম ওই তালিকা থেকে নেওয়া হয়েছে।’’
ফলাফল কী তা-ও জানিয়েছে সিএজি।
বিস্তর ভুল নাম, পরিবারের সদস্য সংখ্যার জায়গায় অবাস্তব উল্লেখ, জন্ম তারিখে উদ্ভট তথ্য- এমন একের পর এক অসঙ্গতি রয়েছে সরকারি তালিকায়। ঠিক হয়েছিল জাত সমীক্ষার তালিকার ভিত্তিতে ‘ম্যাচ কনফিডেন্স স্কোর’ তৈরি হবে। অর্থাৎ উপভোক্তা হওয়ার যোগ্যতা কার বেশি তৈরি হবে সেই ক্রমিক তালিকা। বাস্তবে এই তথ্য প্রযুক্তি জনিত উপভোক্তা নির্বাচন ব্যবস্থাপনা কাজেই লাগেনি। সিএজি বলেছে, এই বন্দোবস্ত একেবারেই অকার্যকরী।
বিজেপি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারি এই স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্পের সাফল্য নিয়ম করে প্রচার করছেন। কিন্তু পিষেবার কী অবস্থা তা উঠে এসেছে সিএজি’র রিপোর্টে।
প্রকল্প অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও পরিষেবাদাতার তালিকায় থাকবে। নিচের স্তরে পৌঁছানো হবে জটিল চিকিৎসার পরিকাঠামোকে। কিন্তু সিএজি বলছে, একের পর এক তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানে দেখা গিয়েছে যে চিকিৎসক নেই। পরিকাঠামো অযোগ্য। অপর্যাপ্ত সরঞ্জাম। অনেক জায়গায় সরঞ্জাম থাকলেও বেশিরভাগই বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে।
সিএজি রিপোর্টে উদ্বেগ বাড়বে নাগরিকদের। কারণ বলা হয়েছে, প্রকল্পে যে ন্যূনতম পরিষেবা মাপকাঠি ঠিক করা হয়েছে, অনেক স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে তা নেই। সুরক্ষা এবং স্বাস্থ্যবিধি জনিত মাপকাঠি পূরণ না করেও রয়ে গিয়েছে পরিষেবাদাতার তালিকায়।
আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা (এবি-পিএমজেএওয়াই) চালু হয় ২০১৮’তে। বলা হয়েছে গরিব এবং অত্যন্ত নিম্নবিত্ত পরিবারে বছরে ৫ লক্ষ টাকা টাকা পর্যন্ত বিনা নগদে কাগজপত্র ছাড়াই হাসপাতালে চিকিৎসার পরিষেবা মিলবে। ১০.৭৪ পরিবারকে আওতার আনার লষ্য থাকলেও তার ৭৩ শতাংশ এসেছে তালিকায়। যার মূলে ব্যবস্থাপনায় গুরুতর গলদকে চিহ্নিত করেছে সিএজি।
Comments :0