যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ। গাজা ভূখণ্ডকে কার্যত গুড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েলী জঙ্গি বিমান এবং কামানের গোলা। খাতায় কলমে গাজা শহর, খান ইউনিস, মাঘাজি ত্রাণ শিবিরে মুছে গিয়েছে ২৫ হাজারের বেশি প্রাণ। কেফিয়ে পরা হামাসকে পৃথিবীর বুক থেকে মুছে ফেলার চেষ্টার ছোট্ট কোল্যাটেরাল। সেই প্যালেস্তাইন পৌঁছে গিয়েছে এশিয়ান কাপের শেষ ষোলোতে।
গাজায় মৃতের তালিকায় অধিকাংশই মহিলা এবং শিশু। রয়েছে বহু কিশোর। ইজরায়েলী এফ-১৬'র ছোড়া মিসাইলে গুড়িয়ে যাওয়ার আগে সেই কিশোরদের বেডরুম জুড়ে থাকত মেসি, রোনাল্ডোর কাট আউট, সিআর-৭, নেইমার, ভিনিশিয়াসের ছাঁচে ফেলা নিয়ন রাঙা ফুটবল স্পাইক বুট। নিমেষের মধ্যে সব অতীত।
কিন্তু তারপরেও। জীবন মৃত্যুর সীমানা পেরিয়েও কিছু অবশিষ্ট থাকে, থেকে যায়। সেটা বেঁচে থাকার অদম্য জেদ, প্রতিস্পর্ধা। সেই প্রতিস্পর্ধা শিয়ালদহ স্টেশন হয়ে যাদবপুর টালিগঞ্জের রিফিউজি কলোনি ঘুরে কলকাতা লিগে ইস্টবেঙ্গলের জয়ে মশাল জ্বালায়। সেই প্রতিস্পর্ধা সিলকিয়ারার সুরঙ্গে বন্দী শ্রমিকদের কানে কানে বলে যায়, “বন্ধু, টিকে কিন্তু তোমায় থাকতেই হবে। বাঁচতেই হবে। অন্য কোনও রাস্তা কিন্তু খোলা নেই!”
এএফসি এশিয়ান কাপের মঞ্চে ঠিক সেটাই করে দেখিয়েছেন প্যালেস্তাইনের ফুটবলাররা। গ্রুপ স্তরের বেড়া ডিঙিয়ে পা রেখেছেন শেষ ষোলোর মঞ্চে। এবং এই লড়াই সার্থকতা দিয়েছে গাজার সেই তরুণ এবং কিশোরদের সাহাদতকে, বোমা বিস্ফোরণে বাড়ি চাপা পড়ে মরার আগেও যাঁরা আঁকড়ে থেকেছিলেন চামড়ার মোড়ক দেওয়া রাবারের গোলকটাকে।
ফুটবল এখানে শুধু নিছক খেলা নয়। এশিয়ান কাপের মঞ্চ থেকেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে যুদ্ধে জর্জরিত একটা গোটা দেশের জনগণ।
যদিও প্যালেস্তাইনের এই লড়াই মোটেও সহজ ছিলনা। গ্রুপ পর্যায়ের প্রথম ম্যাচে ইরানের কাছে ৪-০ গোলে হারতে হয় তাঁদের। কিন্তু তারপর থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় গোটা দল। সংযুক্ত আরব আমিরশাহির বিরুদ্ধে ১-১ গোলে ড্র করে তাঁরা। শেষ ম্যাচে হংকংকে ৩-০ গোলে হারিয়ে রাউন্ড অফ ১৬ পাকা করে প্যালেস্তাইন। ডাববাঘের জোড়া গোল এবং জায়েদ কুনবারের গুরুত্বপূর্ণ গোলের সুবাদে জয় নিশ্চিত করে তাঁরা।
এবার শেষ ১৬-র লড়াইতে প্যালেস্টাইনের সামনে কাতার। আগামী ২৯ জানুয়ারি, ভারতীয় সময় রাত ৯.৩০ মিনিটে মুখোমুখি হবে দুই দল।
কাতার বিশ্বকাপে পা রাখা দেশ। ফুটবল সিস্টেম বা ব্যবস্থাপনায় প্যালেস্তাইনের থেকে বহু যোজন এগিয়ে। সেই ম্যাচে খাতায় কলমে হয়ত ফুটবল পন্ডিতরা এগিয়েই রাখছেন কাতারকে। কিন্তু সব হিসেব কি অঙ্ক মেনে হয়? হার না মানা জেদের কি কোনও ভূমিকা নেই? তাহলে ১৯১১ সালে শিল্ড জিতল কি করে মোহনবাগান?
গোটা বিশ্বের আন্ডার ডগদের পতাকা শক্ত হাতে ধরে ২৯ জানুয়ারি মাঠে নামবে প্যালেস্তাইন। আরেকটা ইতিহাস তৈরির প্রত্যাশা নিয়েই টিভির পর্দায় চোখ রাখব আমরা।
Comments :0