TAPAN SEN AT GOPINATHPUR

বিজেপি মানে ‘সফেদ ঝুঠ’ জনসভায় বললেন তপন সেন

রাজ্য

ক্যাপশন : নিরসার গোপীনাথপুরে শ্রমিক জমায়েতের একাংশ।

দিল্লিতে যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা ডাকাত। ডাকাতিকে আইনসিদ্ধ করে কর্পোরেট পুঁজির পকেট ভরছে আর একদিকে দেশের সাধারণ মানুষকে লুটছে। এই রাজ্যে যারা ক্ষমতায় রয়েছে তারা ঘোষিত চোর। নিয়োগ, রেশন থেকে শুরু করে এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে চুরি করেনি। ওদের মন্ত্রী চুরির দায়ে জেলে। চোরের বিকল্প ডাকাত, ডাকাতের বিকল্প চোর হতে পারেনা। বিকল্প লালঝান্ডা। এবং চোর ডাকাতদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই জারি রেখেছে তারা। চোর এবং ডাকাত দুটোকেই তাড়ান। সামনের নির্বাচন দেশ বাঁচানোর নির্বাচন। চোর ডাকাতের কবল থেকে মুক্তির নির্বাচন। মানুষের বৃহত্তর প্রতিরোধের জোট গড়ে তুলে লড়াই দেবার দায়িত্ব শ্রমিক শ্রেণীকে গ্রহণ করতে হবে। সোমবার বরাকরে শ্রমিক কৃষককের সভায় এই আহ্বান জানান সিআইটিইউ’র সাধারণ সম্পাদক তপন সেন। বরাকর পথের সাথী লজের প্রাঙ্গণে উপচে পড়া সভায় তপন সেন ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ জেলা সাধারণ সম্পাদক প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরী, কৃষক নেতা প্রিয়ব্রত সরকার। সভাপতিত্ব করেন সুজিত ভট্টাচার্য। 
এদিন বরাকর নদের দুইপাড়ই লালপতাকায় আন্দোলিত ছিল। ওপারে ঝাড়খন্ডের কয়লাঞ্চল নিরসা মুগমা এলাকা। সিআইটিইউ’র ভারতের কোলিয়ারি মজদুর সভা (সিএমএসআই) এবং বিহার কোলিয়ারি কামগর ইউনিয়ন (বিসিকেইউ)-এর যৌথ আহ্বানে নিরসার গোপীনাথপুর ময়দানে সুবিশাল শ্রমিক সমাবেশ হয়। বরাকর এবং নিরসা গোপীনাথপুর দুই জায়গাতেই মুখ্য বক্তা ছিলেন তপন সেন। কাতারে কাতারে শ্রমিক মিছিল আছড়ে পড়ে সমাবেশ স্থলে। ধানবাদ জেলার চাসনালা থেকেই সেইল-এর কোলিয়ারি ডিভিশনের সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি শ্রমিক শামিল হয়েছিলেন। বাইক মিছিল হয়েছিল বিশাল। ১৯ নম্বর জাতীয় সড়ক উপচে পড়ে মানুষের ভিড়ে। সমাবেশে তপন সেন ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বংশগোপাল চৌধুরী, বিসিকেইউ সাধারণ সম্পাদক অরূপ চ্যাটার্জি, মানস চ্যাটার্জি প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন কার্তিক দত্ত। 
তপন সেন বলেন, বিজেপি মানে ‘সফেদ ঝুঠ’। সংসদে বাজেট ভাষণে অর্থমন্ত্রী নির্জলা মিথ্যা ভাষণ দিয়ে বলেছেন, ৫০ শতাংশ রোজগার বেড়েছে। অন্যদিকে সরকারি পরিসংখ্যান বলছে গত পাঁচ বছরে রেকর্ড পরিমাণ বেকারত্ব বেড়েছে। ১০০ দিনের কাজের আইন আধার লিংকের সাথে জুড়ে  দিয়ে দেড় কোটি থেকে ২ কোটি গ্রামীণ মজুরের কাজ কেড়ে নিয়েছে। ঋণ খেলাপি কর্পোরেট পুঁজির মালিকদের আইন করে ছাড় দিয়েছে। সাধারণ মানুষের গচ্ছিত হাজার হাজার কোটি টাকার আমানত পুঁজির মালিকরা মেরে দিয়ে ছাড় পায়, অন্যদিকে সাধারণ নাগরিক ব্যাঙ্কের ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে তার সম্পত্তি ক্রোক করে নেওয়া হয়। কৃষক সাড়ে ৫টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কর্পোরেট মজুতদার সেই আলু বিক্রি করে ২৫ টাকা কেজি দরে। রাষ্ট্র ও ধর্ম মিশিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বীষ ঢালছে। 
কয়লা শিল্পের শ্রমিকরা লড়াই দিয়ে করোনার সময় কমার্শিয়াল মাইনিং বিরোধী তিনদিনের সফল ধর্মঘট করে  কয়লাতে কমার্শিয়াল মাইনিং রুখেছেন। ১০০ শতাংশ বিদেশী বিনিয়োগের বিরুদ্ধে টানটান লড়াই দিয়েছেন। মোদী সরকার ন্যাশানাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন অনুযায়ী  কয়লা শিল্পের মতন গুরুত্বপূর্ণ শিল্প বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেবার জন্য এমডিও মডেল এবং রেভেনিউ শেয়ারিং মডেল এনেছে। কয়লা খনিতে বেসরকারি সংস্থা কয়লা উৎপাদন করবে, বিপণন  করবে। বিভাগীয় শ্রমিকরা উৎপাদনের বাইরে থাকবেন। তাদের লড়াই করার অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। সিআইএল-এর সাইনবোর্ডটুকু থাকবে, ভিতরে সবটাই বেসরকারি মালিকের লুট। চিনাকুড়ি-৩ নম্বর কোলিয়ারি লড়াই দিয়ে রুখেছেন। এখনও লড়াই জারি রয়েছে। কয়লাতে কোথাও এমডিও এবং রেভেনিউ শেয়ারিং করতে দেবো না। 
সংগ্রামই হচ্ছে একমাত্র পথ। রামমন্দির উদ্বোধন করে সাম্প্রদায়িক শক্তি নজর ঘুরিয়ে দিতে চেয়েছিল। মানুষ লড়াই ছাড়েন নি। মন্দির উদ্বোধনের চারদিন পরই ২৬ তারিখ দেশের দেড় লক্ষের বেশি মানুষ ১৭টি রাজ্যে ট্রাক্টার মিছিল সাইকেল মিছিল করেছেন। তার দুইদিন পরে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, গুজরাট ,মহারাষ্ট্রে পথে নেমেছিলেন। 
১৬ তারিখ দেশব্যাপী ধর্মঘট হবে। তার আগে অনাচারের জবাব দেবার জন্য ১৩ তারিখ হবে আইন অমান্য কর্মসূচী। সন্দেশখালির মতন ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। সারা রাজ্যে প্রতিবাদ হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের সংরক্ষণ দিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। আমাদের নেতাকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে। লড়াই থামেনি। ১৩ তরিখ প্রতিবাদের তুফান তুলুন।
 

Comments :0

Login to leave a comment