বছরে দু’কোটি চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন। নির্বাচনী প্রচারের সময় দেশের সর্বত্র বলেছিলেন ক্ষমতায় এলে বছরে দু’কোটি করে পাঁচ বছরে দশ কোটি চাকরির বন্দোবস্ত করবেন। অর্থাৎ পরবর্তী নির্বাচনের আগে মোদীর চেষ্টায় দেশ বেকারমুক্ত হয়ে যাবে। বেকার যুবক-যুবতীদের ভুল বুঝিয়ে তাদের সঙ্গে বেইমানি করলেন। ক্ষমতা দখলের পর যখন চতুর্দিক থেকে চাকরি দাও চাকরি দাও বলে রব উঠতে থাকে তখন অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন মোদী বছরে দু’কোটি চাকরি দেবার যে কথা ভোটের আগে বলেছিলেন সেটা মোটেই প্রতিশ্রুতি ছিল না, সেটা ছিল আসলে ‘জুমলা’। অমিত শাহ ঘুরিয়ে স্বীকার করলেন নরেন্দ্র মোদী দেশের যুব সমাজের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখিয়ে ভোট আদায় করেছেন। তারপর ক্ষমতা দখল করে তাদের কাঁচকলা দেখিয়েছেন।
এক অর্থে অমিত শাহ রাখঢাক না রেখে সত্যি কথাটাই বলে দিয়েছেন। চাকরি দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর্মহীন মানুষের মাথায় ঘোল ঢাললেও চাকরি দেবার কোনও পরিকল্পনাই তাদের নেই বা ছিল না। আসলে মোদী-শাহরা নয়া উদারনীতির যে ঘরানাকে অনুসরণ করে অর্থনীতি পরিচালনা করেন তার ফোকাল পয়েন্টে কর্মসংস্থান সৃষ্টি থাকে না, থাকে সর্বোচ্চ মুনাফা সৃষ্টি। শ্রমখাতে বা মজুরিখাতে ব্যয় যত কমানো যায় মুনাফা তত বাড়ে। তাই অর্থনীতিকে অনেক বেশি পুঁজি নিবিড় করে যথাসম্ভব কম কর্মী দিয়ে বেশি মুনাফার চেষ্টা হয়। শ্রম নিবিড় অর্থনীতির দিক মোড় ঘোরানো হলে অনেক বেশি মানুষের কাজের সুযোগ বাড়ে বটে তাতে মুনাফা কমে যায়, জিডিপি বৃদ্ধির হার তুলনামূলকভাবে কম থাকে এবং অর্থনীতির বিকাশ ত্বরিত গতিতে হয় না। মোদীনোমিক্সের সার কথা হলো বিকাশের হার উচ্চ করতে হবে এবং কর্পোরেট পুঁজির মুনাফা সর্বোচ্চ করতে হবে। তাতে কত কর্মসংস্থান হলো দেখার দরকার নেই। তাছাড়া জনবহুল দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি যত কম হবে ততই মজুত শ্রমবাহিনী স্ফীত থেকে স্ফীততর হবে। বেকার বা কর্মহীনের সংখ্যা যত বাড়বে ততই শ্রমের বাজারে প্রতিযোগিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। কর্মপ্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা যত বাড়বে মজুরির স্তর ততই কমতে থাকবে। মজুরি যত কমবে মুনাফা তত বাড়বে। কাজের বাজারে যত হাহাকার হবে ততই বেকাররা কম মজুরিতে বেশি শ্রম দিতে বাধ্য হবে এবং যাবতীয় শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিত থাকাকে মেনে নেবে। মোদী-শাহরা তাদের নয়া অর্থনৈতিক বন্দোবস্তে অর্থনীতিকে অসংগঠিত ও স্বরোজগারের দিকে ঠেলে দিয়েছে যেখানে একজন উচ্চ শিক্ষিত দক্ষ যুবক ন্যূনতম মজুরিও জোটাতে পারে না। তাই সামান্য ডোমের অস্থায়ী চাকরির জন্য পিএইচডি, স্নাতকোত্তর, ইঞ্জিনিয়ার সহ লক্ষ লক্ষ আবেদন জমা পড়ে। মোদী জমানায় কর্মক্ষেত্রে এটাই নির্মম বাস্তবতা।
মোদীরা মনে মনে যেটাই চান না কেন ২০১৬ সাল থেকে দেশের বিকাশের হার ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ফলত কর্মসংস্থান সৃষ্টির কোনও প্রশ্নই থাকে না। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে ফাঁস হওয়া সরকারি সমীক্ষা রিপোর্ট জানান দেয় স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময়ের সর্বোচ্চ বেকারির হার মোদী জমানায়। পরিস্থিতি বুঝে সরকার সেই রিপোর্টকে বাতিল বলে ঘোষণা করে। তারপর থেকে বেকারির তথ্য সংগ্রহ করাই সরকার পরিত্যাগ করেছে। অর্থাৎ ভয়াবহ বেকারিত্বের হিসাব দিয়ে সরকার নিজের পায়ে নিজে কুড়োল মারতে চায়নি।
ভারতে বর্তমান জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার অনুযায়ী বছরে গড়ে দু’কোটি মানুষ নতুন করে শ্রমের বাজারে যুক্ত হয়। তাই বছরে দু’কোটি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে মেন অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা জরুরি। বাস্তবে মোদী জমানায় গত সাড়ে ৯ বছরে গড়ে দু’লক্ষ নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি হয়নি। তাই রুজি রোজগারের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হাড়ে হাড়ে আঁচ পাচ্ছেন মোদী-শাহরা। তাই লোক ঠকানোর নয়া কৌশল নিয়েছেন। রোজগার মেলার নামে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ফের ভাঁওতা দিতে শুরু করেছেন। আর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ২০৩০ সালের মধ্যে নাকি ২৫-৩০ কোটি কাজ সৃষ্টি হবে।
Comments :0