Bhupesh Baghel

সেই চেনা ছকেই ভোটের মুখে বাঘেলকে ফাঁসাতে তৎপর ইডি

জাতীয়

 প্রথম পর্বের নির্বাচনের চারদিন আগে তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে ছত্তিশগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেলকে নিশানা করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। তাঁকে ফাঁসাতে একটি বেটিং অ্যাপ সংস্থা সব মিলিয়ে ৫০৮ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছে বলে শুক্রবার দাবি করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বস্তুত, এক দালালের মুখের কথার ভিত্তিতে মুখ্যমন্ত্রী বাঘেলের বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ তোলা হলো ঠিক ভোটের আগেই! এই ঘটনার আগেই অবশ্য ইডি, সিবিআই কিংবা আয়কর দপ্তরকে বিজেপি’র ‘প্রথম সারির যোদ্ধা’ কিংবা ‘প্রচারক’ বলে অভিযোগ করেছিল কংগ্রেস। এমনকি এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের ভয় দেখানো হচ্ছে যাতে তাঁরা বিজেপি-তে যোগ দেন বলেও অভিযোগ করা হয় কংগ্রেসের তরফে।
এবার ছত্তিশগড়ে ক্ষমতায় ফিরে আসার নানা কূটকৌশলে ব্যস্ত বিজেপি। একারণেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ বার বার গিয়ে প্রচারে ঢেউ তোলার চেষ্টা করছেন। মূলত মিথ্যার ওপর আশ্রয় করেই প্রচার চালাচ্ছেন। এরপরেও রাজনৈতিকভাবে এঁটে উঠতে না পেরে তদন্তকারি সংস্থাকে হাতিয়ার করে বিজেপি ঘায়েল করতে চাইছে বাঘেলকে। সম্ভবত সে কারণেই ভোটের মুখে বেটিং অ্যাপ সংস্থার বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ সামনে আনা হল মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। ওই দালাল অসীম দাসকে গ্রেপ্তার করেছে ইডি। তাঁর কাছে নগদ ৫.৩৯ কোটি টাকা পাওয়া গিয়েছে বলে দাবি করেছে তদন্তকারি সংস্থাটি। সেই অসীম দাসই নাকি জেরার মুখে মহাদেব বেটিং অ্যাপ সংস্থা দফায় দফায় ৫০৮ কোটি টাকা বাঘেলকে ঘুষ দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন! এমনিতে মহাদেব বেটিং অ্যাপ এবং তার মালিকের বিরুদ্ধে অর্থ নয়ছয়ের (মানি লন্ডারিং) তদন্ত শুরু করেছে ইডি।
তদন্তকারি সংস্থার পক্ষ থেকে এদিন এমন দাবিও করা হয়েছে, ‘ধৃত অসীম দাসের ফোনের ফরেন্সিক পরীক্ষা করে এবং জনৈক শুভম সোনির পাঠানো ই-মেল খতিয়ে দেখেই ভূপেশ বাঘেলকে নিয়মিত অর্থ জোগানের তথ্য হাতে এসেছে তাদের কাছে। এখনও পর্যন্ত মহাদেব অ্যাপ সংস্থা বাঘেলকে সব মিলিয়ে ৫০৮ কোটি টাকা দিয়েছে।’ তবে অভিযোগ হাওয়ায় ভাসিয়ে দেওয়া হলেও ইডি জানাচ্ছে বিষয়টি এবার তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত শুরুর আগেই ভোটের আগে কংগ্রেসকে বিপাকে ফেলতে এমন অভিযোগ ছড়িয়ে দেওয়া হলো বলে অভিযোগ। এই কারণেই কংগ্রেস তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে বিজেপি’র প্রচারক বলে কটাক্ষ করেছে।
কংগ্রেস সহ বিরোধীরা প্রথম থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির অতি তৎপরতা নিয়ে অভিযোগ করে আসছে। বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে এই কৌশলই নিয়ে চলছে বিজেপি বলেও অভিযোগ। শুধু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ কিংবা বিজেপি’র সমালোচনা করলেই নয়, আদানি গোষ্ঠী নিয়ে মুখ খুললেও এখন নিস্তার নেই। হয় আয়কর হানা নতুবা ইডি, সিবিআই তদন্ত শুরু হয়ে যায় বিরোধী নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে। যেকোনও নির্বাচনের আগে এই তদন্তের মাত্রা আরও বৃদ্ধি পায়। একারণেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারি সংস্থাগুলি এবং আয়কর দপ্তরকে বিজেপি ‘সামনের সারির যোদ্ধা’ বলে মন্তব্য করতে দ্বিধা করেনি কংগ্রেস।
প্রাথমিকভাবে রাজস্থানের একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেসের তরফে শুক্রবার ওই তির্যক মন্তব্য করা হয়। পরে বাঘেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর বিষয়টি আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার রাজস্থানের দুর্নীতি দমন শাখা এক ইডি অফিসার এবং তাঁর সহকারিকে ঘুষ নেওয়ার দায়ে হাতেনাতে ধরে ফেলে। চিট ফান্ড সংক্রান্ত একটি তদন্তে আপস-মীমাংসার বিনিময়ে তাঁরা ১৫ লক্ষ টাকা ঘুষ নিচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনা উদ্ধৃত করে এদিন কংগ্রেস সদর দপ্তরে এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের অন্যতম মুখপাত্র পবন খেরা অভিযোগ করেন, ‘‘যাঁরা দুর্নীতি বিরুদ্ধে তদন্ত করছেন তাঁরাই মীমাংসার অজুহাতে ঘুষ নিচ্ছেন! একটা চিট কাণ্ডের তদন্তেই সামান্য মিটমাট করিয়ে দেওয়ার নামে ঘুষ নেওয়া হচ্ছে ১৫ লক্ষ টাকা। মোদী সরকারের উচিত ইডি’র কর্তাদের ঘুষের রেটচার্ট প্রকাশ করা। সাধারণ তদন্তকারীই যদি ১৫ লক্ষ টাকা নেন তাহলে আরও মাপের আধিকারিক কত টাকা নেবেন?’’ এরপরেই তিনি বলেন, ‘‘ইডি, সিবিআই এবল আয়কর দপ্তর বিজেপি’র প্রতচারক হয়ে উঠেছে। এদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিরোধী নেতাদের হাতিয়ার।’’ এরপরেই খেরা অভিযোগ করেন, ‘‘যতদিন কেউ বিরোধী নেতা, ততদিন তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত। আর সেই তিনিই বিজেপি-তে যোগ দিলে স্বচ্ছ, সৎ হয়ে যান। আমাদের আবেদন মোদী সরকারের কাছে যে আপনারা তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করুন, তাদের অসহায় করে দেবেন না। কংগ্রেসও চায় ভয়ডরহীন এবং নিরপেক্ষতার সঙ্গে কাজ করুক তদন্তকারি সংস্থাগুলি।’’ খেরা অভিযোগ করেন, ‘‘অ-বিজেপি শাসিত রাজ্যে তদন্তকারি সংস্থাগুলিকে ‘প্রথম সারির যোদ্ধা’ হিসাবে ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের হুমকি দিচ্ছে, হেনস্তা করছে। বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ তদন্তকারী সংস্থাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।’’
এদিকে, বিরোধী শাসিত তামিলনাডুতে এদিন অতি সক্রিয়তা দেখিয়েছে আয়কর দপ্তর। রাজ্যের মন্ত্রী ই ভি ভেলুর স্গে সংশ্লিষ্ট নানা জায়গায় হানা দেন আয়কর অফিসাররা। একারণেই রাজ্যের আরেক মন্ত্রী তথা ডিএমকে নেতা উদয়নিধি স্ট্যালিন অভিযোগ করেছেন যে, ইডি কিংবা আয়কর দপ্তর বিজেপি’র রাজনৈতিক শাখা হিসাবে কাজ করছে। এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালানো হবে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
 

Comments :0

Login to leave a comment