ASSAM CHILD MARRIAGE

বাল্য বিবাহেও ধর্মের ভাগ আসামে! জেলে মুসলিমরা

জাতীয়

ASSAM CHILD MARRIAGE

দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত দে 

লক্ষ্য ছিলেন মুসলিমরা, প্রচারও ছিল যে বাল্য বিবাহ শুধু মুসলিমরাই করে। পদক্ষেপের নামে মূলত আসামের মুসলিমদেরই লক্ষ্য হিসেবে বেছেছে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। গত ২৩ জানুয়ারি সিদ্ধান্তের পরে বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালাতে শুরু করে আসাম পুলিশ।

এর মধ্যেই বাল্য বিবাহের অভিযোগে ১,৮০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আসাম সরকার। শুক্রবার সকালে নিজেই টুইট করে সে কথা জানান বিশ্বশর্মা। আপার আসামে বহু জেলায় বাল্য বিবাহের হার অনেক বেশি। অভিযোগ, সেখানে ইচ্ছে করেই সংখ্যা চেপে দিচ্ছে বিজেপি সরকার। কারণ এই এলাকায় হিন্দুদের সংখ্যা বেশি।

২৩ জানুয়ারি আচমকাই রাজ্য জানায় যে ১৪ থেকে ১৮ বছরের নিচে কোনও কিশোরীকে বিয়ে করলে সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পকসো আইনে মামলা করা হবে। ধরপাকড়ও শুরু করে আসাম পুলিশ। বিবাহিত পুরুষদের গ্রেপ্তার করা চলছে। ছড়িয়েছে শঙ্কা। রাজ্যের বহু অংশই বলছে, বাল্য বিবাহ অপরাধ। ব্যবস্থা নেওয়াও দরকার। কিন্তু এটি তার পথ নয়। রোজগেরে সদস্যের গ্রেপ্তারির ফলে অনেক গরিব পরিবার আর্থিক অনিশ্চয়তার মুখে। 

সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক সুপ্রকাশ তালুকদার বলেছেন, ‘‘আসামের সমাজে বাল্য বিবাহ অনেকদিনের সমস্যা। সিপিআই(এম) বাল্য বিবাহ রোখার জন্য নানা আন্দোলন, সমাজিক সচেতনতা মূলক কাজে জড়িত। গ্রামে গ্রামে সারা ভারত মহিলা সমিতি নানা কাজ করছে। কিন্তু বিজেপি সরকার যেটা করছে সেই পদ্ধতি সঠিক নয়।’’ 

তালুকদারের ব্যাখ্যা, ‘‘মুসলিমদের লক্ষ্য বানাতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। কিন্তু দেখা গেছে শুধু মুসলিমরা নয়, বহু অংশে হিন্দু বা উপজাতিরা বাল্য বিবাহ করেছে। যারা বিবাহিত, তাদের পকসো আইনে ধরে নিয়ে যাওয়া সামাজিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিবাহিত মহিলা বা সেই পুরুষটির কী হবে পরিষ্কার নয়। সেই মহিলাটির সামাজিক অবস্থানও প্রশ্ন চিহ্নের মুখে পড়ছে।’’ 

বাল্য বিবাহকে কোনও ধর্মীয় অংশে সমস্যা হিসেবে দেখানোর প্রচার যে ভুল বোঝা যাচ্ছে। সমস্যা সামাজিক এবং অর্থনৈতিক। দরিদ্র পরিবারেই এই প্রবণতা বেশি। কোভিডৃর সময় সারা দেশে এই প্রবণতা বেড়েছে। বিজেপি এবং আরএসএস’র ধারাবাহিক প্রচার হলো, কম বয়সে বিয়ে করে বেশি সন্তানের জন্ম হয় মুসলিম পরিবারে। ২০১১’র শেষ জনগণনা যদিও দেখিয়েছে জনংখ্যা বৃদ্ধির হার সবচেয়ে দ্রতগতিতে কমছে মুসলিমদের মধ্যেই। জাতীয় পরিবার ও স্বাস্থ্য সমীক্ষার তথ্যেও এই বক্তব্যে সায় দিচ্ছে।   

মোট ৪০০৪টি মামলা রুজু হয়েছে বলে এদিন জানান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা। সব থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে ধুবরি জেলা থেকে, প্রায় ৩৭০টি মামলা রুজু হয়েছে। তারপর হোজাই ২৫৫টি ও মোরিগাঁওতে ২২৪টি ও কোকরাঝাড় থেকে ২০৪টি ও নলবাড়ি থেকে ১৭১টি অভিযোগ এসেছে। 

বিভিন্ন অংশই বলছে যে বেছে বেছে মুসলিম প্রধান অঞ্চলে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। কাজি, মোল্লাদেরও থানায় ডেকে শাসাচ্ছে পুলিশ। যদিও মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মার দাবি এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনও নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে আক্রমণের লক্ষ্য করা হচ্ছে না। বিরোধী বামপন্থীরা সরাসরিই বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অসত্য। 

এর আগে নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি এবং নাগরিকত্ব আইনের পর্বে আসামের বিজেপি সরকার সে রাজ্যের মুসলিমদেরই সরাসরি আক্রমণ করেছিল। নানা ভাবে হেনস্তা করা হয়েছিল তাঁদের। এমনকি দিনের পর দিন তাঁদের ডিটেনশন ক্যাম্পেও রাখা হয়। এবার বাল্য বিবাহ রোখার নামে একই ভাবে সেই মুলমিদেরই আক্রমনের ছক কষেছে হিমন্ত বিশ্বশর্মার সরকার। 

তালুকদার বলছেন, ‘‘বাল্যবিবাহের রোখার ওপর জোর দেওয়ার জন্য সরকারের প্রয়োজন সঠিক রূপরেখা তৈরি করা।  সেটা আসামের বিজেপি সরকার এখনও করেনি। ফলে সেই সিএএ বা এনআরসির মতো একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’’ 

 

Comments :0

Login to leave a comment