Congress kashmir

প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের অফিসার সেজে কাশ্মীর সফর, কেন্দ্রকে প্রশ্ন কংগ্রেসের

জাতীয়

Congress kashmir

গুজরাটের প্রতারক কীভাবে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের একজন আধিকারিকের পরিচয় দিয়ে কাশ্মীর উপত্যকায় বার তিনেক সরকারি সফর করলেন, গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সারলেন, তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে দেশে। কোন প্রভাবশালীর মদতে ভুয়ো পরিচয় দিয়ে কিরণ ভাই প্যাটেল ৬ মাস ধরে ঘুরে বেড়ালেন, উঠছে সেই প্রশ্নও। এমনকি ১০ দিন আগে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলেও কেন গোপন রাখা হলো এতদিন, সেকথাও চলে আসছে সামনে। গোটা ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা শনিবার বলেছেন, ‘‘কেউ মোদী সরকারকে প্রশ্ন করলে তাঁকে দেশবিরোধী বলে তকমা সেঁটে দেওয়া হয়। আর একজন ভুয়োকে সরকারি আতিথেয়তার পাশাপাশি চূড়ান্ত পর্যায়ের নিরাপত্তা দেওয়ার মধ্য দিয়ে কোন ধরনের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করছে মোদী সরকার?’’ ন্যাশনাল কনফারেন্স’র সহ সভাপতি ওমর আবদুল্লা বলেছেন, ‘‘আমার সহকর্মীরা বার বার অনুরোধ জানিয়েও নিরাপত্তা পান না। অথচ একজন ভুয়ো ব্যক্তিকে যাবতীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হলো কোনওরকম যাচাই না করেই!’’ আবার এই ঘটনাকে ঘিরে প্রশাসনিক মহলে একে অপরকে দোষারোপের পালাও শুরু হয়ে গিয়েছে। একে অপরের ঘাড়ে দোষারোপে ব্যস্ত নিজেদের দায় এড়াতে।

গুজরাটের প্রতারক প্যাটেলের জন্য জেড প্লাস নিরাপত্তা, এসইউভি গাড়ি, পাঁচ তারা হোটেলে সরকারি আতিথেয়তার ব্যবস্থা করেছিল জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। প্যাটেল নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের কৌশল ও প্রচার সংক্রান্ত বিভাগের অতিরিক্ত অধিকর্তা হিসাবে পরিচয় দিয়েছিলেন। এই মার্চে কাশ্মীরের সফরের আগেও তিনি দু’বার একই পরিচয়ে ঘুরে গিয়েছিলেন উপত্যকায়। শুধু ঘুরতে যাওয়া নয়, একগুচ্ছ প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন প্যাটেল। তাতেও কেউ কোনও সন্দেহ প্রকাশ করেননি। আধা সামরিক এবং পুলিশ বাহিনী বেষ্ঠিত প্যাটেল উপত্যকার বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করেন। বাদগামের দুধপাতরিতে বরফের মধ্যে বহুক্ষণ হেঁটে বেড়িয়েছেন— এসব ছবি তিনি আবার টুইটারে পোস্টও করেন। প্রশাসনকে জানান, গুজরাটের পর্যটকরা যাতে আরও বেশি সংখ্যায় দুধপাতরিতে আসেন, সেবিষয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগ নেবেন তিনি।

তবে সন্দেহ দেখা দেয়, দু’সপ্তাহের মধ্যে আবার কাশ্মীর ভ্রমণে যাওয়ার। সেবারও এক আইএএস পদমর্যাদার এক অফিসার কাশ্মীর প্রশাসনকে প্যাটেলের নিরাপত্তা এবং আতিথেয়তার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। তবে এবার টনক নড়ে প্রশাসনের। গোয়েন্দা দপ্তর থেকে সতর্ক করা হয় প্যাটেলের বিষয়ে। এরপর তাঁর যাবতীয় নথি পরীক্ষা নিরীক্ষা করে পুলিশকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া হয়। একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতারককে বুঝতে না পারার দায় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই পুলিশ অফিসারের ঘাড়ে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ চলছে। অথচ একজন প্রতারক নিজেকে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের অফিসার হিসাবে পরিচয় দিচ্ছে এবং তাঁর নিরাপত্তা, আতিথেয়তার ব্যবস্থার নির্দেশ দিচ্ছেন এক সরকারি অফিসার, সেবিষয় খতিয়ে দেখা হলো না। শুধু তাই নয়, প্যাটেলের গ্রেপ্তারের খবরও অজ্ঞাত কারণে দীর্ঘদিন গোপন করে রাখা হলো। তাঁর গ্রেপ্তারের খবরও অপ্রকাশ্যই থাকতো যদি না বিচারক তাঁকে বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠাতেন। এটাও স্পষ্ট নয় যে, গ্রেপ্তারের দিনই তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে কী এবিষয়ে গাফিলতি দেখানো হয়েছে।

জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের একাংশ মনে করছে, একজন সরকারি আধিকারিকের সফরকে ঘিরে একটা পদ্ধতি মেনে চিঠি চালাচালি হয়। প্রথমে মুখ্যসচিব, তারপর পুলিশের ডিজি এবং এডিজি’র কাছে চিঠি যায় আতিথেয়তা থেকে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য। এক্ষেত্রে এসব কিছুই হয়নি। ভুয়ো পরিচিতিপত্র নিয়ে তিনবার কাশ্মীর ঘুরে গেলেও গোয়েন্দাদের চোখে ধরা পড়ল এতদিন পর কেন, সেই প্রশ্নও উঠছে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরকে ব্যবহার করে গুজরাটের একজন প্রতারক এতদিন ধরে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়ালেন কীভাবে, তাও সন্দেহের অবকাশ ঘটায়।

কংগ্রেস মুখপাত্র খেরার অভিযোগ, কাশ্মীরের মতো একটি স্পর্শকাতর এলাকায় প্রধানমন্ত্রী দপ্তরের আধিকারিকের পরিচয় দিয়ে একজন ঘুরে বেড়াচ্ছেন, জেড প্লাস নিরাপত্তা পাচ্ছেন, আর প্রশাসন জানতে পারছে না? সরকারের বলা উচিত এই গাফিলতির জন্য কার পদত্যাগ করা উচিত।

Comments :0

Login to leave a comment