RANAGHAT TMC BJP

রানাঘাট: তৃণমূল প্রার্থীকে এখনও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রেখেছে বিজেপি!

রাজ্য লোকসভা ২০২৪

এবারের লোকসভা ভোটে প্রার্থী তৃণমূলের। বিধানসভায় যদিও সদস্য তিনি বিজেপি’র। প্রার্থী হওয়ার পরও মুকুটমণি অধিকারিকে দলের সাংগঠনিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রেখে দিয়েছে বিজেপি! 
রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার নিজেও সেই গ্রুপে রয়েছেন। একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়তে থাকায় দু’দলের পারস্পরিক সমঝোতা ফের প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ‘গণশক্তি’ যদিও ভিডিও’র কারিগরি সত্যতা যাচাই করেনি। 
তবে এমন যোগসাজশে মোটেই আর অবাক হচ্ছেন না রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বাসিন্দারা। বরং, তৃণমূলকে শায়েস্তা করতে চেয়ে বিজেপি’কে ভোট দিয়ে হতাশ বড় অংশ। 
ভিডিও-টিতে একটি মোবাইলের পর্দায় পর পর দৃশ্য ফুটে উঠছে। স্ক্রিনসেভারে তারিখ ৫ এপ্রিল। তৃণমূল মুকুটমণি অধিকারীকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে প্রায় এক মাস আগেই। ভিডিও-তে দেখা যাচ্ছে পদ্ম প্রতীক দেওয়া বিজেপি’র ‘রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম ৫ মণ্ডল’ লেখা হোয়াটঅ্যাপ গ্রুপ। স্ক্রল করলে মিলছে মুকটমণি অধিকারীর নাম। আবার রয়েছে বিপক্ষে বিজেপি’র প্রার্থী এবং রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ অধিকারীর ছবি ও নাম। রয়েছে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের নাম। 


মুকুটমণি অধিকারি রানাঘাট দক্ষিণ কেন্দ্রে বিজেপি’র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন ২০২১’র বিধানসভা ভোটে। পেশায় সরকারি চিকিৎসক হওয়ায় সেবার মনোনয়ন পত্র জমা করা নিয়ে সমস্যা হয়। রাজ্য সরকার অনুমতি না দেওয়ায় মামলা গড়ায় আদালতে। শেষে পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে লড়েন ভোটে। এই মুকুটমণি, খাতায় কলমে বিজেপি বিধায়ক হয়েও লোকসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন। মুকুটমণিকে দেখা গিয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ-কে সমর্থন জানাতে। ‘মমতা চোর’ লেখা গেঞ্জি পরেও হেঁটেছেন। আবার দাঁড়িয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে। ৭ মার্চ তাঁকে নারীদিবসে তৃণমূলের মিছিলে হাঁটতে। তিনদিনের মধ্যে প্রার্থী পদে নাম ঘোষণা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে স্ত্রীকে নির্যাতন করার। বিজেপি এখন সে কথা বললেও বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করার রাস্তায় হাঁটছে না।
রানাঘটে ফিসফাস শোনা যাচ্ছে, বিজেপি’র আসলে দু’জন প্রার্থী। খাতায় কলমে জগন্নাথ সরকার প্রার্থী। কিন্তু বিজেপি’র অবস্থা এবার ভালো নয়। দল ভাঙছে। হাওয়া খারাপ। তাই বিজেপি মুকুটমণিকে তৃণমূলে পাঠিয়েছে। জিতলে ফিরবেন বিজেপি’তে।
বিজেপি’র প্রার্থী জগন্নাথ সরকারকে নিয়ে অভিযোগ রয়েছে। তাঁরও তৃণমূল যোগ রয়েছে বলে প্রচার রয়েছে। তৃণমূলের শিক্ষক ইউনিয়নের সদস্য ছিলেন। তাঁকে না পেয়ে ‘নিরুদ্দেশ’ লেখা পোস্টার পড়েছে। গতবার জয়ী হয়ে সাংসদ হলেও বিজেপি’র বিভিন্ন স্তরে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে। বিক্ষুব্ধ বিজেপি কর্মীদের অভিযোগ কল্যাণী এইমস-এ চাকরি দেওয়ার নাম করে টাকা নেওয়ায় যুক্ত সাংসদ। তৃণমূলের একটি অংশের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ রাখার অভিযোগও রয়েছে। কিছুদিন আগে মুকুটমণির বিরুদ্ধে মানহানির মামলাও করেছেন। আবার একই গ্রুপে থেকে গিয়েছেন। 
বিজেপি’র নদীয়া জেলা স্তরের এক কর্মী আবার কমেন্টে লিখেছেন, মুকুটমণি দল ছেড়েছেন। কিন্তু দল হয়তো ওনাকে ছাড়েনি। তাই গ্রুপে রয়েছেন। 
রানাঘট কেন্দ্রে সিপিআই(এম) প্রার্থী এবং রাজ্য কমিটির সদস্য অলকেশ দাসের প্রতিক্রিয়া, ‘‘তৃণমূলকে শায়েস্তা করতে একাংশ বিজেপি-কে ভোট দেয়। এই অংশ হতাশ, যন্ত্রণাক্লিষ্ট। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ বলে নয়, এই যোগাযোগ সর্বত্র। জনতা বলছে, বিজেপি-তো লোক পাঠাচ্ছে তৃণমূলে, নিজেদের প্রার্থীর ওপর ভরসা নেই বলে। জনতা এই নীতিহীনতার বিপক্ষে।’’
সিপিআই(এম) প্রার্থী বলছেন, ‘‘পঞ্চায়েতে জনতা রায় দিয়েছিলেন বামপন্থীদের পক্ষে। বিজেপি এবং তৃণমূল, দুই লুটেরাকেই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন বড় অংশ। এবারও তার জন্য তৈরি হচ্ছে জনতা।’’

Comments :0

Login to leave a comment