PM Modi

দল ভরিয়েছেন ঘোটলাবাজে এখন দুর্নিতীর বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিচ্ছেন মোদী

জাতীয় লোকসভা ২০২৪

এ যেন হিন্দি প্রবাদ ‘উলটা চোর কোতওয়াল কো ডাঁটে’-র বাস্তব উপস্থাপনার সাক্ষী হওয়া। বৃহস্পতিবার রাজস্থানে ফের সেটাই মঞ্চস্থ করলেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন ঢোলপুর করৌলির সভা থেকে বিরোধীদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে নাটকীয় ঢঙে বললেন, মোদীকে যতই গালি দাও, দুর্নীতিগ্রস্তদের জেলে যেতেই হবে। খোদ মোদীর অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণের স্বামী অর্থনীতবিদ পরাকলা প্রভাকর প্রকাশ্যে বলে চলেছেন, নির্বাচনী বন্ড দুনিয়ার ইতিহাসে সবথেকে বড় রাজনৈতিক দুর্নীতি। অথচ তা নিয়ে একটি শব্দও খরচ করছেন না মোদী। উলটে বিরোধীদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে দেগে দিচ্ছেন নিজের হাতে থাকা ইডি-সিবিআইকে ব্যবহার করে। আগে আজমীরের সভা থেকে রামনবমীকে নিয়ে অশান্তির উসকানি দিয়েছিলেন। এদিন ঢোলপুরের সভা থেকেও একই রকম উসকানি দিয়েছেন। 
সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এদিন টুইট করে আগেই বলেছিলেন, স্বাধীন ভারতের সবথেকে দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার হলো মোদী সরকার। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যম রাজনৈতিক দুর্নীতিকে আইনসিদ্ধ করার ফলে এই ধরনের অসততা এবং অর্থের বেআইনি লেনদেনের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে নিরপেক্ষ তদন্তের। মোদীর ভাষণের পরে আরও তীক্ষ্ণ কটাক্ষ করে ইয়েচুরি বলেছেন, মোদী আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করার উপদেশ দিচ্ছেন। এটা সত্যিই একটা ব্যঙ্গচিত্র হয়ে গেল। নির্বাচনী বন্ড ফাঁস প্রমাণ করে দিয়েছে যে তিনিই রাজনৈতিক দুর্নীতিকে বৈধতা দেওয়ার মূল উৎসমুখ। নির্বাচনী বন্ড নিয়ে তাঁর আর বিজেপি’র তৈরি করা ধোঁয়াশা কেটে গেছে। পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে গেছে। 
বৃহস্পতিবার রাজস্থানেই দুটি সভা করেছেন রাহুল গান্ধী। দুটি সমাবেশ থেকেই রাহুল গান্ধী তুমুল আক্রমণ করেন মোদী সরকারকে। বিশেষ করে দুর্নীতির প্রশ্নে চাঁচাছোলা সমালোচনা করেন। রাহুল সরাসরি অভিযোগ করে বলেছেন, দেশে সবথেকে বড় দুর্নীতি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে করছেন মোদী আর বিজেপি। মোদী ইডি, সিবিআইকে কাজে লাগাচ্ছেন। এইভাবে শিল্পপতিদের থেকে চাঁদা আদায় করছেন। আন্তর্জাতিক মাত্রায় তোলাবাজি চলছে বলে মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন রাহুল গান্ধী। 
হিন্দি বলয় বলে পরিচিত ভূখণ্ডে মোদী সভা শুরু করছেন ‘রাম রাম’ বলে। তারপর বলছেন, কংগ্রেস রামমন্দির বানাতে দেয়নি। তারপর যখন মন্দির হয়েছে সেখানে প্রাণপ্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠানে যায়নি। রামকে নিয়ে এত ঘৃণা বলেও লোক তাতাচ্ছেন। এদিন আরও নিচু স্তরে নেমে ঢোলপুরের সভায় বলেছেন, কংগ্রেসের সরকারের সময়ে তুষ্টিকরণের জন্য মন্দির ভেঙে ফেলা হতো। রামনবমীর শোভাযাত্রায় পাথর ছোঁড়া হতো। উত্তরাখণ্ডের ঋষিকেশে এদিন এক সমাবেশ থেকে মোদী ফের ‘শক্তি’ নিয়ে মিথ্যাচার করেছেন। কংগ্রেস প্রকাশ্যে ‘শক্তির’ বিরোধিতা করেছে বলে তিনি দাবি করে বলেছেন। মোদী বলেছেন, হিন্দু ধর্মে শক্তির অর্থ উত্তরাখণ্ডের মা ধারি দেবী, মা চন্দ্রবাদনি এবং জ্বলপা দেবী। কংগ্রেস এদের বিরোধিতা করছে! উত্তরাখণ্ডের সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এই ধরনের ঘোষণা করে কংগ্রেস সেই আগুনে ঘি ঢালছে। নির্বাচনের বিধিনিষেধ উড়িয়ে মোদী একটানা ধর্মীয় উসকানি দিয়ে ভোট চাইছেন। সেই কাজ করতে গিয়ে তিনি নির্জ্জলা মিথ্যা বলছেন। এরপরেও নির্বাচন কমিশন চুপ করে বসে আছে। মোদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূর, সতর্কও করছে না। 
মোদী এদিন ফের ৩৭০ ধারার প্রসঙ্গও টেনে আনেন। সেই নিয়ে আবেগ তৈরির চেষ্টাও করেছেন। রাহুল গান্ধী যেহেতু ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প নিয়ে লাগাতার মোদী সরকারকে আক্রমণ করছেন এবং এদিনও তিনি রাজস্থানের সভা থেকেই ঘোষণা করেছেন, তাদের সরকার তৈরি হলে ‘অগ্নিবীর’ প্রকল্প বাতিল করে আগের মতো নিয়মিত নিয়োগ ব্যবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়া হবে। রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহারের মত রাজ্যের বিপুল সংখ্যক যুব সেনাবাহিনীতে যান। তাদের কাছে অগ্নিবীর একটি বিরাট বড় ধাক্কা। এই নিয়ে এক সময়ে প্রবল বিক্ষোভও হয়েছে। তাই কাশ্মীরের ৩৭০ ধারার সঙ্গে মোদী সেনা জওয়ানদের ‘শহীদ’ হওয়া জুড়ে দিয়ে আবেগ তৈরি করতে চাইছেন। ভাবখানা এমন যেন, ৩৭০ ধারা ছিল বলেই কাশ্মীরে জওয়ানরা মারা গেছেন সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে। অথচ বাস্তব হলো, ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পরেও সন্ত্রাসবাদী হামলা অব্যাহত রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেই পথে না গিয়ে উত্তরাখণ্ডের সভা থেকে মোদী বলেছেন, কেন্দ্রে তাঁর নেতৃত্বে শক্তিশালী সরকার থাকায় এখন নিরাপত্তা বাহিনী সন্ত্রাসবাদীদের ঘরে ঢুকে মারছে। আগে কংগ্রেসের সময়ে দুর্বল সরকার ছিল।

Comments :0

Login to leave a comment