JALPAIGIRI STORM

ঝড়বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড উত্তরবঙ্গে মৃত ৬

জেলা

দূর্গতদের পাশে বামপন্থী ছাত্র যুব কর্মীরা।

 বৃষ্টির পূর্বাভাস উত্তরবঙ্গে ছিলই। কিন্তু এমন ভয়াল ভয়ঙ্কর কালবৈশাখীর ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে যে সব লন্ডভন্ড হয়ে যাবে, তা ভাবতেও পারেননি জলপাইগুড়ি ও কোচবিহারের মানুষ। রবিবার প্রলয় ঝড়ে জলপাইগুড়িতে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বেসরকারী সূত্রে জানা গেছে। ঝড়ের তাণ্ডবে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে, বাড়িঘর ভেঙে আহত হয়েছেন বহু মানুষ, অনেকেই হয়ে পড়েছেন আশ্রয়হীন, বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন বহু এলাকা। এলাকার পর এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা। 
আগামী ২দিন ঝড়বৃষ্টি আরও চলবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে-এমনই সতর্কবাণী আবহাওয়াবিদদের। রবিবার রাতেই জলপাইগুড়ি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান সিপিআই(এম) প্রার্থী দেবরাজ বর্মণ সহ সলিল আচার্য, জিতেন দাস, পীযূষ মিশ্র প্রমুখ পার্টি নেতৃত্ব, ছিলেন এসএফআই সাধারণ সম্পাদক ময়ুখ বিশ্বাস সহ ছাত্রযুবকর্মীরাও। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান পার্টি নেতৃত্ব।  
রবিবার ভোরে হালকা বৃষ্টি দেখা গিয়েছিল জলপাইগুড়ির বিভিন্ন এলাকায়। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে রোদের দেখা মিলেছিল। গোটা দিনই গরম অনুভব করেছিলেন মানুষ। এরপর মাত্র পনেরো মিনিটের এক দুরন্ত কালবৈশাখী ঝড়ে বেসামাল ও লন্ডভন্ড হয়ে গেল জলপাইগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রত্যক্ষদর্শীদের কথায়, ঘন কালো এক বিশাল হাতির শুঁড় আচমকাই যেন এগিয়ে এসেছিল কয়েক মুহূর্তের মধ্যে, সামলে নেওয়ার সময়টুকু পাওয়া যায়নি। একই পরিস্থিতি কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের এক বড় অংশে। ঝড়ের প্রকৃতি ও তাণ্ডবের মাত্রা শুনে তথ্যাভিজ্ঞ মহলের আশঙ্কা ‘টর্নেডো’ হতে পারে এই ঝড়। 
ঝড়ে জলপাইগুড়ি শহর, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ির বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। মৃত ৪ জনের মধ্যে ২জনের বাড়ি জলপাইগুড়ি এবং বাকি ২জন ময়নাগুড়ির বাসিন্দা বলে জানা গেছে। মৃতরা হলেন, দ্বিজেন্দ্রনারায়ণ সরকার (৫২), অণিমা রায় (৪৯), যোগেন রায় (৭০) এবং সমর রায় (৬৪)। জানা গেছে ময়নাগুড়ির রাজারহাট, বার্নিশ, বাকালি, জোরপাকড়ি, মাধবডাঙা, সাপ্টিবাড়ি গ্রামগুলিতে বহু ঘর ধসে গিয়েছে। 
জলপাইগুড়ি শহর সংলগ্ন পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পাতকাটা ও ময়নাগুড়ি এলাকায় ডেঙ্গুয়াঝাড় চা-বাগান, ধূপগুড়ি, জলপাইগুড়ি শহরের কাছে পাহাড়পুর এলাকায়, ঘরবাড়ি ভেঙে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু হারিয়ে ফেলেছেন অনেকে। ঝড়ে বিপর্যস্ত কোচবিহার মরিচবাড়ি, মাথাভাঙা কুর্শামারি ও পচাগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকাও। ফলাকাটাতেও ঝড়ের প্রাবল্য দেখা গেছে। শিলাবৃষ্টিতে তছনছ হয়ে গেছে অসংখ্য সবজি খেত। বহু বাড়ির চাল উড়ে গেছে, রাত জেগে মাথার ওপর চাউনি জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ভুক্তভুগী মানুষ। জলে ভিজে প্রায় নষ্ট হয়ে গিয়েছে জরুরি কাগজ, বইপত্র।  ঝড়ের  চিত্র দেখে একে টর্নেডো আখ্যাও দিয়েছেন আবহাওয়াবিদদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরবঙ্গের ওপর দিয়ে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বয়ে যাওয়ার কারণে এই ঝড় বৃষ্টি। আগামী ২ দিন তাই জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার সহ দার্জিলিঙ-কালিম্পং-এ ঝড় বৃষ্টিও দুর্যোগের সতর্কতা থাকছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।       
এদিকে কয়েক মিনিটের এই ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে কোচবিহার ২নং ব্লকের খোল্টা-মরিচবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত বিস্তীর্ণ এলাকা। এদিন বিকেল প্রায় সাড়ে ৫টা নাগাদ প্রবল ঝড় আছড়ে পড়ে এই গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত চেকপোস্ট, খোঁচা বাড়ি, মরিচবাড়ি উত্তর সহ বিভিন্ন গ্রামে। প্রায় ৭মিনিটের ঝড়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে প্রায় ১৫০টি বাড়ি। এর মধ্যে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৬০টি বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এই ঝড়ে বেশ কয়েকজন আহত হয়ে আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক লক্ষাধিক টাকা বলে প্রাথমিকভাবে অনুমান।
এই ঝড়ে বাড়িঘর বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে পড়েছে গাছের ডাল, উপড়ে গিয়েছে একাধিক গাছ। কোথাও আবার ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিন তারের খুঁটি। তবে এত বড় ঘটনার পর প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়ে ক্ষুব্ধ ঝড়ে বিধ্বস্ত এলাকার মানুষেরা। এই ঝড়ের পর একাধিক এলাকায় বৈদ্যুতিন সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বিপর্যয়ের পাশাপাশি এক গাঢ় অন্ধকার ঘিরে ধরেছে এই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাকে। এদিন কয়েক মিনিটের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায় মাথাভাঙা ১নং ব্লকের কুর্শামারি ও পচাগর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। ঝড়ে শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩জন। তাঁরা বর্তমানে চিকিৎসাধীন মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে।

Comments :0

Login to leave a comment