Dengue

ইতিমধ্যেই মৃত ৫২, নবান্ন বলছে, ডেঙ্গু কমছে

কলকাতা

ডেঙ্গু ক্রমশ আরও ভয়াল হয়ে উঠছে। ঘরে ঘরে জ্বর আর ডেঙ্গুর উপসর্গ। ওদিকে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণ বলছে, বেডের হাহাকার পড়েছে কলকাতা ও সন্নিহিত অঞ্চলগুলির হাসপাতাল ও চিকিৎসাকেন্দ্রেগুলিতে। বেসরকারি সূত্রে জানা যাচ্ছে চলতি মরশুমে এপর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬ হাজারের আশেপাশে। প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে গ্রাফ। ওদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। এই নিয়ে এপর্যন্ত ৫২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে মঙ্গলবার নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে ডেঙ্গু কমছে, আগামী সপ্তাহে তা আরও কমে যাবে! ওদিকে রাজারহাট নিউটাউনের শাসক দলের বিধায়ক ডেঙ্গু আক্রান্ত বলে এদিনই খবর মিলেছে। রাজ্যের বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, ডেঙ্গু কত ছিল আর এখন কত হয়েছে তার সঠিক পরিসংখ্যান না দিয়ে শুধু কমছে বলে দিলেই প্রশাসনের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। প্রশাসনের ব্যর্থতা ঢাকতে এখন নানা ছল চাতুরির আশ্রয় নিচ্ছে রাজ্য প্রশাসন। 
মঙ্গলবার কলকাতায় আরও একজনের ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর মিলেছে। বছর ২৮-এর গৃহবধূ প্রিয়া রায় মঙ্গলবার সকালে এমআর বাঙ্গুর হাসপাতালে মারা গেছেন বলে জানা গেছে। তাঁর বাড়ি টালিগঞ্জ এলাকায়। সম্প্রতি তাঁর বিবাহ হয়। গত শনিবার থেকে জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি শুরু হয়। মঙ্গলবার মৃত্যু হয় তাঁর। তাঁর রক্তে ডেঙ্গুর উপস্থিতি মিলেছে। অন্যদিকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দেগঙ্গার বাসিন্দা এক ২ বছরের শিশু সাজিদ উদ্দিন’র মৃত্যুর খবর মিলেছে এদিন। জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রথমে বারাসত জেলা হাসপাতাল এবং পরে কলকাতার আরজি কর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। যদিও তাঁর ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ এনসেফেলাইটিস বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। প্রতিদিনই মশা বাহিত রোগে মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে কলকাতা ও জেলায়। শারদোৎসবে কি হবে কেউ জানেন না।
এদিন রাজ্যের মুখ্য সচিব নবান্নে জানিয়েছেন, ডেঙ্গু সর্বোচ্চ হয়েছিল ২সপ্তাহ আগে। কিন্তু এখন নামছে। আগামী সপ্তাহে কমে যাবে। গ্রাম ও শহরের মধ্যবর্তী এলাকাতেই ডেঙ্গু সমস্যা প্রবল। এরকম ১৩০টি এলাকা চিহ্নিত করে নজরদারি চলছে। সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় ডেঙ্গু তীব্র গতিতে বাড়ছে। এক ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকার, প্রশাসনের অপদার্থতা প্রতিপদে প্রমাণিত হচ্ছে। যে সমস্ত এলাকায় ডেঙ্গু বাড়ছে, সেগুলি চিহ্নিত করার কাজ আগেও হয়েছে। তাও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি প্রশাসন। এখন তো যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল, মেডিক্যাল কলেজের আবাসন, কোন কোন হাসপাতাল বা চিকিৎসাকেন্দ্রেও মশার লার্ভা মিলছে। তাহলে এরপর কি হবে বলাই বাহুল্য। বিরোধী দলগুলির বক্তব্য, কোন সময়ে ডেঙ্গু সর্বোচ্চ ছিল তাও সরকারিভাবে জানা গেল না। আর এখন নাকি কমছে ডেঙ্গু। কিন্তু তারও কোনও পরিসংখ্যান নেই। এরকম হাওয়ায় ভাসানো কথা না বলাই ভালো প্রশাসনের। ক্যামেরা সামনে রেখে ড্রোন ওড়ালেই সব সমাধান হয় না।  
ওদিকে ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রশাসনের গাফিলতি ও উদাসীনতা প্রকট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এলাকায় এলাকায় চলছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বিক্ষোভ। সেই ক্ষোভ সামাল দিতে শুরু হয়েছে শাসক দলের পদাধিকারী বা জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে শুরু হয়েছে পারস্পরিক দোষারোপের পালা। গত ৬-৭ মাস ধরে স্বাস্থ্য প্রশাসন বারবারই বৈঠক করেছে, দফায় দফায় নির্দেশিকা জারি করেছে। সাধারণ মানুষকে জানানো হয়েছে ডেঙ্গু মোকাবিলায় এলাকায় এলাকায় কাজ চলছে। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আমরাও বারবারই স্বাস্থ্য প্রশাসনকে জানিয়েছি আগে থেকে সতর্ক থাকতে। তাহলে কি করে ডেঙ্গু এভাবে মারাত্মক আকার নিরে পারল? তার মানে প্রশাসন মৌখিকভাবে কাজ করেছে, কাগজে কলমে নয়। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে গোটা রাজ্যে।
উল্লেখ্য, রাজ্য সরকার একবার বলেছে বাংলাদেশের জন্য এখানে ডেঙ্গু বাড়ছে। আর একবার বলেছে গ্রাম এখন উন্নত হয়েছে তার জন্য ডেঙ্গু বাড়ছে। আবার কখনো বলেছে পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হয়নি বলে ডেঙ্গু মোকাবিলার কাজে ব্যাঘাত হয়েছে। কখনো বলা হয়েছে সাধারণ মানুষ সতর্ক নয় বলেই ডেঙ্গু বাড়ছে। বারবার দোষ দেওয়া হয়েছে ফেলে রাখা টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র, খোলা বাক্স, নির্মীয়মাণ বাড়ির আশেপাশের গর্ত, পরিত্যক্ত জমির ওপর। কিন্তু বছরের শুরু থেকে এ বিষয় নজরদারি কোথায় ছিল—এই প্রশ্ন তুলেছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, উত্তর চব্বিশ পরগনা, কলকাতা, নদীয়া, হাওড়া, হুগলী, বর্ধমান, মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ছাড়াও মুর্শিদাবাদ, মালদহ, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিঙ জেলাতেও প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে ডেঙ্গু। প্রায়শই মিলছে না বেড, বাড়ছে রেফার কেস। চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে রাজ্যবাসী। দিনের পর দিন একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন, ডেঙ্গু কমছে কোথায়।  
 

Comments :0

Login to leave a comment