Insaf Yatra

জাতীয় সড়ক জুড়ে ইনসাফের ধ্বনি যৌবনের পদযাত্রায়

জেলা

 জাতীয় সড়ক রুদ্ধ। জাতীয় সড়কে আলো, হাজারও— জ্বলেছে মোবাইল হাতে হাতে। 
জাতীয় সড়ক রুদ্ধ মানুষে মানুষে। পদযাত্রীদের দু’পাশে দক্ষিণ দিনাজপুরের গ্রামবাসীরা। কেউ হাত নাড়ছেন। কেউ নমস্কার করছেন। কেউ মোবাইলের ভিডিও বাটন অন করে আছেন। ডিওয়াইএফআই’র নেতারা কখনও হাঁটছেন। কখনও? বিস্মিত গ্রাম দেখছে— ছুটছেন তাঁরা, স্লোগান উড়ছে। তেভাগা আন্দোলনের ঐতিহাসিক খাঁপুরের জেলা এখন ভিন রাজ্যে সস্তা শ্রমের অন্যতম সরবরাহকারী অঞ্চল। শুক্রবার সেই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা দেখেছে যুব-ছাত্রদের যাত্রাপথে জেগে উঠতে পারে জনপদ, ওপাড় বাংলার টানে বয়ে চলা টাঙনের পার। 
এই জেলায় শিল্প নেই। কৃষি প্রধান সীমান্তবর্তী জেলায় ধানের দাম পান না কৃষকরা। ইনসাফ যাত্রা সেই নৈরাশ্যের মাটিকে উদ্দিপ্ত করেছে।
উত্তর দিনাজপুরের পর দৃপ্ত ইনসাফ যাত্রা দক্ষিণ দিনাজপুরে কুশমন্ডি বাসস্ট্যান্ডে প্রবেশ করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। ইনসাফ যাত্রাকে স্বাগত জানাতে কুশমন্ডিকে বিশাল তোরণ, সংগঠনের পতাকা, রাস্তার ধারে যুবদের ন্যায্য  দাবির প্ল্যাকার্ড দিয়ে সুসজ্জিত করেছেন স্থানীয় যুব কর্মীরাই। এখানেই  রাত্রিকালীন বিরতি ছিল। 
শুক্রবার সকালেই কুয়াশা উপেক্ষা করে অন্তত হাজার খানেক ছাত্র-ছাত্রী ও  যুবক-যুবতী ইনসাফ যাত্রায় অংশগ্রহণের জন্য কুশমণ্ডির চৌপথিতে জমায়েত হন ডিওয়াইএফআই’র ঝান্ডা ও দাবির প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। কুশমণ্ডির পথসভা পরিণত হয় জনসভায়। বেকারের কর্মসংস্থান, সরকারি দপ্তরে শূন্যপদে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ, কৃষকের ফসলের ন্যায্য মূল্য, শ্রমিকদের বছরভর কাজ ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক, গরিবদের আবাস যোজনার বাড়ি সহ জনস্বার্থ-বিরোধী স্মার্ট মিটার বাতিলের দাবিতে ইনসাফ যাত্রা এগিয়ে চলে বুনিয়াদপুরের অভিমুখে। রাজ্য সড়কের ধারে গঞ্জ, চৌমাথা সহ বিভিন্ন জায়গায় সাধারণ মানুষ দল বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকেন ইনসাফ যাত্রাকে স্বাগত জানাতে। লক্ষ্মীপুর, আমিনপুর, জোড়দিঘি, নারায়ণপুর হয়ে লড়াকু যৌবনের ঢল বুনিয়াদপুরে প্রবেশ করতেই উচ্ছ্বাসের বন্যা বয়ে যায় এলাকায়। স্লোগান মুখরিত ছাত্র-ছাত্রী সহ যুবক-যুবতীদের উষ্ণ অভ্যর্থনায় তখন আপ্লুত ইনসাফ যাত্রা। এগিয়ে চলেছে মিছিল। বজ্রমুষ্ঠিতে সমর্থন জানাচ্ছেন রাস্তার ধারের ব্যবসায়ী, কর্তব্যরত নির্মাণকর্মী, ধান কাটতে থাকা কৃষক-কৃষকরমণী, বাসস্ট্যান্ডের মুটিয়া-মজদুর থেকে বাজারের ব্যাগ হাতে বয়স্ক নাগরিকরাও।  বুনিয়াদপুরে ইনসাফ যাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের দুপুরের খাওয়া সহ সামান্য  বিরতির ব্যাবস্থা করেন স্থানীয় যুবকর্মীরা। চৌপথিতে যুব জেলা সভাপতি সমীরণ সাহার সভাপতিত্বে প্রকাশ্য সভা শুরু হয় কয়েক হাজার যুবক-যুবতীর উপস্থিতিতে। বুনিয়াদপুরে যুব নেতা ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেন, বেকারের কর্মসংস্থানের দাবিতে ও রাজ্য সরকারের দুর্নীতির প্রতিবাদে শহীদ মইদুল ইসলাম, আনিসুর রহমান সহ যুব কমরেডদের রক্তের দাগ এখনও মুছে যায়নি। শহীদ পরিবারকে ভীতি প্রদর্শন, চাকরির প্রলোভন দেখিয়েও মামলা প্রত্যাহার করা যায়নি। পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ডিওয়াইএফআই’র আন্দোলনকে দমানো যায়নি। তিনি বলেন, শিল্পবিহীন দক্ষিণ দিনাজপুরের কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাননি। জেসিআই পাট কেনেনি কৃষকের কাছ থেকে। সারের কালোবাজারি বন্ধ করতে সঠিক পদক্ষেপও নেয়নি দুর্নীতিগ্রস্ত রাজ্য সরকার। জেলাতে কাজ না পেয়ে যুবক-যুবতীরা চলে যাচ্ছেন ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে। বুনিয়াদপুরে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুব জেলা সম্পাদক শুভ্রজিৎ দাস, রাজ্য নেতা বিকাশ ঝাঁ প্রমুখ। বুনিয়াদপুরের সভা শেষে কয়েক হাজার যুবক-যুবতীর ইনসাফ যাত্রা এগিয়ে চলে গঙ্গারামপুর অভিমুখে।  বংশীহারী, ডিটলহাট, ঠ্যাঙ্গাপাড়া সহ বিভিন্ন জায়গায় যুবরা পতাকা নেড়ে  ও ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানান পদযাত্রীদের। তাঁদের দিকে এগিয়ে দেন পানীয় জল সহ শুকনো খাবার। সাধারণ মানুষও অপেক্ষা করেন দেখার জন্য। সন্ধ্যায়  গণসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে গঙ্গারামপুরের চৌপথিতে ইনসাফ যাত্রাকে স্বাগত জানান গণনাট্যের শিল্পীরা। পুস্পস্তবক দিয়ে পদযাত্রীদের অভিনন্দন জানান গঙ্গারামপুরের যুবকর্মীরা। গঙ্গারামপুরের চৌপথির পথসভায় ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, রাজ্য সরকারের নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ডিওয়াইএফআই আপসহীন লড়াই-আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তৃণমূল ও বিজেপি’র আন্দোলনে শিল্প চলে গিয়েছে রাজ্য ছেড়ে। বেকাদের কর্মসংস্থানের দাবিতে একমাত্র ডিওয়াইএফআই আন্দোলন করছে ও বেকার যুবক-যুবতীদের পাশে রয়েছে। আগামী দিনে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। দক্ষিণ দিনাজপুরের ইনসাফ যাত্রা গঙ্গারামপুরে শেষ হবে। শনিবার মালদহ জেলার গাজোলে প্রবেশ করবে যুবদের ন্যায্য দাবি নিয়ে ইনসাফ যাত্রা।

Comments :0

Login to leave a comment