Chandranath Sinha

বোলপুরে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বাড়িতে রাত পর্যন্ত টানা তল্লাশি, চলছে জেরাও

রাজ্য জেলা

গোরু পাচারের তদন্তের পরে এবার নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে বোলপুরে হানা কেন্দ্রীয় এজেন্সির। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বাড়িতে রাত পর্যন্ত দফায় দফায় তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। পাশাপাশি ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে মন্ত্রীকে। 
দিন পনেরো আগেই বোলপুরে পা দিয়েছিল ইডি। তৃণমূলের অ্যাকাউন্টের লেনদেন যাচাই ও অনুব্রতর হাত দিয়ে তার কালীপুজোয় বিগ্রহে পড়ানো পাঁচশো ভরিরও বেশি সোনার গয়না কেনার টাকার উৎস খুঁজতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে হানা দিয়েছিল ইডি। 
শুক্রবার ফের বোলপুরে আসে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের এক দল। এবার তাদের ঠিকানা ছিল অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বাড়ি। তবে সন্দেশখালি থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার তদন্তকারীরা ছিলেন বাড়তি সতর্ক। বিরাট সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল তদন্তকারী দলের সঙ্গে। 
জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতিতে রাজ্যের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার প্রত্যক্ষ যোগের নথি ও তথ্য হাতে এসেছে ইডি’র। তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রের দাবি, শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতিতে ইতিমধ্যে ধৃত রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সম্পাদক কুন্তল ঘোষের বয়ানেই সামনে এসেছে একাধিক নতুন তথ্য। নিয়োগকাণ্ডেই ধৃত ‘মিডলম্যান’ প্রসন্ন রায়কেও জেরা করে মিলেছে বেশ কিছু তথ্য।
তার ভিত্তিতেই শুক্রবার কলকাতার একাধিক জায়গার পাশপাশি বোলপুরেও চলে তল্লাশি অভিযান। শুক্রবার সকাল থেকে কলকাতা ও শহর লাগোয়া পাঁচ থেকে ছয়টি জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা। তাঁদের সঙ্গে আছেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। পিয়ারীমোহন রোডে একটি আবাসনে বিশ্বরূপ বসু নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি ও চেতলায় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে প্রথমে হানা দেন তাঁরা। লেকটাউন, বিরাটি সহ আরও পাঁচ জায়গায় জায়গায় অভিযান চালানো হয়েছে বলে খবর। নিয়োগ দুর্নীতির টাকা রিয়েল এস্টেট সহ একাধিক ব্যবসায় ঘুরেছে। খাস কলকাতা শহরেই একাধিক ভুয়ো, শিখণ্ডী সংস্থার মাধ্যমে সেই টাকা অন্যত্র পাচার হয়েছে। এর আগে ক্যানিং স্ট্রিটে এক ব্যবসায়ী, কাঁকুড়গাছি-মানিকতলা রোডে অবস্থিত একটি অ্যাপার্টমেন্টেও হানা দিয়েছিলেন ইডি’র আধিকারিকরা।
জানা গিয়েছে, কুন্তল ঘোষের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নথিতে একশো জনের নাম রয়েছে। তার মধ্যেই রয়েছে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার নাম। অনুব্রত থেকে শুরু করে ইডি-সিবিআই’র তদন্তে অভিযুক্ত জেলার তৃণমূলের নানা নেতা-মন্ত্রীর একাধিক মামলার তদারকি করা তৃণমূলের এক জেলার নেতাও তা স্বীকার করে জানিয়েছেন, ‘‘চন্দ্রনাথের ব্যাপারে যতটুকু শুনেছি, তা হলো, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় কোনও এক অভিযুক্তের গোপন জবানবন্দি (১৬১ নম্বর ধারা) অনুসারেই এই তল্লাশি। 
তবে মন্ত্রী চন্দ্রনাথের বিপুল টাকাপয়সা লেনদেন নিয়ে জেলাবাসী ওয়াকিবহাল। কারণ, বোলপুর থেকে শুরু সিউড়ি সহ আরও নানা জায়গায় আবাসন ব্যবসায় ইদানীং বিপুল বিনিয়োগের খবর অজানা নয় কারও কাছে। তৃণমূলেরই এক নেতা জানিয়েছেন, ‘‘মন্ত্রী এত দিন বোলপুরে নানা বিনিয়োগ করতেন। এখন সিউড়িতে নানা ক্ষেত্রে বিশেষ করে আবাসন কারবারে নাক গলিয়েছেন। শুধু তা নয়, লোভনীয় নানা জায়গা এখন তার ব্যবসার ঠিকানা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
গোরু পাচার মামলায় তিহারে বন্দি অনুব্রত মণ্ডলের একান্ত ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। একসময়ে তিনি বোলপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসলে শুরু থেকেই তিনি মন্ত্রী। বোলপুরে কান পাতলেই শোনা যায়, কাঁচা টাকা হাতবদলের খেলায় অনুব্রতরই অনুসরণকারী ছিলেন তিনিও। গোরু থেকে কয়লা, বালি থেকে পাথরের ‘কমিশন’ও নিশ্চিতভাবেই তাঁর কাছেও পৌঁছেছে। তা ছাড়াও জমি, লজ, ফ্ল্যাট ব্যবসায় তাঁর বিনিয়োগের বহরও কম নয় জানেন সকলেই। 
শুক্রবার দিনের আলো ফুটতেই তিনটি গাড়িতে বোলপুরের নিচুপট্টিতে থাকা মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহার বাড়িতে হানা দেয় ইডি। এলাকা ঘিরে ফেলেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। বাড়িতে ছিলেন না মন্ত্রী। জানা যায়, বাড়িতে রয়েছেন তাঁর কাউন্সিলর স্ত্রী কুন্তলা সিনহা ও ছোট ছেলে শুভজিৎ সিনহা। মন্ত্রী ছিলেন মুরারইয়ের কলহপুরে। ইডি’র তরফে তাঁকে বাড়ি আসতে বলা হয় সকালেই। মুরারই থেকে বোলপুরের উদ্দেশে রওনা হওয়ার সময়ে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা জানান, ‘‘ছেলে ফোন করেছিল। ছেলের ফোন থেকেই ইডি আধিকারিক কথা বলেন। কী জন্য, কী কারণে আমার বাড়িতে তাঁরা এসেছেন, বলতে পারব না।’’ এরপর প্রায় পৌনে দুটো নাগাদ নিজের বাড়িতে ঢোকেন মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা। সকাল থেকে তল্লাশি চলে প্রায় চার ঘণ্টা। তারপর মন্ত্রী বাড়িতে ঢোকেন। শুরু হয় জেরা। রাত নটার পরেও চলছে সেই  সেই জেরা পর্ব ।

Comments :0

Login to leave a comment