EDITORIAL ELECTION 5 STATES

সিদুঁ‍‌রে মেঘ

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

পাঁচ রাজ্যে ভোট নির্ঘণ্ট ঘোষণার সাথে সাথে কেন্দ্রীয় শাসক দল বিজেপি’র উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গেছে। বিজেপি-কে স্বস্তি দেবার জন্য ভোট না করার কোনও উপায় নেই। কাশ্মীরে অনন্তকাল ভোট না করে কেন্দ্রীয় শাসন চাপিয়ে দেওয়া গেলেও অন্যত্র তা সম্ভব নয়। তাতে হিতে বিপরীত হবার প্রবল সম্ভাবনা। অতএব প্রত্যাশা মতোই নির্দিষ্ট সময়ে ভোট হতে চলেছে পাঁচ রাজ্যে। আগামী বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই সবচেয়ে বড় আকারের নির্বাচন। যেখানে পাঁচ রাজ্য মিলিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ১৬ কোটি ভোটার। তাই এই নির্বাচনের ফলালল যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে লোকসভা নির্বাচনে।
এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে একমাত্র মধ্য প্রদে‍‌শে ক্ষমতায় আছে মোদীর দল। সেটাও ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জনগণের ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেনি। সেই ভোটে জিতে প্রথমে সরকার গঠন করে কংগ্রেস। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় মোটা টাকার বিনিময়ে বেশ কিছু কংগ্রেস বিধায়ককে কিনে নিয়ে সরকারের পতন ঘটায় মোদী-শাহরা। তারপর জনমতের রায়কে উলটে দিয়ে নীতি-আদর্শহীন লোভী দল হিসাবে ক্ষমতা দখল করে বিজেপি। রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে একই প্রয়াস চালালে‍‌ও সফল হয়নি। তাই সেখানে কংগ্রেস সরকারই বলবৎ আছে। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় আছে বিআরএস। মিজোরামে এমএনএফ।। মিজোরামে বিজেপি নেই বললেই চলে। আগের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন এমএনএফ’র সঙ্গে জোট বেঁধে একটি মাত্র আসন পেয়েছিল। মণিপুরের ঘটনায় ক্ষুব্ধ এমএনএফ বিজেপি’র সঙ্গ ত্যাগ করেছে। ফলে এবার মিজোরাম থেকে বিজেপি মুছে যেতে পারে। তেলেঙ্গানায় ছিল মাত্র ৫টি আসন। লড়াই হবে কংগ্রেস এবং বিআরএস’র সঙ্গে। মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ে বিজেপি সুখে নেই। দলের ভেতরের গোলমাল বিজেপি-কে অনেকটাই ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে কোনও রাজ্যেই কাউকে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ হিসাবে দেখিয়ে ভোটে নামার সাহস পাচ্ছে না। একজনকে সামনে আনলে অন্যজনের গোঁসা হবে। অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। মধ্য প্রদেশের দু’দশক ধরে থাকা মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে প্রার্থী করতে চায়নি দল। শেষে নিজে মুখ্যমন্ত্রী হবার বাসনা প্রকাশ্যে জানিয়ে দল ভাঙার হুমকি দিয়ে প্রার্থীপদ আদায় করেছেন। রাজস্থানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়াকেও ছেঁটে ফেলতে চাইছে দল। এখনো তাকে প্রার্থী করা হয়নি। ছত্তিশগড়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে প্রার্থী করা হলেও তাঁকে সামনে রেখে ভোটে লড়ার সাহস পাচ্ছে না। বিজেপি ঠিক করেছে সব রাজ্যেই নরেন্দ্র মোদীই হবেন দলের একমাত্র মুখ। মোদীকে দেখিয়েই ভোট চাইবে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী যেমন রাজ্যের সব আসনে নিজেকেই প্রার্থী বলে ঘোষণা করেছিলেন সেরকম পাঁচ রাজ্যের সব আসনে মোদীই বিজেপি’র প্রার্থী। আর কারোর উপর ভরসা নেই, মোদীই  দলের একমাত্র ভরসা। মোদীকে দেখিয়ে যদি শিকে ছেঁড়া যায়। কিন্তু মোদী যে দলকে জিতিয়ে আনতে পারবেন সেটাও নিশ্চিত নয়। তাই রাজ্যের ভোটে নামানো হয়েছে সাংসদ ও মন্ত্রীদের। স্থানীয় বা রাজ্য নেতাদের সরিয়ে প্রার্থী হয়েছেন নির্বাচিত সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। জিতলে হয় সাংসদ থাকবেন নয় বিধায়ক। সেক্ষেত্রে ফের উপনির্বাচন করতে হবে। বিজেপি নাকি খরচ কমানোর জন্য একসঙ্গে ভোট করতে চায়।
নির্বাচনী ইস্যুকে ঘিরেও ঘোর বেকায়দায় বিজেপি। মোদীর ভাবমূর্তি সাম্প্রদায়িক ও ধর্মীয় বিভাজন। উগ্র দেশপ্রেমের জিগির ইত্যাদিই বিজেপি’র প্রধান ভরসা। বিপরীতে বিরোধীরা প্রচারে সর্বাধিক জোর দিচ্ছেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনের সঙ্কটকে। তাই মুল্যবৃদ্ধি, কাজ না মেলা, নিম্ন আয়, কৃষকের ফসলের দাম, ছোটখাট ব্যবসায়ীদের সমস্যাকে সামনে আনছে বিরোধীরা। জোরালো হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কথা, সংবিধান রক্ষার কথা। জি-২০ দিয়ে কোটি কোটি বেকারের পেট ভরবে না। ইজরায়েলের সঙ্গী হলে ফসলের ন্যায্য মূল্য মিলবে না। কানাডার সঙ্গে সংঘাতে লিপ্ত হলে শ্রমজীবীদের মজুরি বাড়বে না। প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ধুয়ে জল খেলে দেশের পেট ভরবে না। দরকার কীভাবে বেকার কাজ পাবে, দাম কমবে, কৃষক ফসলের দাম পাবে, সকলের জন্য শিক্ষার সু‍‌যোগ কীভাবে প্রসারিত হবে সেদিকে নজর দেওয়া। বিরোধীরা সাধারণ মানুষের চাহিদা সমস্যাকেই ইস্যু করছে। মোদীর বিপদ সেখানেই।

Comments :0

Login to leave a comment