Mamata Banerjee

ভয়ে রয়েছেন শিল্পপতিরা, বললেন মুখ্যমন্ত্রী

রাজ্য

এই বুঝি কোনও এজেন্সি গলা টিপে ধরতে এল, বলেছেন মমতা ব্যানার্জি। 
গোরু, কয়লা, নিয়োগ থেকে রেশন— একের পর এক দুর্নীতির তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় এজেন্সি। তদন্তের আওতায় এসে রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী এখন জেলে। বুধবার শিল্প সম্মেলনের সমাপ্তি অধিবেশন বসেছিল আলিপুরে যে অডিটোরিয়ামে সেই ‘ধনধান্য’ মঞ্চের লাগোয়াই কলকাতার আলিপুর সংশোধনাগার। জেলের গেটের বাইরে মমতা ব্যানার্জির ছবি দেওয়া চলতি বছরের শিল্প সম্মেলনের ব্যানার টাঙানো। আর জেলের ভিতরে একদা রাজ্যের শিল্প দপ্তরের দায়িত্ব থাকা মন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জি। সেই শিল্প মঞ্চে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের কথা এল অনেক দেরিতে। দেশ, বিদেশের আমন্ত্রিত শিল্পপতিদের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর সমাপ্তি ভাষণে উঠে এল কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত প্রসঙ্গ। 
আলিপুর ও প্রেসিডেন্সি জেল লাগোয়া ধনধান্য অডিটোরিয়ামে শিল্প সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় এজেন্সির গলা টিপে ধরার আশঙ্কা অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী তাঁর দল ও সরকারের কোনও নেতামন্ত্রীর জন্য করেননি। তাঁর এই উদ্বেগ ছিল দেশ ও রাজ্যের শিল্পপতিদের জন্যই। 
সমাপ্তি ভাষণে মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘ কেন আমাদের শিল্পপতিরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন? আমরা এটাকে ভালোভাবে মেনে নিচ্ছি না। তাঁরা সব সময় উদ্বেগে থাকেন, এই বুঝি কোনও তদন্তকারী সংস্থা তাদের গলা টিপে ধরলো।’’ শিল্পপতিদের ওপর কেন্দ্রীয় এজেন্সির এই ভূমিকার জন্য তাদের মানসিক যন্ত্রণার মুখে পড়তে হচ্ছে বলে মমতা ব্যানার্জি মন্তব্য করেন। তাঁকে বলতে শোনা যায়,‘‘ মানসিকভাবে আপনারা (শিল্পপতি) বিপর্যস্ত। যদি স্বাস্থ্যই ঠিক থাকে, তাহলে টাকা রোজগারের প্রয়োজন কেন?’’ 
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) নেতা সুজন চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘‘ শিল্পপতিদের গলা টিপে ধরার আগে উনি নিজেই তো এরাজ্যে শিল্পের গলা টিপে ধরেছেন। শিল্পপতিরা দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে, এই কথা বলার যোগ্যতা মুখ্যমন্ত্রীর আছে কি? টাটা গোষ্ঠীকে এরাজ্য থেকে তাড়িয়েছেন উনি। টাটাকে তাড়ানোর পর শিল্পপতি চলে যাওয়ার প্রসঙ্গ ওনার মুখে মানায় না। এটা ঠিক, কেন্দ্রীয় সরকার এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখায় এটা যেমন ঠিক। তেমনই রাজ্য সরকার তার সংস্থা দিয়ে ভয় দেখায় তাতেও কোনও সন্দেহ নেই।’’

মুখ্যমন্ত্রী শিল্প সম্মেলনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে আধ ঘণ্টা সময় নিয়ে বক্তৃতা করেছেন। বক্তব্য শেষ করেছেন, ‘জয় বাংলা’র সঙ্গে ‘জয় বিজিবিএস’ স্লোগান দিয়ে। স্বল্প সময়ের একেবারে শেষ পর্বে গিয়ে শুধু ছুঁয়ে গেছেন, এবারের শিল্প সম্মেলন থেকে ১৮৮টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। মমতা ব্যানার্জির কথায়, তাতে প্রস্তাবিত বিনিয়োগ আসতে চলেছে ৩ লক্ষ ৭৬ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। ঘোষিত এই বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে একটি বাক্যে কথা শেষ করে দেন মমতা ব্যানার্জি। অতীতে শিল্প সম্মেলনের শেষ দিনে এরাজ্যে বিপুল বিনিয়োগের ঘোষণা করার পর কীভাবে আগামীদিনে রাজ্য কর্মসংস্থান হবে তার ফিরিস্তি দিতেন মুখ্যমন্ত্রী। এবার তার ধারপাশ দিয়ে যাননি। 
এমনিতেই নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পরিবারে পৌঁছে গেছে। তা নিয়ে এরআগে দলের রাজনৈতিক সভা, সমাবেশে মমতা ব্যানার্জি তাঁর পরিবারের ওপর সিবিআই, ইডি’র তদন্ত নিয়ে উষ্মা প্রকাশ পর্যন্ত করেছেন। কিন্তু এদিন যেভাবে শিল্প সম্মেলনে শিল্পপতিদের ওপর কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সময় ব্যয় করলেন তা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। 
শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে দেশ, এরাজ্য এমনকি বিদেশি অতিথি এদিন উপস্থিত ছিলেন। গ্লোবাল শিল্প সম্মেলন যে কতটা সফল তা বোঝাতে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে মমতা ব্যানার্জি জানান, ‘‘শিল্প সম্মলনের ১৭টি সহযোগী দেশ থেকে  ৪০০ জন প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন। ব্যবসা ও বাণিজ্য প্রতিনিধি দল নিয়ে ৪০টি দেশ থেকে আমন্ত্রিতরা এসেছিলেন। প্রায় ১৫টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশন অফিসের প্রতিনিধিরা যোগ দিয়েছেন এবারের সম্মেলনে।’’ দেশ ও বিদেশের অতিথিদের সামনেই মমতা ব্যানার্জি বলেন,‘‘ কেন্দ্রে এক দল সরকার চালায়। রাজ্যে ভিন্ন রাজনৈতিক দল সরকার চালায়। তাদের মানুষের স্বার্থে উন্নয়নের স্বার্থে তাদের একযোগে কাজ করা দরকার। বাংলাতে যেমন একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায়। কিন্তু কেন্দ্রে অন্য দল।’’ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী শিল্পপতিদের ওপর কেন্দ্রীয় এজেন্সির আক্রমণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। 
তবে কেন্দ্রীয় এজেন্সির আক্রমণে মুখ্যমন্ত্রীর কথা অনুযায়ী শিল্পপতিরা দেশান্তরী হলেও এরাজ্যের প্রতিটি বিজনেস সামিট থেকে বিনিয়োগের প্রস্তাবের বহরে কোনো ছেদ পড়েনি। এবারও যেমন ৩লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গতবারের বিনিয়োগ প্রস্তাবকেও ছাপিয়ে গেছে এবারের শিল্প সম্মেলন।
২০২২সালে গত শিল্প সম্মেলনে মমতা ব্যানার্জি ৩ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাবের ঘোষণা করেছিলেন। এবার তার থেকে ৩৪ হাজার কোটি টাকা বেশি। কিন্তু গতবারে বিনিয়োগ প্রস্তাবের পর মমতা ব্যানার্জি ৪০ লক্ষ কর্মসংস্থানের ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু এবার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কর্মসংস্থান নিয়ে তিনি নীরব।

Comments :0

Login to leave a comment