EDITORIAL PARLIAMENT SUSPENSION

গোলযোগ সইতে পারেন না

জাতীয় সম্পাদকীয় বিভাগ

সংসদে হৈচৈ হবে কেন? প্রতিবাদ হবে কেন?
দু'টি যুবক লোকসভায় ঢুকে লম্ফঝম্প করেছে। ওদের ধরে দেশদ্রোহী তকমা দিয়ে জেলে ভরে দেওয়া হয়েছে। ব্যস। এই নিয়ে এত হৈচৈ কিসের! দাও বের করে।
লোকসভা, রাজ্যসভা কি প্রতিবাদ-হৈচৈ করার জায়গা? এখানে সরকারের ভজনা হবে, মোদীর পূজন হবে। সরকারের গুণকীর্তন হবে। এসব করতে চাইলে খোল কত্তাল নিয়ে যেতে পারো। কিন্তু প্ল্যাকার্ড হাতে কেন ঢুকবে? ভাষণ দেবার কি দরকার! ভাষণ দেবার জন্য প্রধানমন্ত্রী তো আছেন। মন দিয়ে ওনার মনের কথা শুনবে। টেবিল চাপড়িয়ে বাহবা দেবে। এটাই তো সাংসদদের কাজ। ওনার বিবৃতি দাবি করে কোন সাহসে? ওনার ইচ্ছে হলে উনি বলবেন, ইচ্ছে না হলে বলবেন না। জোর জবরদস্তি বিবৃতি দাবি করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। বেকার বাড়ছে তো সাংসদদের কি? জনসংখ্যা বাড়ছে তো বেকার বাড়বে না! সবাই যদি কাজ করে তাহলে ভজন-পূজন-কীত্তন কে করবে! মন্দিরে যাও, রাম নাম করো। উনি তুষ্ট হলে কাজ পাবে। তুষ্ট করতে না পারলে, জোরে জোরে মন্দিরে মাথা ঠোকো। তাতে কাজ না পেলেও স্বর্গে যেতে পারবে। ব্যস মোক্ষলাভ-  কাজ, খিদে, শিক্ষা, চিকিৎসা সব মায়া হয়ে যাবে।জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে তো বিরোধীদের কি? সবার বয়স বাড়ছে, আর দাম বাড়বে না! তাহলে বেতন মজুরি বাড়ছে না কেন? এরকম বেয়াড়া প্রশ্ন করলে তো শাস্তি পেতেই হবে। আমাদের দেশ শান্তির দেশ। গোলযোগ পাকানো যাবে না এখানে। দেখছেন তো উনি মাঝেমধ্যেই শান্তি সন্ধানে  হিমালয়ের গুহায় নিদ্রামগ্ন হয়ে যান। রাজা  নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেন না।

দেশ এখন ধীরে ধীরে বৈদিক যুগে প্রবেশ করছে। সেখানে রাজতন্ত্রই গণতন্ত্র। রাজাই সরকার। রাজাই মাই-বাপ। রাজার ইচ্ছাই শেষ কথা। এখন প্রধানমন্ত্রী একাই রাজা একাই উজির। রাজা ইচ্ছে হলে বলবেন, ইচ্ছে হলে দেশবিদেশ ঘুরবেন, ইচ্ছে হলে গুহায় দিন কয়েক ফটোশেসনে ধ্যান মগ্ন থাকবেন, উড়োজাহাজে উড়বেন। প্রতি প্রহরে দশলাখি পোশাক পাল্টাবেন। প্রতিবেশি দেশের সাথে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলবেন। মনের কথা বলবেন, দেশবাসী মগ্ন হয়ে সেই ভাষণ শুনে আহ্লাদিত হবে। এটাই তো আধুনিক রাম রাজত্ব। রাজসভায় সভাসদদের কাজ কি? রাজার কথায় মাথা নাড়া। তা না করে কেউ যদি রাজার কাজের প্রতিবাদ করে, তাহলে তাদের ঘাড় ধাক্কা দেওয়াই তো  রাজতন্ত্রের রীতি। ৮৬২ কোটি টাকা খরচ করে রাজসভা বানিয়েছেন রাজা কত কষ্ট করে। সেখানে বিরোধিতা বরদাস্ত করবে কেন রাজা!? রাজার সভায় বিরোধিতা চলে না। এখন গণতন্ত্র নেই,  রাজতন্ত্রের মন্ত্র উচ্চারিত হচ্ছে- এ কথা ভুললে চলবেনা। এখন  স্বচ্ছ ভারত গড়া হচ্ছে- বিরোধিতা, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ এসব জঞ্জাল। তাই এসবের ঠাঁই নেই। সংসদের ভেতরে বিরোধিতা করেছে, তাই ভেতরে আর ঢুকতে দেওয়া হবেনা। বাইরে প্রতিবাদ করলে,  ইউএপিএ ধারা আছে। জেলে পচে মরবে। মস্তিষ্ক প্রক্ষালন যন্ত্রে যাদের মগজ ধোলাই হবে, তারা রাজার গুণকীত্তন গাইবে। যাদের ঐ যন্ত্রে কাজ হবে না, তাদের জন্য কংসমামার কারাগারই ভবিষ্যৎ।

তবে কংস রাজার কারাগারেই ওকে ধ্বংসের বীজ বপন হয়েছিল- একথা মোদীজি'র মনে আছে তো!

Comments :0

Login to leave a comment