অকাল বর্ষণে মাঠের ধান নষ্ট হয়ে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছিলেন কৃষক সুদেব দাস। দুর্ভাবনায়, দুশ্চিন্তায় আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন অবশেষে। শনিবার এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে। অতি সম্প্রতি পূর্বস্থলী, কালনার পর এবার মন্তেশ্বরে ঘটলো কৃষক আত্মহত্যার ঘটনা।
বছর সাতাশ বয়স সুদেব দাসের। তাঁর বাড়ি মন্তেশ্বর থানার শুশুনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাউই গ্রামে। তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পর রবিবার কালনা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। মৃতের স্ত্রী রূপা দাস জানান, তাঁর স্বামী এবার দু’ বিঘা ঠিকা জমি নিয়ে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি নিম্নচাপের বৃষ্টিতে পাকা ধানের জমিতে জল জমে যায়।
স্বামী, স্ত্রী দু’জনেই শনিবার মাঠে গিয়ে ধান গোছানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু বেশিরভাগ ধানই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সুদেব দাসের মনে নেমে আসে চরম হতাশা। রূপা দাস জানান, সন্ধ্যাবেলা বাড়িতে এসে আমি স্নান করতে চলে যাই। স্নান সেরে এসে স্বামীকে দেখতে না পেয়ে বাইরে খোঁজাখুজি করি। শেষে নিজেদের বাড়ির ভেতরে ঝুলন্ত অবস্থায় আমরা তাঁকে দেখতে পাই। পাড়া প্রতিবেশিদের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সুদেব দাসকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
রবিবার মন্তেশ্বর থানার পুলিশ মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কালনা হাসপাতালে পাঠায়। মৃতের স্ত্রী’র বক্তব্য, তাঁদের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণীতে এবং ছেলেটি অঙ্গণওয়াড়ী কেন্দ্রে পড়ে। সব মিলিয়ে এই বাজারে পরিবারের খরচা চালাতে হিমসিম অবস্থা। এর ওপর বাজার থেকে ধার দেনা করে চাষ আবাদ করা হয়ে থাকে। ধান উঠলে দেনা শোধ এবং জমির মালিককে জমির ঠিকা বাবদ ধান দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই ধানের আশা শেষ হয়ে গেল মাঠেই। নিমেষে সমস্ত কিছু অন্ধকার হয়ে গেল আমাদের। এরপরেই হতাশায় আত্মঘাতী হলেন সুদেব।
এই নিয়ে কালনা মহকুমায় ডিসেম্বর মাসে তিনজন কৃষক আত্মঘাতী হলেন। আলু লাগানো হয়েছিল খেতে। সেই খেত নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়ায় চরম হতাশায় পূর্বস্থলীর নিমদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছাতনি গ্রামের সনাতন ঘোষ গত ৯ ডিসেম্বর রাত্রে আম গাছে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন। পরের দিন সকালে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কালনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
অন্যদিকে, নিম্নচাপের বৃষ্টিতে আলুর খেত নষ্ট হয়ে যাওয়ার জন্য গত ২০ ডিসেম্বর সকালে বিষপান করে আত্মঘাতী হন কালনা থানার অন্তর্গত সুলতানপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ভাটরা গ্রামের বাসিন্দা হাসামুল শেখ। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী এবং এক ছেলে রয়েছে।
এলাকার মানুষের অভিযোগ, কৃষক মৃত্যুর খবর হলেই সরকারিভাবে বলা হয় তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু তার বেশিরভাগই রিপোর্ট আসে এই বলে যে, ঋণের দায়ে নয়, কৃষক আত্মঘাতী হয়েছেন পারিবারিক কলহের জেরে। সারা ভারত কৃষক সভার পূর্ব বর্ধমান জেলা সভাপতি সুকুল শিকদার’-এর বক্তব্য, কৃষক মৃত্যুর তদন্ত প্রহসন ছাড়া কিছু ভাবা যাচ্ছে না। এক কথায় বলা যায়, রাজ্য ও কেন্দ্র কোন সরকারই কৃষকের পাশে নেই। তাই এইরকম ঘটনা ঘটে চলেছে লাগাতার। কৃষকদের অধিকার আদায়ের কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
Comments :0