DHARMATALA RALLY SALIM

রাজ্য থেকে শুষে নেওয়া টাকার ব্যবস্থা করতেই বিদেশ সফর: সেলিম

রাজ্য কলকাতা

DHARMATALA RALLY SALIM

 পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ আনতে নয়, রাজ্যকে শুষে নেওয়া কালো টাকার বন্দোবস্ত করতেই বারবার বিদেশ সফর হচ্ছে। শুক্রবার কলকাতার ধর্মতলায় এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই’র কলকাতা জেলা কমিটির ডাকা সমাবেশে ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেছেন। শিক্ষা ও কাজের দাবিতে সোচ্চার ছাত্রযুবদের সমাবেশে সেলিম প্রশ্ন তুলেছেন, স্পেন থেকে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ আসবে? স্পেন তো নিজেই অর্থনৈতিক সঙ্কটে, ওরাই বিনিয়োগ সন্ধান করছে। পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতি ধংস করে এরাজ্য থেকে শুষে নেওয়া পাচারের টাকা বিদেশে রাখার বন্দোবস্ত করতে বারবার বিদেশ যেতে হচ্ছে।

সেলিম বলেছেন, শিল্প বিনিয়োগ আনতে হলে শিল্পমহলের প্রতিনিধিদের নিয়ে যেতে হয়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি স্পেনে কাদের সঙ্গে নিয়ে গেছেন? সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে সরকারী টাকায় স্পেনে গেছেন কলকাতার ফুটবল ক্লাবের সঙ্গে স্পেনের ফুটবল ক্লাবের খেলার বন্দোবস্ত করতে? এর আগে পেলে এসে কলকাতায় খেলেননি? তখন কি সরকারের মন্ত্রীদের ব্রাজিল ভ্রমণ করতে হয়েছিল? পশ্চিমবঙ্গের মানুষের টাকায় তখন স্পেনে গিয়ে জগিং প্র্যাকটিস হচ্ছে যখন এরাজ্যের মিড ডে মিল থেকে ডিম উঠে যাচ্ছে, আইসিডিএস সেন্টার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, স্কুল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ডিএ পাচ্ছেন না সরকারী কর্মীরা আর চাকরি প্রার্থীরা রাস্তায় বসে আছেন। মুখ্যমন্ত্রী সত্যিই রাজ্যে শিল্পোন্নয়ন চাইলে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণের জন্য জোর করে উচ্ছেদ না করে সেখানে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন দিয়ে প্রকল্প রূপায়ণের ব্যবস্থা করতেন। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার সম্প্রসারণ রাজ্যের জন্য অনেক বেশি জরুরী ছিল। 

কেন ৫ অক্টোবর সিবিআই দপ্তরে অভিযান করা হবে তার ব্যাখ্যা দিয়ে সেলিম বলেছেন, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্যের তদন্ত এজেন্সিগুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে দুই শাসকদল। অপরাধীদের সুরক্ষা দিচ্ছে তারা। ইডি এবং সিবিআই’কে দেশজুড়ে অপব্যবহার করা হচ্ছে একথা সত্যি। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে টেবিলের ওপর এবং তলা দিয়ে এমন সমঝোতা হয়েছে যে ইডি সিবিআই’র পায়ে বেড়ি পরানো রয়েছে। আদালতের নির্দেশে বাধ্য হয়ে ইডি সিবিআই তদন্ত শুরু করলেও কিছুই করছে না বলে আমরা বলছি, চোর ধরো, জেলে ভরো। বিজেপি বলছে, চোর ধরে দলে ভরো। নারদা ঘুষকান্ডে তৃণমূল এবং বিজেপি উভয়েই উলঙ্গ হয়ে গিয়েছে, তাই তদন্ত এগোচ্ছে না, সিবিআই বারবার সাংবাদিক ম্যাথুকে ডেকে চলেছে। তৃণমূল এবং বিজেপি, লোকসভা নির্বাচনের আগে যে স্ক্রিপ্টেড তামাশা করছে রাজ্যের মানুষ তা মেনে নিতে পারে না। আদালত পর্যন্ত তিরস্কার করছে প্রতিদিন। 

শিক্ষা ও কাজের দাবিতে এবং দাঙ্গাবাজ ও দুর্নীতিগ্রস্তদের হঠানোর আহবানে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই’র কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে এদিন ধর্মতলায় ডোরিনা ক্রসিংয়ের দক্ষিণে জওহরলাল নেহরু রোডের ওপরেই ছাত্রযুব সমাবেশ করা হয়েছে পুলিশের আপত্তির তোয়াক্কা না করে। সভায় ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা ও রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, এসএফআই’র রাজ্য সভাপতি প্রতীক-উর রহমান ও রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য, ডিওয়াইএফআই’র কলকাতা জেলা সম্পাদক পৌলবী মজুমদার ও জেলা সভাপতি বিকাশ ঝা, এসএফআই’র কলকাতা জেলা সভাপতি দেবাঞ্জন দে ও জেলা সম্পাদক আতিফ নিশারও ভাষণ দিয়েছেন। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যেভাবে নতুন শিক্ষানীতি রূপায়নের নামে একইভাবে শিক্ষার সুযোগ সংকুচিত করছে এবং রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্পগুলিকে বেসরকারী হাতে তুলে দিয়ে নিয়োগের সম্ভাবনা সংকুচিত করছে তার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন তাঁরা।

মীনাক্ষী মুখার্জি বলেছেন, সবার জন্য শিক্ষা ও কাজের যে দাবি আমরা করেছি সেটাই তো রাজ্যের ছাত্রযুবদের মূল ইস্যু।  তৃণমূল এবং বিজেপি’র সমর্থক ছাত্রযুবদেরও জীবনের ইস্যু এটাই। কিন্তু মূল ইস্যু থেকে নজর ঘোরাতে ভুল ইস্যু তুলে ধরছে নবান্ন এবং রাজভবন। এমন নকল যুদ্ধ করছে যেন পরস্পরের চুল ছিঁড়ে নেবে। রাজ্যের মানুষ কাজ পাচ্ছে না, মজুরি পাচ্ছে না, আর বিধায়ক মন্ত্রীদের বেতন বেড়ে চলেছে। আমরা মানুষের দরজায় দরজায় পৌঁছনোর কর্মসূচী নিয়েছি ৩ নভেম্বর থেকে। তারপরে ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডের মাঠে সবাইকে শামিল করতে হবে। ধ্রুবজ্যোতি সাহা বলেছেন, বাংলায় কাজ নেই, মজুরি নেই, পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে। ডিওয়াইএফআই যখন কাজের দাবিতে সবাইকে একজোট করার চেষ্টা করছে তৃণমূল বিজেপি তখন হিন্দু মুসলিম বিভাজন করতে চাইছে। 

মিডিয়াকে ব্যবহার করে ভুল ইস্যু দিয়ে মূল ইস্যু আড়াল করার অপপ্রয়াস সম্পর্কে সৃজন ভট্টাচার্য বলেছেন, কিছুদিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে বদনাম করা হলো, কিন্তু ছাত্র হত্যার ঘটনায় আসল অপরাধীদের সবাইকে এখনও কেন গ্রেপ্তার করা হল না, কোন তৃণমূল নেতারা তাদের আশ্রয় দিচ্ছে তা প্রকাশ করা হল না। শিক্ষাক্ষেত্রে জিডিপি’র ৬ শতাংশ ব্যয় শিকেয় তুলে এখন কেন্দ্রের শিক্ষানীতিতে শিক্ষাকে বাজারে পরিণত করা হয়েছে। সেই নীতি টুকে টুকে রাজ্যের শিক্ষানীতি বানিয়ে রূপায়ন করা হচ্ছে। স্কুল কলেজ ছাত্রশূন্য হয়ে যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তৃণমূল সরকার এমন উপাচার্য বসিয়েছে যাদের কেউ এখন জেলে, কারো নিয়োগ আদালত খারিজ করে দিয়েছে। আর শিক্ষার এমন বেহাল দশার সুযোগ নিয়ে রাজ্যপাল শিক্ষাক্ষেত্রকে তছনছ করছেন। এসব আড়াল করে এখন রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যুদ্ধ আর স্পেনের জগিং প্রচার করা হচ্ছে? 

প্রতিকূর রহমান বলেছেন, শিক্ষা ও কাজের দাবিতে কলকাতার মিছিলে কমরেড মইদুল মিদ্যাকে পুলিশ পিটিয়ে মেরেছিল। ওরা ভেবেছিল আর কেউ রাজপথে নামার সাহস দেখাবে না। কিন্তু ছাত্রযুবদের পথ চলা এভাবে বন্ধ করা যায় না। সরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা ভাঙতে ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ করে রেখেছে। কারণ সঠিকভাবে নির্বাচন হলে টিএমসিপি আর এবিভিপি জাদুঘরে চলে যাবে।

 

Comments :0

Login to leave a comment