Homeguard Lost Job

প্রতিবাদী গান গেয়ে চাকরি গেল হোমগার্ডের

রাজ্য

 আর জি করের নির্যাতিতা চিকিৎসকের বিচার চেয়ে গান গেয়েছিলেন। সেই গান গত আগস্ট মাসে সোসাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। তার জেরে চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হলো বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের হোমগার্ড কাশীনাথ পান্ডাকে। বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ট্রাফিক বিভাগে অস্থায়ী হোমগার্ড হিসাবে বেলঘরিয়া থানায় কাজ করতেন ওই যুবক। গত পাঁচ বছর ধরে হোমগার্ডের কাজ করছেন কাশীনাথ পান্ডা। 
সপ্তমীর দিন তাঁকে চাকরি থেকে ‘টার্মিনেট’ করে দেওয়া হয়েছে। সেই ঘটনার প্রতিবাদে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন। বিচারপতি পার্থসারথি সেনের এজলাসে ওই মামলা উঠেছে। কাশীনাথ পান্ডা প্রশ্ন তুলেছেন যে, পুলিশে কাজ করেন বলে কি তিনি কোনও ঘটনার প্রতিবাদ করতে পারবেন না? পুলিশে কাজ করেন বলে মৌলিক অধিকার এবং বাক্-স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হবে। আগামী শুক্রবার ওই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে হাইকোর্টে।
জানা যাচ্ছে, যাবতীয় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে গত ২১ আগস্ট। কাশীনাথ পান্ডার দাবি, আর জি কর মেডিক্যাল হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে তিনি সেদিন ফেসবুকে একটি গান পোস্ট করেছিলেন। জনপ্রিয় একটি ভক্তগীতিকে নিজের মতো করে গেয়েছিলেন। আর সেটাই রিলের আকারে পোস্ট করেছিলেন।
তাঁর গলায় শোনা গিয়েছিল, ‘‘তুমি এবার ধরো খাঁড়া, মাঠে নামতে হবে। অসহায়-দুর্বলরা তবেই বিচার পাবে। মা গো তুমি খাঁড়া ধরো। তবেই বিচার পাবে। কালীঘাটের কালী তুমি, কৈলাসে ভবানী।’’ওই পোস্টের পর থেকেই তাঁকে ও তাঁর পরিবারের নাম করে হেনস্তা শুরু হয়।
কাশীনাথ পান্ডার দাবি, সোসাল মিডিয়ায় গানটি ভাইরাল হতেই থানার বড়বাবু থেকে শুরু করে অন্যান্য অফিসাররা গানটি ডিলিট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু কোনও চাপের কাছে মাথা নত না করে, গানটি ডিলিট করবেন না বলে থানার অফিসারদের জানিয়ে দেন কাশীনাথ পান্ডা। তিনি বলেন, এই কথা জানানোর পর থেকেই তাঁর উপর হুমকি আসতে থাকে, এমনকি বিভিন্ন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলেও থানার অফিসারদের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয়া। রীতিমতো মানসিক অত্যাচার তাঁকে করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বিনা অভিযোগে একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে শুরু হয় লাগাতার হুমকি দেওয়ার ঘটনা। পরিবারের নামেও হুমকি দেওয়া হয়। চাকরি খেয়ে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হতে থাকে। 
কাশীনাথ পান্ডা জানান, হঠাৎ করেই চলতি মাসের ২, ৩, ৪ তারিখে তাঁকে কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়। সমস্ত ঘটনা জানিয়ে বারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনারকে চিঠি লেখেন তিনি। চিঠি লেখার পর ৬ অক্টোবর আবার কাজে যোগ দিতে বলা হয় তাঁকে। তিনি জানান, চলতি মাসের ১০ তারিখে ডিউটি শেষ করে সন্ধ্যায় থানায় ফিরে আসার পরে থানার ডিউটি অফিসার তাঁকে একটি চিঠি দেন। চিঠিতে লেখা অনির্দিষ্টকালের জন্য তাঁকে হোমগার্ডের কাজ থেকে বসিয়ে দেওয়া হলো। 
অভাবের সংসারে বাবা, মাকে নিয়ে কীভাবে চলবেন তা নিয়েই চিন্তিত কাশীনাথ পান্ডা। কিন্তু নির্যাতিতার বিচার চেয়ে সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া গানটি কোনভাবেই ডিলিট করবেন বলে থানার অফিসারদের জানিয়ে দেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে কাশীনাথ পান্ডার প্রশ্ন- পুলিশে কাজ করেছেন কি শিরদাঁড়াটা ন্যূনতম সোজা রাখতে পারবেন না? অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যূনতম প্রতিবাদও করতে পারবেন না? 
তবে চাকরি থেকে ‘টার্মিনেট’ করা হলেও নিজের পোস্ট মুছে দেননি কাশীনাথ। তাঁর ফেসবুকে এখনও সেই ভিডিও আছে। তাঁর আইনজীবী পিন্টু কাঁড়ার জানিয়েছেন, ‘‘কাশীনাথ পান্ডাকে অনির্দিষ্টকালের জন্য চাকরি থেকে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছে।’’ 
হাওড়ার ডোমজুড়ের ভাণ্ডারদহ মুখার্জিপাড়ার বাসিন্দা কাশীনাথ পান্ডা এদিন জানান, এই ঘটনায় তাঁর বাক্-স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চায় প্রশাসন। এই ঘটনার বিচার চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি। আগামী শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি হওয়ার কথা বলে জানান তিনি। শিরদাঁড়া সোজা রেখে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে মাথা নত না করে আর জি করের নির্যাতিতার বিচারের পক্ষে প্রতিবাদ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন কাশীনাথ পান্ডা এবং যাতে অবিলম্বে চাকরি ফিরে পান সেই দাবিও করেছেন তিনি।
 

Comments :0

Login to leave a comment